ইনসাইড পলিটিক্স

আবার কর্মসূচি সংকটে বিএনপি: দ্বন্দ্ব চরমে


প্রকাশ: 11/08/2023


Thumbnail

আজ পদযাত্রার পরও যথা রীতি কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেনি বিএনপি। একটি রাজনৈতিক দল যখন এক দফা  আন্দোলনে রাজপথে তখন কর্মসূচি নিয়ে দলটির অনিশ্চয়তা, দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, একটি দল যখন এক দফা আন্দোলন করে তখন তারা লাগাতার কর্মসূচির মধ্যে থাকে। এই কর্মসূচি দিয়ে তারা সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করে। কিন্তু বিএনপির ক্ষেত্রে তার বিরল ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কর্মসূচি সংকটে ভুগছে বিএনপি। 

গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ করেছিল দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। এরপর দিন তারা যথারীতি ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করে। কিন্তু ওই অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা মারমুখী হয়ে যায়, পুলিশের ওপর চড়াও হয়, গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশের সাথে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। বিএনপির এই জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসাত্মক রাজনীতি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয় বিভিন্ন মহলে। এই প্রেক্ষিতে বিএনপি তাদের কর্মসূচি থেকে সরে আসে। তারপর প্রায় এক সপ্তাহ বিএনপির কর্মসূচি দিতে পারেনি। এর মধ্যেই লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া এবং তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমনের একটি মামলায় দণ্ড দেয় আদালত। আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল। এরপর আবার কর্মসূচি খরায় ভুগছিল দলটি। অবশেষে ১১ আগস্ট বিএনপির পক্ষ থেকে এই পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। 

কর্মীরা আশা করেছিলেন যে পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপির পক্ষ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কিন্তু আজকের পদযাত্রায় পর বিএনপি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেনি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দুই দিনের মধ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। 

জানা গেছে, কর্মসূচি নিয়ে গত দুইদিন বিএনপির মধ্যে টানাপড়েন এবং আলাপ-আলোচনার পরও চূড়ান্ত সমাধান হয়নি। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া আন্দোলনকে আগ্রাসী রূপ দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। তিনি সচিবালয় ঘেরাও, অবরোধ, বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও সহ বিভিন্ন কর্মসূচির পক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির পরামর্শ দেন। কিন্তু বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ রকম আগ্রাসী এবং সহিংস কর্মসূচিকে সমর্থন করেনি। বরং তিনি বলেছেন, এর ফলে আন্তর্জাতিক মহলে বিএনপি ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং বিএনপি আবার পরিত্যক্ত ঘোষিত হবে। ফলে দুই নেতার দ্বন্দ্বে বিএনপির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেনি। তবে বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি নিজের শক্তিতে পরিচালিত হচ্ছে না। বরং বিএনপির কর্মসূচি আসছে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রেসক্রিপশনে। আর তাই পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপিকে যেভাবে পরামর্শ দেবে সেভাবে বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা করবে। 

বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, ১৫ আগস্টের সামনে কর্মসূচি দিলে তাদেরকে নতুন করে আক্রমণ করা হবে, সমালোচনা করা হবে। এর আগে বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপন নিয়ে বিএনপি ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল। তাই বিএনপির কোন কোন নেতা মনে করেন যে, এই আন্দোলনে সংযম এবং সমন্বয় প্রয়োজন। আর একারণেই ১৫ আগস্টের পর তারা চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করতে চায়। 

বিএনপির ওই নেতা বলেছেন, সেপ্টেম্বরে তারা সরকারকে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে চান এবং সেপ্টেম্বরকে মাথায় রেখেই চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচির পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিএনপির মধ্যে কর্মসূচি দিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই বলে তিনি জানিয়েছেন। কিন্তু আজকে বিএনপির পদযাত্রার নতুন কোন কর্মসূচি ঘোষণা না হওয়ার ফলে বিএনপির কর্মীদের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। আর এই হতাশা, ক্ষোভ বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলেরই এক প্রকাশ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭