কালার ইনসাইড

একসময়ের আলোচিত নায়ক মাহমুদ কলি কোথায়, কেমন আছেন? জানেন কি?


প্রকাশ: 12/08/2023


Thumbnail

বিদেশে শুটিং মানেই ঢাকাই সিনেমার দর্শক বুঝতেন মাহমুদ কলির ছবি। আশির দশকে সামাজিক-রোমান্টিক-ফ্যান্টাসি ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি। সেই মাহমুদ কলিকে এখন আর কোথাও দেখা যায় না। না রূপালি পর্দায়, না টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে, না তাঁর পুরোনো কর্মস্থল এফডিসিতে। চলচ্চিত্র থেকে অনেকটা দূরে সরে রয়েছেন তিনি, তা–ও অনেক বছর ধরে। তবে কোথায় আছেন কলি ? কোনো ক্ষোভ কি পুষে রেখেছেন? না কোনো অভিমান? চলুন তাহলে জেনে নেই বিস্তারিত:

ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো বন্ধ করে দেন তিনি। চলে যান ব্যবসার জগতে। কিছুদিন পরই চলচ্চিত্রের মানুষেরা তাঁকে ডেকে আনেন নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। শিল্পী সমিতির হাল তিনি ধরেন তখনই। তাহলে আবার নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ কী?

মাহমুদ কলি এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘যারা সক্রিয়ভাবে জড়িত, তারা ভেতরের ব্যাপারটা জানবে, সবার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে, তাই তাদেরই নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। আসলে ব্যক্তিগত কিছু কারণে চলচ্চিত্রে অভিনয় থেকে অব্যাহতি নিই। অভিনয় ছেড়ে দিয়ে বেশ কয়েক বছর অন্যান্য কাজে ব্যস্ত হয়ে রইলাম। দুই দিকে সময় দিতে গেলে ভালোভাবে পারব না বলেই সরে দাঁড়াই।

চলচ্চিত্রের খবরাখবর কতটা রাখেন একসময়ের ব্যস্ত এই নায়ক?  কলি জানান, তেমন খবর রাখতে পারেন না ব্যস্ততার কারণে। সিনেমা হলেও যাওয়া হয় না। এখনকার ছবিও দেখা হয় না। চলচ্চিত্রের বর্তমান পরিবেশ সম্পর্কে তাঁর জানা আছে কি না? প্রশ্নে  কলি বলেন, অনেকে ঠিকভাবে বোঝার চেষ্টা করেন না। আপনার জীবন, আপনার পরিবার, প্রতিটি জায়গা সমাজের অঙ্গ। যখন সমাজে কোনো অস্থিরতা থাকবে, ঝামেলা থাকবে, চলচ্চিত্রে তার প্রভাব পড়বে। এটার জন্য চলচ্চিত্রকে দোষারোপ করা উচিত নয়। সমাজে কখনো ছিনতাই হয়, কখনো শান্তি থাকে। ভালো সময় আগে ছিল, এখন সমাজে অস্থিরতা। সেই অস্থিরতা চলচ্চিত্রেও এসেছে। তবে খারাপ সময়টা কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

অভিনয় থেকে বিদায় নেওয়ার পর একসময় দলীয় রাজনীতি করতেন মাহমুদ এই অভিনেতা। এখন আর ওই প্রসঙ্গে কথা বলতেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও তেমন খোলামেলা নন। একটু ঢেকে রাখতেই পছন্দ করেন। একসময় পাদপ্রদীপের আলোয় থাকলেও এখন নিভৃতে থাকতে ভালোবাসেন। মাহমুদ কলি জানান, ব্যবসা নিয়েই কাটে তাঁর দিন। পারিবারিকভাবেই ব্যবসা ছিল তাঁদের। সেই ব্যবসার সাথে নিজস্ব ব্যবসা যোগ করে এখন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী তিনি।

মাহমুদ কলির গ্রামের বাড়ি ফেনীতে। তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা—সব ঢাকায়। তাঁরা তিন ভাই, তিন বোন। সবাই জীবিত। একমাত্র মেয়ে বিদেশে পড়াশোনা করছেন। চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেও প্রায়ই পুরোনো দর্শকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়ে যায়। তখন আলাপচারিতা জমে ওঠে। ভক্তরা যে সম্মান দেন, তাতে তাঁর ভালোই লাগে বলে জানান। এত ব্যস্ত তারকাজীবন ছিল তাঁর, সে জীবন কখনো কখনো নাড়া দিতে স্মৃতিতে ফিরে আসে কি? তখন নায়ক বলেন, ‘এটা পৃথিবীর নিয়ম যে আমরা আসব, কিছুদিন থাকব, একদিন চলে যাব। এ জন্য একে অপরকে জায়গা দিতে হয়। জায়গা আসলে এমনি হয়ে যায়। আমি চলচ্চিত্রে ছিলাম। সারা জীবনের জন্য থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নয়। হয়তো আমি একটু আগেই চলে এসেছি। আমি যত দিন ছিলাম, সুখী ছিলাম। যতটুকু করার ছিল, করেছি। চলচ্চিত্র শিল্পের মানুষের উপকার করার, দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি সন্তুষ্ট।’

এছাড়া চলচ্চিত্রে কত ঘটনার সাক্ষী তিনি। কত বর্ণিল অভিজ্ঞতায় মোড়া রঙিন জীবন তাঁর। সেসব ঘটনার সবই কি মুছে গেছে স্মৃতি থেকে? এমন প্রশ্নে তিনি মুক্তার মতো স্মৃতির সাগরে ডুব দিয়ে একটি ঘটনা তুলে আনেন।‘লাভ ইন সিঙ্গাপুর’ বিদেশে প্রথম শুটিং করা বাংলাদেশি ছবি। সে ছবির শুটিংয়ে এক মাসের জন্য সিঙ্গাপুরে যান মাহমুদ কলি, ববিতাসহ শুটিং ইউনিট। মেঘের জন্য প্রথম দুদিন কাজ করা যায়নি। তারপর মেঘলা আকাশ মাথায় নিয়েই সবাই কাজ করতে নেমে পড়েন।

‘আমার শুধু মনে হচ্ছিল, এই মেঘের মধ্যে কাজ করছি, পর্দায় আমাদের কেমন দেখাবে কে জানে। মনে মনে ভেবে খুব অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। একসময় শুটিং শেষ হলো। সিঙ্গাপুরেই নেগেটিভ প্রসেস করে একটা প্রিন্ট ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। সেই প্রিন্ট দেখে আমি অবাক। কোনো দৃশ্যে মেঘের প্রভাব নেই। শুটিংয়ের সময় দেখছিলাম, চিত্রগ্রাহক রফিকুল বারী চৌধুরী বারবার লেন্স পাল্টাচ্ছিলেন। তার ফলে যে এই জিনিস হবে, তা কি আর জানতাম’, মাহমুদ কলির কণ্ঠে বিস্ময় টের পাওয়া যায়।  ‘ওই ঘটনা থেকে একটা জিনিস শিখলাম, যার যা কাজ, তা-ই তার করা উচিত। যে যার ক্ষেত্রটাকে সবচেয়ে ভালো বোঝে। অন্যের পক্ষে ওটা বোঝা সম্ভব নয়। এ জন্য না বুঝে অন্যের কাজ সম্পর্কে কথা বলা উচিত নয়।’

জীবনের অনেকটা সময় পেরিয়ে এসেছেন মাহমুদ কলি। কোনো উপলব্ধিতে পৌঁছেছেন কি না? জানতে চাইলে আশির দশকের সুদর্শন অভিনেতা বলেন, ‘আমি মনে করি, মানুষ আসবে-যাবে। যে যত দিন থাকি না কেন, মানুষের উপকারে লাগতে হবে। এ পৃথিবীতে সবাই আসবে, চলে যাবে। এটাই হলো পৃথিবীর নিয়ম। যে কটা দিন থাকা যায়, মানুষের উপকার করে, নিজের পরিবার, আশপাশের সবার জন্য যদি কাজ করা যায়, তবে ভালো। আমার জীবনে চাহিদা ছিল অল্প। যতটুক পেয়েছি, তাতে আমি সুখী।’

মাহমুদ কলি অভিনীত ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘মতিমহল’, ‘তুফান’, ‘বাদল’, ‘নওজোয়ান’, ‘নবাবজাদী’, ‘টক্কর’, ‘হিম্মতওয়ালী’, ‘গোলমাল’, ‘নাগমহল’, ‘নিশানা’, ‘ধনীগরীব’ প্রভৃতি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭