ইনসাইড পলিটিক্স

তোফায়েল আহমেদ কি পদত্যাগ করবেন?


প্রকাশ: 15/08/2023


Thumbnail

তোফায়েল আহমেদ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহচরদের একজন ছিলেন তিনি। সাবেক ছাত্রনেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে টেনে তুলেছেন। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা যখন নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হন, সেই সময় তোফায়েল আহমেদ ছিলেন প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব। তরুণদেরকে তুলে আনা, তাদেরকে রাজনীতিতে জায়গা করে দেওয়ার এক অদ্ভুত বিরল গুণ ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। সেই কারণেই তোফায়েল আহমেদের মতো নেতারা খুব কম বয়সেই জাতীয় পরিচিতি পেয়েছিলেন এবং রাজনীতিতে পাদপ্রদীপে এসেছিলেন।

সেই ৭৫’এ তোফায়েল আহমেদের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন, বিতর্ক ও আলোচনা আছে। যদিও তোফায়েল আহমেদ সবসময় এই প্রশ্ন এবং বিতর্ককে এড়িয়ে গেছেন। সব সময় তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে বলেছেন যে, তিনি গৃহবন্দি ছিলেন। এ সময় তার বের হওয়ার কোন পথ ছিল না। তিনি এটিও বলেছেন যে, রক্ষী বাহিনীর দায়িত্বে তিনি ছিলেন না। আর সবচেয়ে বড় যে আত্মপক্ষ সমর্থন তোফায়েল আহমেদের ছিল তা হলো, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে কোন ফোন করেননি। কিন্তু গতকাল “বেদনায় ভরা দিন” শিরোনামে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখাটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে তোফায়েল আহমেদকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এখানে দুটি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে:

প্রথমত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আব্দুর রাজ্জাক এবং তোফায়েল আহমেদকে টেলিফোন করেছিলেন। আব্দুর রাজ্জাক এখন আর বেঁচে নেই। কাজেই তার প্রসঙ্গটি এখানে আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু তোফায়েল আহমেদকে টেলিফোন করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এটি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখিতভাবে জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী একাধিক বক্তৃতায় এই তথ্যটি উপস্থাপন করেছিলেন। যারা শেখ হাসিনাকে চেনেন ও জানেন তারা জানেন যে, পঁচাত্তরের ঘটনাবলী নিয়ে তিনি নিরন্তর গবেষণা করছেন। এ সংক্রান্ত যেকোন তথ্য উপাত্ত তিনি খুঁজে বের করেছেন এবং এ সমস্ত তথ্য উপাত্তগুলোর সত্যতা যাচাই করার ক্ষেত্রেও তিনি নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। কাজেই প্রধানমন্ত্রী না জেনে, না বুঝে তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে টেলিফোনের ওই তথ্যটি দিবেন এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী তাঁর লেখায় বলেছেন যে, রক্ষী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন তোফায়েল আহমেদ। যদিও তোফায়েল আহমেদ ৭৫’এর পর থেকে বারবার বলার চেষ্টা করেছেন যে তিনি রক্ষী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন না। রক্ষীবাহিনী একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই নিশ্চিত হয়েছেন যে তোফায়েল আহমেদ রক্ষী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। তাহলে রক্ষী বাহিনীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তিনি রক্ষী বাহিনীকে ব্যবহার করলেন না কেন সেই প্রশ্নটিও সামনে চলে এসেছে।

এখন জীবন সায়াহ্নে তোফায়েল আহমেদ রাজনীতির একটা চরম সংকটের মুহূর্তে। ৭৫’এর ১৫ আগস্ট তার সব অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এখন আওয়ামী লীগ সভাপতির এই লেখা তার রাজনীতিকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে যাচ্ছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। কারণ পঁচাত্তরের পরবর্তী পর্যায়ে তোফায়েল আহমেদের বিভিন্ন সময়ে ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। বিশেষ করে এক-এগারোর সময় সংস্কারপন্থী হয়ে উঠেছিলেন। এখন তোফায়েল আহমেদ কি করবেন?

সাম্প্রতিক সময় অসুস্থ হয়ে তিনি কিছুটা পঙ্গুত্বকে বরন করে নিয়েছেন, তার শরীরের এক পাশ খানিকটা অবস। রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় নন। তারপরও তার আগামী নির্বাচন করার অভিপ্রায় রয়েছে। গতকালের ওই লেখার পর তোফায়েল আহমেদ অনেক ঘনিষ্ঠদের মধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েন তোফায়েল আহমেদ হয়তো আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। কিংবা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে একজন কর্মী হিসেবে থাকতে পারেন। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, তোফায়েল আহমেদ সারাজীবন রাজনীতি করার পর জীবন সায়াহ্নে এসে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াবেন, এমন মানুষ তিনি নন। বরং আগামী নির্বাচন নিয়ে এবং ভোলা নির্বাচনী এলাকায় তার পরে তার নিকটজন কারা আওয়ামী লীগের হাল ধরবে এ নিয়ে তিনি বিভিন্ন সময় ব্যস্ত সময় কাটান।

এই বাস্তবতায় তোফায়েল আহমেদ কি এই অভিযোগ কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করবেন? নাকি তিনি এই অভিযোগের বিপক্ষে যুক্তি এবং তথ্য উপস্থাপন করবেন? নাকি তিনি নীরবতা অবলম্বন করবেন? সেটি এখন দেখার বিষয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭