প্রকাশ: 15/08/2023
চলছে
শোকাবহ আগস্ট মাস। এ মাসে
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। আগস্ট ষড়যন্ত্রের আদ্যোপান্ত নিয়ে অধ্যাপক ড.
সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর সারা জাগানো
বই ‘পিতা, আমরা মুক্ত আকাশ
দেখছি’ এর ধারাবাহিক পর্বের
পঞ্চদশ পর্ব পাঠকদের জন্য
তুলে ধরা হল-
সরকারি
দলের অঙ্গ সংগঠন জাতীয়
ছাত্র লীগের অফিস। একদিন এ অফিস ঢাকার
বাইরে থেকে আসা একজন
কর্মী কেন্দ্রীয় এক নেতার সঙ্গে
দেখা করতে এল। ছাত্রলীগ
অফিসের পিওন তাকে একটি
স্লিপ দিতে বলল। নেতার
সঙ্গে দেখা করতে হলে
স্লিপ দিতে হবে—এটা
জানার পর কর্মীটি এতোটাই
ক্ষুব্ধ হল যে নেতার
সঙ্গে দেখা না করেই
সে চলে যায়। অথচ
বাকশাল গঠন হওয়ার ফলে
ছাত্রনেতার সঙ্গে ঐ কর্মীটির খুবই
গুরুত্বপূর্ণ আলাপ করার প্রয়োজন
ছিল।
দেশের
বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় আগত
কর্মীদের সঙ্গে জাতীয় ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দূরত্ব এভাবেই সৃষ্টি হতে থাকে। এই
দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার ফলে কেন্দ্রীয় নেতারা
কর্মীদের চোখে ছাত্রনেতা হিসেবে
বিবেচিত না হয়ে বরং
কতকটা আমলা হিসেবেই বিবেচিত
হতে থাকলেন। সোজা কথায় বলা
চলে বাকশাল গঠনের পর, তার অঙ্গ
সংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় জড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে ছাত্র সংগঠনটির নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব যারা পেলেন, তাদের
মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজনকে
বাদ দিয়ে বাদবাকি সকলেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি একনিষ্ঠ এবং সত্যি সত্যিই
তাঁরা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্যে প্রস্তুত। কিন্তু ছাত্র সংগঠনটিতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি করা হল ইচ্ছে
করেই এবং এ জটিলতার
জন্যে প্রধানত দায়ী মাত্র কয়েকজন ছাত্রনেতা। তারা ইচ্ছে করেই
এ কাজটি করল। এদের মধ্যে
দুই-একজন ছাত্রনেতার সঙ্গে
মূল ষড়যন্ত্রকারী হাবিবুর গং-এর নিয়মিত
যোগাযোগ ছিল। ষড়যন্ত্রকারীরা হিসেব
করেই বাকশালের অঙ্গ সংগঠনের ছাত্রনেতাদের
সাধারণ ছাত্রদের কাছ থেকে দূরে
সরিয়ে রাখার উদ্যোগ নেয়। কেননা, বঙ্গবন্ধুর প্রতি কোনো আঘাত এলে
সে আঘাত প্রতিহত করার
ক্ষমতা রাখে ছাত্ররাই। কাজেই
ষড়যন্ত্রকারীরা সিদ্ধান্ত নেয়, নেতা ও কর্মীদের
মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে ছাত্রদের নিষ্ক্রিয়
রাখতে হবে, যাতে সঠিক
সময়ে সঠিক নির্দেশ তারা
না পায়।
কোনো এক বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু জানতে পেরেছিলেন যে, জাতীয় ছাত্র লীগের নেতৃত্বকে ঢেলে সাজাবার প্রয়োজন আছে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে ছাত্র সংগঠনটিকে দাঁড় করানো হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই সংগঠনটি তার ঈম্পিত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হচ্ছে না। এর ফলে বঙ্গবন্ধু ব্যথিত হলেন। কিন্তু তিনি ভেবে দেখলেন যে, একটি নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র সংগঠনটির নেতৃত্বে যদি পরিবর্তন আনেন, তা বলে সাধারণ ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে জনগণের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। তথাপি বঙ্গবন্ধু ছাত্র সংগঠনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নেতৃত্বে কিছুটা পরিবর্তন আনার সক্রিয় চিন্তাভাবনা শুরু করলেন। বঙ্গবন্ধুর মনোভাবের কথা গোপনে রনেতানের কানে পৌঁছে গেল। ভাদের মধ্যে কেউ কেউ তখন গদি ঠিক রাখার জন্যে ভেতরে ভেতরে বঙ্গবন্ধুর বিপক্ষে চলে গেল। তবে তখনকার বাস্তব অবস্থার কারণে তাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করার সুযোগ এবং সাহস কোনোটিই ছিল না। তবে এ কথা ঠিক যে, ষড়যন্ত্র করতে সাহসের কোনো প্রয়োজন হয় না । আর যন্ত্রকারীদের সুযোগ নিজেদেরই তৈরি করে নিতে হয়। কোনো কোনো ছাত্রনেতা সংগঠনের কাজ এমনভাবে চালাতে থাকল যে, ছাত্র সংগঠনটি সত্যিকার অর্থে দুর্দিনে বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়াবার মতো শক্তি অর্জন করতে সক্ষম হল না। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে অনেকেই নেতৃত্বের মোহে পড়ে গেল। অনেক নেতাই ভারতে শুরু করল যে সংগঠনের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ যদি দখল করা না যায়, তা হলে সাধারণ ছাত্রদের মাঝে তাদের কোনো বিশেষ ভাবমূর্তিই থাকে না। আর বিশেষ ভাবমূর্তিই যদি না থাকে, তা হলে কিসের ছাত্রনেতা।
বাকশালের
একটি প্রধান স্তম্ভে পরিণত হতে জাতীয় ছাত্রলীগ
ব্যর্থ হল। অথচ এ
সংগঠনের নেতৃস্থানীয় গুটি কয়েকজনের কথা
বাদ দিলে প্রায় সকলেই
ছিল সত্যিকার অর্থে ত্যাগী নেতা। তারা হঠাৎ করে
বা বাইরে থেকে নেতৃত্বে এসে
বসেনি। সংগঠনের নেতৃত্বে তাদেরকেই বসানো হয়, যারা অতীতে
ছাত্রলীগ অথবা ছাত্র ইউনিয়নের
নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত ছিল। যারা ছাত্রনেতা
হিসেবে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। কর্মী থেকে বিভিন্ন পর্যায়
পার হয়ে ছাত্রনেতায় উন্নীত
হয়নি—এমন কাউকে জাতীয়
ছাত্র লীগের নেতৃত্বে বসানো হয়নি। এদিক থেকে বিচার
করলে এই ছাত্র সংগঠনটির
দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে বিরাজ করার কথা। কিন্তু
বাস্তবে তা হল না।
সাধারণ ছাত্রদের কাছ থেকে কেন্দ্রীয়
নেতারা দূরেই অবস্থান করল, যদিও তখনকার
পরিস্থিতিতে অধিকাংশ ছাত্রনেতার পক্ষেই সঠিকভাবে অনুধাবন করা সবক্ষেত্রে সম্ভব
হয়নি যে তারা সাধারণ
ছাত্রদের কাছ থেকে ধীরে
ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। মোট
কথা হল, ষড়যন্ত্রকারীরা সফলভাবেই
বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ছাত্র সংগঠনের মধ্যেও সফলভাবে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিল।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭