ইনসাইড পলিটিক্স

আবার যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থানে বিএনপি


প্রকাশ: 15/08/2023


Thumbnail

জামায়াতের নেতা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আজীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গতকাল মৃত্যুবরণ করেছেন। বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তার মৃত্যুর পর বিএনপি তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি শোক বার্তা দিয়েছে। এ শোক বার্তায় বিএনপি জামায়াতের এই যুদ্ধাপরাধীকে মজলুম আলেম হিসেবে অভিহিত করেছে। 

বিএনপি তাদের শোক বার্তায় বলেছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা শোক প্রকাশ করছি এবং মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। সেই সাথে আমরা মজলুম এই আলেমের পরিবার, নিকট আত্মীয় ও শুভাকাঙ্খীদের সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

বিএনপির এই শোকবাণীর ভাষা দেখে নতুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কবে মজলুম আলেম ছিলেন এ নিয়ে বিভিন্ন মহল প্রশ্ন তুলেছে। কারণ একজন সংসদ সদস্য ধনাঢ্য বিত্তশালী ব্যক্তি, যিনি ধর্ম ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছিলেন, তিনি কীভাবে মজলুম আলেন হলেন সেই প্রশ্ন বিএনপির মধ্যেই উঠেছে। আর এর মধ্য দিয়ে আবার যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করলো বিএনপি।

উল্লেখ্য যে, ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতিহারে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার ঘোষণা করেন এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয় যে তারা ক্ষমতায় এলে যুদ্ধাপরাধের বিচার করবেন। সেই অঙ্গীকার পূরণ করতে আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল গঠন করে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করে। এই প্রক্রিয়া শুরু হলে বিএনপি এবং জামায়াতের বাধার মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ। এই সময় বেগম খালেদা জিয়া বলেন যে, আলেম-ওলামাদের গ্রেপ্তার করে তাদেরকে নির্যাতন করা হচ্ছে। সিলেটের এক জনসভায় তার ওই ভাষণ রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ যখন অটল থাকে এবং একে একে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার এবং দণ্ড কার্যক্রম কার্যকর করতে থাকে তখন বিএনপি পিছু হটে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মহল এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে স্বাগত জানালে এবং আন্তর্জাতিক সমস্ত মানদণ্ড বজায় রেখে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলে বিএনপি পিছু হটে। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে একটি জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয় এর ফলে বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের রায় এবং বিচার নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। বিশেষ করে তাদের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যখন দণ্ডিত হয় তখনও বিএনপি কোন বক্তব্য বিবৃতি বা মন্তব্য করেনি।

২০১৮ এর নির্বাচনের পর বিএনপি আস্তে আস্তে জামায়াতের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। এসময় পশ্চিমা বিশ্ব বিএনপিকে পরামর্শ দেয় যে, তারা যদি জামায়াতের সঙ্গে থাকে তাহলে তাদের কোনো দাবি দাওয়ার প্রতি সমর্থন জানানো সম্ভব নয়। এর ফলে আস্তে আস্তে ২০ দলীয় জোট বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির প্রকাশ্য দূরত্ব তৈরি হয়। জামায়াতও পৃথক অবস্থান থেকে তাদের আন্দোলনের কর্মসূচির কথা ঘোষণা করে। যদিও জামায়াত নিবন্ধিত দল না হওয়ার কারণে এই কর্মসূচিগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুমোদন পায়নি। তবে জামায়াত-বিএনপি'র দূরত্ব নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী চর্চা হয়েছিল। কিন্তু দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর জামায়াতের এই নেতার জন্য বিএনপি'র আকুতি সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। 

সকলেই মনে করছেন যে আসলে বিএনপি-জামায়াত কখনো আলাদা হবার নয়। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সবসময়ই বিএনপির অবস্থান ছিল। কিন্তু পারিপার্শ্বিকতার চাপে বিএনপি এটিকে প্রকাশ করেনি। এখন সাঈদীর মৃত্যুর পর বিএনপির প্রকাশ্য অবস্থান তাদের আসল রূপ আরেকবার জনগণের সামনে উন্মোচিত করলো।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭