এডিটর’স মাইন্ড

শেখ হাসিনার কাঠগড়ায় তোফায়েল-রাজ্জাক: এখন কেন?


প্রকাশ: 14/08/2023


Thumbnail

গতকাল এবং আজকে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি লেখা সারাদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। ‘বেদনায় ভরা দিন’ শিরোনামে এই লেখাটি ১৫ আগস্টের শকাবহ দিনকে স্মরণ করে। এই লেখাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং অনুসন্ধানী। প্রধানমন্ত্রী ৭৫’এর ১৫ আগস্টের ঘটনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছেন। সেই সমস্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই এই লেখাটি তৈরি করা হয়েছে। এই লেখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করেছেন। যেটি আওয়ামী লীগের মধ্যেই এক ধরণের বিতর্ক এবং আলোচনা সৃষ্টি করেছে। 

প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আব্বা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদকে ফোন করেন। আব্দুর রাজ্জাক বলেন: লিডার দেখি কী করা যায়। আব্দুর রাজ্জাক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। তোফায়েল আহমেদ ফোনে বলেন: আমি দেখছি। রিসিভার নামিয়ে রাখতে রাখতে বলতে থাকেন: আমি কী করব? তোফায়েল আহমেদ রক্ষী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন।‘ এছাড়া এই লেখায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাপ্রধানের ব্যর্থতা, জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা, তৎকালীন ঢাকার এসপি’র ফোন না ধরা এবং খালেদ মোশাররফের নির্লিপ্ততার প্রসঙ্গটিও উত্থাপন করেছিনে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে তোফায়েল আহমেদ এবং প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকের ভূমিকা আওয়ামী লীগের মধ্যে নতুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। 

অবশ্য গত দুই বছর ধরেই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিভিন্ন বক্তৃতায় এ তথ্যটি পরিবেশন বলছিলে যে, তোফায়েল আহমেদকে বঙ্গবন্ধু ফোন করেছিলেন। যদিও তোফায়েল আহমেদ বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এ বক্তব্য অস্বীকার করেছেন। তবে একই সাথে তোফায়েল আহমেদ রক্ষী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন, এই বহুল চর্চিত কথাটিও তোফায়েল আহমেদ একাধিক সাক্ষাৎকারে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এ নিয়ে রক্ষী বাহিনীর বিভিন্ন ব্যক্তিরা যে বই পুস্তক লিখেছে সেখানেও তোফায়েল আহমেদকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির লেখায় তোফায়েল আহমেদ প্রসঙ্গটি নতুন করে এসেছে। এখানে দুটি বিষয় এসেছে যে, বঙ্গবন্ধু তোফায়েল আহমেদকে ফোন করেছিলেন। তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, আমি দেখছি। দ্বিতীয় প্রসঙ্গটি হল, তিনি রক্ষী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। এই লেখা থেকে যে সত্যটি বেরিয়ে এসেছে তা হল, তোফায়েল আহমেদ এবং আব্দুর রাজ্জাক কেউই যথাযথ দায়িত্ব পালন কারতে পারেননি। 

৭৫’এর পর ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি যখন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন তারপর থেকেই তোফায়েল আহমেদ এবং আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে খুব একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থানে ছিলেন না। আবদুর রাজ্জাক একবার দল থেকে বেরিয়ে বাকশাল গঠন করেছিলেন। কিন্তু সেখানে সুবিধা না করতে পেরে আবার ফিরে এসেছেন। আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুর পর তার ছেলে এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় এবং সংসদের এমপি। তারপরও প্রধানমন্ত্রী সত্য উচ্চারণে পিছপা হননি। 

অন্যদিকে তোফায়েল আহমেদ ৮১’এর পর থেকেই বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নানারকম টানাপোড়নের মধ্যে দিয়ে গেছেন এবং নানারকম বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছেন। আক-এগারোর সময় তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, আব্দুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, যার মূল বক্তব্য ছিল শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করা। এছাড়াও ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি তোফায়েল আহমেদকে মন্ত্রীসভায় যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানালেও তিনি মন্ত্রীসভায় যোগ দেননি। 

এক-এগারোর পরবর্তী পর্যায়ে তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু এবং আব্দুর রাজ্জাককে উপদেষ্টামণ্ডলীতে নিয়ে যাওয়া হয়। আব্দুর রাজ্জাক এই অবস্থাতেই মৃত্যু বরন করেন। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এখন যখন দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী নিয়ে আন্দোলন, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী কেন প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিলেন? 

দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগ ৭৫’এর ঘটনায় কার কি ভূমিকা ছিল তা নির্মোহ তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠনের দাবী করে আসছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এই কমিশন গঠনের কথা বলে আসছেন। তাহলে কি এই কমিশন গঠনের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি সব সত্য উন্মোচন করলেন? 

শুধু সাম্প্রতিক সময় নয়, বিভিন্ন সংকটে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের নানা রকম তৎপরতায় লিপ্ত থাকতে দেখা গেছে। শুধু এক-এগারোর সময় নয়, ২০১৪’র নির্বাচনের আগেও আওয়ামী লীগের কিছু সিনিয়র নেতা রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছিলেন এবং তাকে ভুল পরামর্শ দিয়েছিলেন এমন দাবী স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের মধ্যে শেখ হাসিনার একটি বিরুদ্ধ পক্ষ বিভিন্ন সময় সক্রিয় ছিল। এক-এগারোর পর এই বিরুদ্ধ শক্তি চূড়ান্তভাবে কোণঠাসা হয়ে পরলেও তারা সবসময় দলের ভেতর একটি শেখ হাসিনা বিরোধী একটি আবহ তৈরি করতে চায় এমন অভিযোগ আওয়ামী লীগের তৃণমূলের। আর সেই কারণেই কি শেখ হাসিনা এখন রাজনৈতিক সংকটের আগে এই বিষয়গুলোকে সামনে আনলেন? যারা একবার অবিশ্বস্ত তারা কখনোই বিশ্বস্ত হয় না, এই বক্তব্যটিকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্যই কি তিনি এই তথ্যগুলো সামনে আনলেন? 

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৭৫’এর ১৫ আগস্টের ঘটনাবলী এবং ৭১’ এর মুক্তিযুদ্ধ থেকে ৭৫’ পর্যন্ত জাতির পিতার ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্মোহ। তিনি সত্য অনুসন্ধানী এবং এ নিয়ে তিনি সবসময় সার্বক্ষণিকভাবে পড়াশোনা করেন। আর তাই তিনি যা লিখেছেন তা কোনভাবেই অসত্য হতে পারে না। এ কারণেই ৭৫’এর ঘটনাবলীর একটি নির্মোহ নিরপেক্ষ তদন্তের প্রেক্ষাপট উন্মোচনের জন্যই কি তিনি এখন এই বক্তব্যটি উপস্থাপন করলেন?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭