ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পাহাড়


প্রকাশ: 13/08/2023


Thumbnail

৩০০ টি আসনে মনোনয়ন প্রার্থী তিন হাজারের বেশি। আর মনোনয়ন প্রার্থী একে অন্যের বিরুদ্ধে এখন কুৎসা রটানোতে ব্যস্ত। একে অন্যের বিরুদ্ধে নালিশ করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নানা রকম প্রচার করছে। গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে একে অন্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম এমনকি ধর্ষণের অভিযোগ পর্যন্ত আনছে। 

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, এরকম প্রায় হাজার দশেক অভিযোগ এখন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দফতরের কাছে। এই অভিযোগগুলো আওয়ামী লীগের নেতারাই করেছেন একে অন্যের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, আওয়ামী লীগের জন্য বাইরের শত্রুর দরকার নেই, নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করার জন্য যথেষ্ট। এই বিষয়টি এতদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে যে গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ বিষয়ে সতর্ক করতে হয়েছে। তিনি বলেছেন, মনোনয়ন পাওয়ার জন্য একে অন্যের বিরুদ্ধে কুৎসা রটালে মনোনয়ন ও দলীয় পদ হারাতে হবে। তিনি কতটুকু অসন্তুষ্ট হয়ে এই ধরনের মন্তব্য করেছেন তা বোঝাই যায়। 

দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। এই ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের অনেক অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড ঢুকেছে। মনোনয়ন লাভ করেছে এমন অনেক ব্যক্তি যারা জীবনে কোনদিন আওয়ামী লীগ করেননি। আর এই রকম বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব-বিরোধ এখন প্রকাশ্য রূপ গ্রহণ করেছে। এছাড়াও এই ১৫ বছরে অনেকে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। এলাকায় তারা একটি অবস্থান গ্রহণ করতে পেরেছে। অনেকেরই এমপি হওয়ার খায়েশ তৈরি হয়েছে। অনেকে মনে করেন যে, এটাই সুযোগ এখনই তাদের কিছু করতে হবে। এরকম একটি বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের এবার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের রীতিমতো বাম্পার ফলন হয়েছে। আর মনোনয়ন লাভের সহজ তরিকা হচ্ছে যিনি এখন এমপি আছেন বা যিনি জনপ্রিয় প্রতিপক্ষ তার চরিত্র হনন করা। এখন তাই আওয়ামী লীগ একে অন্যের চরিত্র হননের খেলায় মেতে উঠেছে। 

বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগের এক নেতা অন্য নেতার বিরুদ্ধে বা একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্য আরেকজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় তৈরি করছেন। এই অভিযোগগুলোকে তারা প্রথমত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, তারা বিভিন্ন গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করছেন। তৃতীয়ত, এটি নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দিচ্ছেন। এই সমস্ত অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগ। 

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সূত্র বলছে, প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে এবং স্থানীয় নেতারা একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। অভিযোগের ধরনগুলো খুবই বিপজ্জনক এবং আতঙ্কজনক বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। একাধিক এমপির বিরুদ্ধে নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগ এসেছে। কারো বিরুদ্ধে এসেছে ভূমি দখল বা সম্পত্তি দখল, কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, কারো বিরুদ্ধে চাকরির ক্ষেত্রে প্রতারণার অভিযোগ ইত্যাদি নানা অভিযোগের জমা হচ্ছে আওয়ামী লীগ অফিসে। 

সম্প্রতি বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতির কানে তোলা হলে তিনি এ ব্যাপারে সতর্কবার্তা দেন। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন যদি আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ না থাকে, একে অন্যের বিরুদ্ধে যদি এভাবে অভিযোগ করতে থাকে তাহলে সামনের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগের জন্য খারাপ সময় অপেক্ষা করছে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭