ইনসাইড বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগ এবং সিআরআইয়ের প্রথম আলো-চরকি প্রেম


প্রকাশ: 15/08/2023


Thumbnail

“নাম তার প্রথম আলো, বাস করে অন্ধকারে” জাতীয় সংসদে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম আলো সম্পর্কে এই উক্তিটি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, প্রথম আলোর কাজ হল দেশের বিরোধিতা করা, জনগণের বিরোধিতা করা, আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করা। এর আগে তিনি সংসদে বলেছিলেন, আমি নিজের প্রথম আলো পড়িনা। প্রথম আলোর একমাত্র কাজ হল সরকারের বিরুদ্ধে অসত্য, মিথ্যা ও বানোয়াট খবর পরিবেশন করা। সেই প্রথম আলোতেই আজ শোকের দিনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘বেদনায় ভরা দিন’ শিরোনামে লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে। যদিও লেখাটি গতকালই দেশের শীর্ষস্থানীয় সমস্ত জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর আজ এটি প্রথম আলোতে কারা প্রকাশ করল, কিভাবে প্রকাশ করল—এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেই চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

আজকে যখন প্রথম আলো আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ‘বেদনায় ভরা দিন’ শিরোনামে লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে, তখন শোক দিবসেও প্রথম আলো সরকার বিরোধিতার যুদ্ধ থেকে সরে আসেনি। বরং প্রথম আলোতে প্রধান তিনিটি শিরোনামের মধ্যে রয়েছে, ‘ডিম–ভাজির নাশতাও ৬০ টাকার নিচে নয়’, ‘এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৪০০ ছাড়াল’, ‘সিসি ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা থেকে সরে আসছে ইসি’ অর্থাৎ শোকের দিনও সরকারের সমালোচনা থেকে সরে আসেনি প্রথম আলো। যখন অন্যান্য পত্রিকাগুলো শোক দিবসে প্রথম পৃষ্ঠাজুড়ে শুধুমাত্র শোকাবার্তাময় ছবি এঁকেছে, শোকের আবহ সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে দেশ রসাতলে যাচ্ছে এ রকম একটি আবহ তৈরি করেছে তাদের সংবাদের মাধ্যমে। 

এটিই প্রথম নয়। প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রথম আলো অবিরতভাবে সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম ভয়ংকর সংবাদ পরিবেশন করছে। তাদের লক্ষ্য শুধু সাংবাদিকতা নয়, এই সংবাদগুলোর মাধ্যমে তারা সরকারকে যেমন অজনপ্রিয় করতে চায়, পাশাপাশি সরকারকে বিপদেও ফেলতে চায়। যেমন- ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’, কিংবা ভাতের স্বাধীনতা চাই—এ ধরনের সংবাদগুলো যেকোনো বিচারেই রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক। আর এই কারণেই প্রধানমন্ত্রী প্রথম আলো বর্জনের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী প্রথম আলো বর্জনের ডাক দিলে কি হবে, আওয়ামী লীগের মধ্যে, সরকারের মধ্যে প্রথম আলো প্রেমিকের সংখ্যা কম নয়। এর প্রমাণ পাওয়া গেল প্রধানমন্ত্রীর এই লেখাটায়। এই লেখাটি কি প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছে? এই লেখাটি কারা প্রথম আলোতে দিল? প্রথম আলো যদি সরকার, আওয়ামী লীগ বা প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া এই লেখাটি প্রকাশ করে সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর জবাব আওয়ামী লীগ, তথ্য অধিদপ্তর কিংবা প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং কি দেবেন?

এর চেয়েও ভয়ংকর ঘটনা হল প্রথম আলোর মালিকানাধীন চরকি। যে চরকি এখন পর্যন্ত অনুমোদনহীন। চরকি একটি ওটিটি প্লাটফর্ম, যার প্রধান কাজ হল মাদকাসক্ত, দুর্নীতি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ইত্যাদিকে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরা এবং সরকারের বিরুদ্ধে একটি নেতিবাচক সাংস্কৃতিক মনোজগৎ তৈরি করা। সেই কাজে চরকি সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ যখন চরকিকে আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছেন, তখন চরকিসহ সুশীল সমাজ এর প্রতিবাদে রীতিমত মাতম তুলেছেন। এরকম একটি পরিস্থিতির মধ্যে 'হাসিনা: এ ডটারস টেল' আজ থেকে চরকিতে প্রচারিত হচ্ছে। 

চরকি বাংলাদেশের একমাত্র ওটিটি প্লাটফর্ম নয়। এখন আই স্ক্রিন, বিঞ্জ সহ একাধিক ওটিটি প্লাটফর্ম তৈরি হয়েছে, যারা চরকির চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। তাছাড়া ডটারস টেল যে আন্তর্জাতিক মানের এবং আবেগঘন তথ্যচিত্র, সেটি অনায়াসেই নেটফ্লিক্স বা প্রাইম ভিডিওতে প্রচারিত হতে পারে। নেটফ্লিক্স, প্রাইম ভিডিও এধরনের তথ্যচিত্র হরহামেশাই প্রচার করছে। এমনকি বাংলাদেশের তথ্যচিত্র অ্যামাজন প্রাইম এবং নেটফ্লিক্সে প্রচারিত হয়েছে। তাহলে সিআরআই যারা ডটারস টেলের নির্মাতা এবং মালিক তারা এটি প্রথম আলো নিয়ন্ত্রিত বিতর্কিত চরকিতে দিল কেন? প্রথম আলোর সঙ্গে তাদের কি প্রেম?

সিআরআই আওয়ামী লীগের একটি গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান যেটির চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা এবং জ্যেষ্ঠ সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি নিশ্চয়ই এ সম্পর্কে কিছু জানেন না। সিআরআই এর মধ্যে কোন ভূতেরা এই তথ্যচিত্রটি চরকিতে প্রচারের সিদ্ধান্ত নিল, কারা সিআরআইয়ের ট্রাস্টিদেরকে এ ব্যপারে প্রলুব্ধ করল, এটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যখন একধরনের যুদ্ধ করছে প্রথম আলো গোষ্ঠী, আর প্রকাশ্যে বিএনপিকে সমর্থন করছে, একটি নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিদিন গোয়েবলসীয় মিথ্যাচার করছে, তখন আওয়ামী লীগ ও সিআরআইয়ের প্রথম আলো ও চরকি প্রেম দেখে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই হতবাক।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭