লিট ইনসাইড

পিতা, আমরা মুক্ত আকাশ দেখছি (পর্ব-১৩)


প্রকাশ: 13/08/2023


Thumbnail

চলছে শোকাবহ আগস্ট মাস। এ মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। আগস্ট ষড়যন্ত্রের আদ্যোপান্ত নিয়ে অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর সারা জাগানো বই ‘পিতা, আমরা মুক্ত আকাশ দেখছি’ এর ধারাবাহিক পর্বের ত্রয়োদশ পর্ব পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-

ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবন। সারাদিনের কাজের শেষে পরিশ্রান্ত বঙ্গবন্ধু শয়নকক্ষের বিছানায় শুয়ে পড়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এমন সময় বেগম মুজিব এলেন। কক্ষে প্রবেশ করেই তিনি বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তানে আসন্ন ইসলামি সম্মেলনে যোগদানের বিষয়টি তুললেন। বেগম মুজিব কোনোরকম ভূমিকা ছাড়াই বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি বললেন যে, তিনি চান না পাকিস্তানে গিয়ে বঙ্গবন্ধু ইসলামি সম্মেলনে যোগদান করুন। তাঁর স্পষ্ট কথা হল মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিশ লাখ বাঙালি হত্যার আসল হোতা ভুট্টো পাকিস্তানের ক্ষমতার মসনদে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে গেলে কূটনৈতিক শিষ্টতা অনুযায়ী ভুট্টোকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। বেগম মুজিবের দৃঢ় বিশ্বাস ভুট্টো সুযোগ ছাড়বেন না। তাঁর কথা হচ্ছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও বাংলাদেশে অন্ততপক্ষে তাদের এক লাখ অনুচর রেখে গেছে। ভুট্টো বাংলাদেশে এলে এসকল খুনীরা তার সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ এবং নতুন উৎসাহ উদ্দীপনা পাবে। তারা আবার স্বাধীন বাংলাদেশ ও তার জনক বঙ্গবন্ধুকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা নতুনভাবে শুরু করবে। বেগম মুজিব জানান, বাংলাদেশে রেখে যাওয়া পাকিস্তানের এই এক লাখ অনুচর বাংলা ভাষায় কথা বললেও তারা আসলে বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। এদের ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। এই সতর্কতার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর কোনো অবস্থাতেই পাকিস্তানে যাওয়া চলে না।

বঙ্গবন্ধু তাঁর সহধর্মিনীর কথা মন দিয়ে শুনলেন। তিনি জানান যে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পাকিস্তানে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সে কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপর বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গ পাল্টানোর উদ্দেশ্যে বেগম মুজিবকে বললেন—হাসু কোথায়? ওর তো আজ জামাইকে সঙ্গে নিয়ে আমার সঙ্গে ভাত খাওয়ার কথা।

বেগম মুজিব বেশ অসন্তুষ্ট চিত্তেই জানান যে, জামাইকে সঙ্গে নিয়ে হাসু খাবারের জিনা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বাড়িতে ফিরে আসার পরও বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে মধ্যরাত প্রায় পার করে দিয়েছেন দেখে হাসু মন মারাপ করে তার জামাইকে নিয়ে তার নিজ বাসায় চলে গেছে।

সহধর্মিনীর মনের ভাব আঁচ করতে পেরেই বঙ্গবন্ধু পরিবেশ হালকা করার জন্য বললেন—হাসুকে বোলো, সে অনেক দিন ধরে তার বাবার হাতের নখ কেটে দিচ্ছে না। বেগম মুজিব জানান যে, হাসুকে তিনি কথাটা বলবেন। সঙ্গে এ কথাটিও বলবেন যে হাসুকে পিতার নখ কাটতে হলে বোধহয় ভোররাতের দিকেই আসতে হবে। এর পূর্বে পিতার সাক্ষাৎ পাওয়া কঠিন। পরিবেশ বিবেচনা করে বঙ্গবন্ধু তাড়াতাড়ি খাবারের কথা বলে বিছানা ছেড়ে উঠলেন।

বঙ্গবন্ধু যথাসময়ে পাকিস্তান গেলেন। কারণ বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস ছিল, পাকিস্তানে গিয়ে ইসলামি সম্মেলনে যোগ দিলে মুসলিম বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠবে এবং এর ফলে বাংলাদেশ সম্পর্কে মুসলিম বিশ্বে যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে তার অবসান ঘটবে। মুসিলম বিশ্বে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের বন্ধুর সংখ্যা বাড়বে। অন্যদিকে ইসলামি সম্মেলনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে হাবিবুর রহমান গং আগে থেকেই সক্রিয় ছিল। সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই তাদের কয়েকজন বিশ্বস্ত লোক গিয়ে ভুট্টোর সঙ্গে দেখা করে এবং গুরুত্বপূর্ণ শলাপরামর্শ সেরে আসে। হাবিবুর রহমান গং-এর পরামর্শ অনুযায়ী ভুট্টো শুধু বঙ্গবন্ধুর দেয়া বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণই করলেন না, অনতিবিলম্বে এই সফরের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেন। বাংলাদেশে এসে ভুট্টো সাহেবকে কি কি কাজ করতে হবে, তার একটি নীলনকশাও হাবিবুর রহমানের বিশ্বস্ত সহযোগীরা পাকিস্তানে বসে ঠিক করে দিয়ে এল। তাদের কাজে ভুট্টো অত্যন্ত সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন।

কিছুদিন পরে জনাব ভুট্টো রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এলে হাবিবুর রহমান গং যথেষ্ট টাকা খরচ করে এবং সুসংগঠিতভাবে তাকে বিরাট সংবর্ধনা দেয়ার ব্যবস্থা করে। এই সংবর্ধনা দেখে ভুট্টো খুব খুশি হলেন। শুধু তাই নয়, এই সংবর্ধনা দেয়ার ফলে বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় এক লাখ পাকিস্তানি অনুচর তাদের কাজে খুবই উৎসাহ পেয়ে গেল। ভুট্টোর আগমনের দিন সাম্প্রদায়িক শক্তি মন্ত্রী ফণীভূষণ মজুমদারকে লাঞ্ছিত করার মতো সাহসও পেল। হাবিবুর রহমানেরাও বুঝতে পারল, বঙ্গবন্ধুর প্রতি চূড়ান্ত আঘাত হানার উপযুক্ত সময় ঘনিয়ে এসেছে। কেননা, ভুট্টোকে রিসেপশন দেয়ার আগ পর্যন্ত তারা জনগণের সামনে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন সম্পর্কে নিশ্চিত ছিল না। ষড়যন্ত্রকারীরা দেখল যে তারা এখন ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে তৎপরতা চালানোর দিকে এগুতে পারে। এরপর থেকেই হাবিবুর রহমান গংরা সফলতার দিকে সহজভাবে পৌঁছানোর আলামত দেখতে পায়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭