ইনসাইড টক

‘সাইবার নিরাপত্তা আইন পাসের আগে অবশ্যই ৪৩ ধারা পরিবর্তন করা উচিত’


প্রকাশ: 11/08/2023


Thumbnail

সিনিয়র সাংবাদিক এবং গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেছেন, পাঁচ বছর আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার আগে এবং পরে এই আইন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। তখন সম্পাদক পরিষদ থেকে শুরু করে সাধারণ সাংবাদিকরা, সাংবাদিক ইউনিয়ন, এডিটরস গিল্ড, মানবাধিকার কর্মী, সংস্কৃতি কর্মী সবাই এ নিয়ে কথা বলেছেন। এমনকি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনও এ নিয়ে কথা বলেছে। সকলে বলার পর সরকার এটা পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা মনে করি এটা ইতিবাচক। ইতিবাচক কারণ সরকার দেরিতে হলেও মানুষের কথাটা শুনেছে এবং কিছু পরিবর্তন আনার কথা বলেছে। 

দীর্ঘদিন ধরে নানা আলোচনা-সমালোচনার পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই আইনের পরিবর্তনের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা করেন সিনিয়র সাংবাদিক এবং গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। পাঠকদের জন্য সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক মীর ফজলে রাব্বী।

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি দিক আছে। এখানে কারিগরি থেকে সাইবার ইস্যুগুলো আছে। হ্যাকিং থেকে শুরু করে সাইবার নিরাপত্তা ইত্যাদি। ওই জায়গাগুলোতে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। কিন্তু মানহানি জায়গাগুলোতে যেখানে ব্যক্তি, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী জড়িত সেই জায়গাগুলোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। কারাদন্ডের বিধান কোন কোন ক্ষেত্রে রোহিত করা হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে জরিমানা বাড়ানো হয়েছে কিন্তু কারাদন্ড উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও কারাদন্ড কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি মনে করি সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে এটা ইতিবাচক।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারার পরিবর্তনের ব্যাপারে এই সাংবাদিক বলেন, এই আইনের ২৯ ধারার পরিবর্তন এটা ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। সাংবাদিকদেরকে বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ের সাংবাদিকদের, প্রান্তিক পর্যায়ের সংস্কৃতিক কর্মী, সাধারণ রাজনীতিবিদ এমনকি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে এই আইনে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হচ্ছিল। এখন যেহেতু জেলের বিধানটা তুলে দেয়া হয়েছে বা কারাদন্ডের বিধানটা তুলে দেয়া হয়েছে। ফলে মামলার পরিমাণ কমে আসবে, হয়রানির পরিমাণ কমে আসবে। এটা আমরা মনে করি। এখানে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার বিধান রাখা হয়েছে এটা শুরু হবে এক লাখ থেকে। তবে এখানে আদালত বা বিচারকের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। কোন বিচারকের কাছে যদি মনে হয় যে জরিমানার পরিমাণ বেশি হয়েছে তাহলে আদালত কমিয়ে দিতে পারবে। সর্বশেষ পর্যায়ে উচ্চ আদালতে এটা আপিল করা যাবে। এটা থাকার কারণে দেখা যাবে যে এখন হয়রানিটা কমে আসবে। ২৯ ধারার পরিবর্তনটা এই আইনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। 

তিনি আরও বলেন, আইনের ৪৩ ধারা নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনা হয়ে আসছে। এখানে কোন ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালতের বাইরে গিয়ে শুধুমাত্র একজন সাব ইন্সপেক্টরের হাতে পুরো ক্ষমতাটা দিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি সন্দেহের কারণে যে কাউকে আটক করতে পারবেন, কারো বাড়িতে যেতে পারবেন, কোন ব্যক্তির মোবাইল, ল্যাপটল বা কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করতে পারবেন। এ রকম একচ্ছত্র ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এই ধারার কোন পরিবর্তন আমরা দেখতে পাইনি। আমরা মনে করি যে, এই ধারাটি রোহিত করা উচিত। কারণ একজন সাব ইন্সপেক্টরকে বিচারিত ক্ষমতা দিয়ে দেয়ার মত অবস্থা হয়েছে এবং এটার অপপ্রয়োগ আমরা দেখেছি। এ ক্ষমতার বলে নানা সময় বিভিন্ন জনকে হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। এমনকি রাস্তায় থামিয়ে মানুষের মোবাইল পর্যন্ত দেখা হয়েছে। কারণ আইনরে মধ্যে এটা সে করতে পারে। এই জায়গাটা আমার মনে হয় যে, আইনটি পাসের আগে অবশ্যই এই ৪৩ ধারাটি পরিবর্তন করতে হবে এবং এখানে যদি ৪৩ ধারা সরকারকে রাখতেই হয় সাইবার নিরাপত্তার জন্য তাহলে এখানে ডিফেন্সের জায়গা ঠিক করতে হবে। যে একজন সাধারণ মানুষ তার ডিফেন্সের জায়গাটা কোথায়। তিনি তো হয়রানির মুখোমুখি হবেন। আইনের ভাষায় যাকে বলে ব্ল্যাঙ্কেট পাওয়ার। অর্থাৎ যথেচ্ছ ক্ষমতা দিয়ে দেয়া। এই যথেচ্ছ ক্ষমতা প্রয়োগ সব সময় অপপ্রেয়োগ হয়।  এটার কারণেই বলা হয় যে ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনের প্রয়োগটাই অপ্রপ্রয়োগ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সমস্ত কারণে। আমরা আগেও বলেছিলাম এখনও বলছি যে অংশীজনের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাদের মতামত নিতে হবে। তারা যেখানে যেখানে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছে এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সরকার আমলে নেবে সেটাই আমরা প্রত্যাশা করি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭