ইনসাইড বাংলাদেশ

এবার পাঁচ বছরের জন্য অনির্বাচিত সরকার রাখার ফর্মুলা


প্রকাশ: 11/08/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে টানাপোড়েন চলছে। এই টানাপোড়েনের প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে। বিএনপি বলছে, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনার জন্য নিরব প্রচেষ্টা চলছে। বাংলাদেশের সুশীল সমাজের একটি অংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো আসলে নির্বাচন নয়, বাংলাদেশে একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনতে চায়। আর এ রকম একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসলে, তা অন্তত যেন পাঁচ বছর থাকে- তা নিয়েও এখন আলোচনা চলছে। বিভিন্ন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা কূটনীতিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় বলছে, কেবল তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলে হবে না, বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি অনির্বাচিত সরকারকে দরকার, যারা বিভিন্ন বিষয়গুলোকে ঠিক-ঠাক করবে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি বলেছেন, একটি পশ্চিমা দূতাবাস তাকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল এবং সেখানে পশ্চিমা দেশের পক্ষ থেকে একটি অনির্বাচিত সরকারের কতদিন থাকা উচিৎ, সে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনির্বাচিত সরকার দ্রুত অজনপ্রিয় হয়ে পড়ে, এক-এগারো তার প্রমাণ। কিন্তু ওই কূটনীতিক তাকে বলেন যে, বাংলাদেশে যে দুর্নীতি এবং সুশাসনের অভাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ক্ষত তৈরি হয়েছে, তা পূরণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অনির্বাচিত সরকার দরকার। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের দুর্নীতি, সুশাসন, মানবাধিকার ইত্যাদি ইস্যুগুলোকে সামনে আনা হচ্ছে। এসব ইস্যুকে সামনে আনার প্রধান কারণ হলো অনির্বাচিত সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় রাখার পথ তৈরি করে দেওয়া। 

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এখন অন্য সুরে কথা বলছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষিত নয়, বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। আর এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি নজরদারি এবং শাসন দরকার। বিএনপি সম্প্রতি যে রাষ্ট্র মেরামতের কাঠামোর ৩১ দফা দিয়েছে, সেটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। অর্থাৎ বিএনপি একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে প্রস্তুত। বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন, তারা নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এরকম বাস্তবতায় যদি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হঠানো যায়, সেটাই এক ধরনের বিজয়। সেই বিজয়ের আশায় বিএনপি এখন সুশীলদের সাথে হাত মিলিয়েছে।

বিভিন্ন পর্যায়ের সুশীল, যারা এক-এগারোর সময় গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা পালন করেছিলেন, তারা এখন বাংলাদেশ নিয়ে নতুন পরিকল্পনা তৈরি করছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট, দুর্নীতি, মানবাধিকার সঙ্কট  ইত্যাদি দূর করার জন্য এখন একটি দীর্ঘ মেয়াদি অনির্বাচিত সরকার তৈরি করার কথা বলা হচ্ছে। সুশীলদের একটি অংশ বলছে, বাংলাদেশে যে সমস্যা- তা এক ব্যক্তির পক্ষে দূর করা সম্ভব নয়, একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষেও সমাধান করা সম্ভব নয়। এজন্য একটি জাতীয় ঐক্যমত তৈরি করতে হবে। আর এই জাতীয় ঐক্যমত তৈরি করার জন্য একটি দীর্ঘ মেয়াদে ঐক্যমতের সরকার দরকার। অন্তত পাঁচ বছরের জন্য এরকম একটি সরকার হলেই বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলো সুরক্ষিত হবে, দুর্নীতি বন্ধ হবে এবং নীতি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে বলে সুশীলদের কেউ কেউ মনে করেন। 

কিন্তু এক-এগারোর সময়ে সুশীলদের যে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা বাংলাদেশকে ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে নিয়ে গিয়েছিল, সে কথা সুশীলদের কেউই বলছেন না। তারা আবার কি বাংলাদেশে সেরকম একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চান- এই প্রশ্ন এখন সামনে চলে এসেছে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭