ইনসাইড বাংলাদেশ

মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁসকারী গ্রেপ্তার চিকিৎসকরা বিএনপি-শিবির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত


প্রকাশ: 13/08/2023


Thumbnail

মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্রের চিকিৎসকসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এই চক্রে জড়িত সাত ডাক্তারের মধ্যে পাঁচজন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আরেকজন ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আটক চিকিৎসকদের মধ্যে কেউ কেউ চিকিৎসা দিয়ে থাকেন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে।  

গত ৩০ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ ও বরিশাল জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির সাইবার টিম।

রোববার (১৩ আগস্ট) বেলা ১২টায় মালিবাগ সিআইডির সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে অতিরিক্ত আইজিপি সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।

গ্রেপ্তার চিকিৎসকরা হলেন- 

ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধান (৫০)। তিনি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম মাস্টার মাইন্ড। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে ফেইম নামে একটি কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়ান। কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁস করে গত ২০ বছরে অবৈধভাবে শত শত শিক্ষার্থীকে মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। ডা. ময়েজ প্রশ্ন ফাঁস ও মানিলন্ডারিংয়ের মামলাতে এজাহারনামীয় আাসামি। তিনি চিহ্নিত ছাত্র শিবির নেতা এবং পরবর্তীতে জামায়াতের ডাক্তার হিসেবে পরিচিত। 

প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের আরেক অন্যতম সদস্য ডা. সোহেলী জামান (৪০)। তিনি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে ফেইম নামক কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে স্বামী ডা. ময়েজের সঙ্গে এই চক্রে জড়ান। 



চক্রের আরেক সদস্য ডা. মো. আবু রায়হান। তিনি ঢাকা ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০০৫ সালে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন তিনি। পরে এই প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি প্রাইমেট নামে একটি কোচিং সেন্টার চালাতেন। এছাড়া কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রাকটিস করেন।

ডা. জেড এম সালেহীন শোভন (৪৮) মেডিকেল প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম মূলহোতা। প্রশ্ন ফাঁস মামলায় তিনি এজহারনামীয় আসামি। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করে থ্রি ডক্টরস নামে একটি কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়ান। তিনি ২০১৫ সালে একবার র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ডা. সালেহীন শোভন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ছাত্রদলের পদধারী নেতা ছিলেন।

মেডিকো নামে একটি ভর্তি কোচিং সেন্টারের মালিক ডা. মো. জোবাইদুর রহমান জনি (৩৮)। তিনি ২০০৫ সাল থেকে এই চক্রে জড়িত। এই কারবার করে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শত শত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। ডা. জোবাইদুর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি যুবদলের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক।

চক্রের আরেক সদস্য ডা. জিল্লুর হাসান রনি (৩৭)। তিনি জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালের (নিটোর) চিকিৎসক। তিনি ২০০৫ সাল থেকে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। ২০১৫ সালে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে তিনি রংপুর থেকে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। রংপুর মেডিকেলে অধ্যয়নকালে তিনি ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। বর্তমানে তিনি ড্যাবের সঙ্গে জড়িত এবং আহত বিএনপি নেতাদের চিকিৎসায় গঠিত টিমের একজন চিকিৎসক।

আরেক সদস্য ডা. ইমরুল কায়েস হিমেল (৩২)। তিনি এই চক্রের সঙ্গে জড়ান তার বাবা আব্দুল কুদ্দুস সরকারের মাধ্যমে। তিনি ময়মনসিংহের বেসরকারি কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেন। ২০১৫ সালে টাঙ্গাইলের আকুর টাকুর পাড়ায় নিজ শ্বশুর বাড়িতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পড়িয়ে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে মেডিকেলে ভর্তি করান।

এছাড়া এই ঘটনায় গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন, জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মুক্তার, রওশন আলী হিমু, আক্তারুজ্জামান তুষার, জহির উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী ও আব্দুল কুদ্দুস সরকার।

সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের কাছ থেকে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দেওয়া বিপুল সংখ্যক ব্যাংকের চেক, প্রবেশপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। চক্রের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণ করে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এরা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে কোনো অপরাধ করেছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। 

এই চক্রের ৮০ জন সক্রিয় সদস্য বিগত ১৬ বছরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয় করেছে। এই চক্রের অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে সিআইডি প্রধান।

প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূঁইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়রি উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা তার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম রয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলেও জানান সিআইডি প্রধান।

তিনি বলেন, প্রশ্ন ফাঁস করে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন এমন শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম পেয়েছে সিআইডি। এরমধ্যে অনেকে পাশ করে ডাক্তারও হয়েছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭