ইনসাইড পলিটিক্স

‘বেগম জিয়ার’ শঙ্কায় বিএনপির একদফা আন্দোলন


প্রকাশ: 13/08/2023


Thumbnail

বিএনপি এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করেছে। এক দফার দাবিতে গত শুক্রবার পদযাত্রা করেছে প্রধান বিরোধী দলটি। কিন্তু পদযাত্রার পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেনি। বরং দুই-তিন দিনের মধ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে এমন ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর মধ্যেই বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং বিএনপির নেতা ডা. জাহিদ বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতির দিকে। তার শরীরে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও তিনি সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন। তবে বিএনপির একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো মনে করছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারে সরকারের কঠোর অবস্থানের প্রেক্ষিতেই তাকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আর এ কারণেই এক দফা আন্দোলন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে বিএনপি। 

সরকারের পক্ষ থেকে একটি বার্তা বিএনপির কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা যদি জ্বালাও-পোড়াও ভাঙচুর জাতীয় আন্দোলন করে এবং সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে সরকারও কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হবে। বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করা হবে এবং তাকে আবার কারান্তরীণ করা হবে। উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বেগম খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত কারান্তরীণ হন। এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে তার মুক্তির জন্য আন্দোলনের চেষ্টা করা হয় কিন্তু সেই আন্দোলন শুরুতে মুখ থুবরে পড়ে। আইনগত প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তির চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। এরপর দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় বেগম জিয়া কখনো সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে কখনো বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন।

২০২০ সালের মার্চে বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার এবং বোন গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও তার ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে অন্তত কারাগার থেকে ফিরোজায় রাখার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান এবং প্রধানমন্ত্রী দয়া পরবশ হয়ে নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী দুই শর্তে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে ফিরোজায় রাখা হয়। তখন থেকেই বেগম খালেদা জিয়া ফিরোজায় রয়েছেন। অর্থাৎ সরকারের এক ধরনের দয়ায় বা অনুকম্পায় বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে তার বাসভবনে থাকার অনুমতি পাচ্ছেন। এটা সরকারের একটা বড় অস্ত্র বলে মনে করা মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি যদি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাড়াবাড়ি করে, তারা যদি বিভিন্ন ধরনের ধ্বংসাত্মক তৎপরতায় লিপ্ত হয় বা সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে তাহলে সেক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে। এই বক্তব্যটি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাহী আদেশের জামিন এমন একটি বিষয় যেটি সরকার যেকোনো মুহূর্তে চাইলে বাতিল করতে পারে। কাজেই এই রকম পরিস্থিতিতে যদি সরকার জামিন বাতিল করে তাহলে কারাগারে ফিরে যাওয়ার ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার কোন পথ থাকবে না। এটি বিএনপিকে এবং বেগম জিয়াকে আতঙ্ক করেছে। আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বারবার বেগম খালেদা জিয়ার কাছে ছুটে যাচ্ছেন। তার সাথে পরামর্শ করছেন। এ কারণেই বিএনপির একদফা আন্দোলন থমকে গেছে। 

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, যদি বেগম খালেদা জিয়াকে এই অসুস্থতার মধ্যে কারাগারে নেওয়া হয় সেটি হবে অমানবিক। কিন্তু এর ফলে বিএনপির ওপর যে চাপ তৈরি হবে সেটি সামাল দেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন। কারণ এর আগেও বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের পর সরকার কোন রকম চাপে পড়েনি। বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো তেমন আন্দোলন তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তাই বেগম জিয়ার শঙ্কায় এখন এক দফা আন্দোলন মুখ থুবরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭