ইনসাইড পলিটিক্স

পাঁচ প্রশ্নে বিদ্ধ তোফায়েলের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার


প্রকাশ: 18/08/2023


Thumbnail

নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্কের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা তোফায়েল আহমেদ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত এই জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা জীবন সায়াহ্নে এসে নানা সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন। রাজনীতি থেকে তিনি নিজেকে এক রকম গুটিয়ে নিয়েছেন। শারীরিক অসুস্থতা এবং দলের শীর্ষ নেতাদের সমালোচনার মুখে তাকে ১৫ই আগস্টের কোনো কর্মসূচিতেই দেখা যায়নি। ১৫ই আগস্টের আগে ১৪ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে। সেই নিবন্ধে তোফায়েল আহমেদ এবং আব্দুর রাজ্জাকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এটি আওয়ামী লীগের মধ্যে তোলাপাড় সৃষ্টি করেছে। এর পর শুরু হয়েছে সত্য অন্বেষণ।

’৭৫- এর ১৫ই আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তোফায়েল আহমেদের পাঁচটি সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন ওঠেছে। যদিও পাঁচটি সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তোফায়েল আহমেদের নিজস্ব বক্তব্য আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনি অস্বীকার করেছেন। তবে এই প্রশ্নগুলোকে ঘিরে তোফায়েল আহমেদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। যে পাঁচটি প্রশ্ন নিয়ে তোফায়েল আহমেদ এখন আক্রান্ত হচ্ছেন, সেগুলো হলো- 

১. তোফায়েল কি জিয়াউর রহমানের বদলি ঠেকিয়েছিলেন?: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের জুনের শেষ দিকে জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে বদলি করেছিলেন। এই বদলির আদেশ হওয়ার পর জিয়াউর রহমান বিভিন্ন জায়গায় তদবির করেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন, শেষ পর্যন্ত জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তোফায়েল আহমেদকে অনুরোধ করেন বদলি ঠোকানোর জন্য। পরবর্তীতে তোফায়েল আহমেদ বঙ্গন্ধুকে বুঝিয়ে জিয়াউর রহমানের বদলি ঠেকান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার নিয়োগ বাতিল করে, তাকে আবার উপ-সেনাপ্রধান হিসেবেই বহাল রাখা হয়। বঙ্গবন্ধুর একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এই তথ্য প্রকাশ করেছেন। এই তথ্যটি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও জানেন। যদিও তোফায়েল আহমেদ এই বক্তব্য অস্বীকার করে বলেছেন, এরকম কোনো তদবির তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে করেননি। 

২. বঙ্গবন্ধুর টেলিফোনের পর কি করলেন?: এটি এখন প্রমাণিত সত্য যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৫ই আগেস্টের প্রত্যুষে আক্রান্ত হওয়ার পর, যাদেরকে ফোন করেছিলেন, তাদের মধ্যে তোফায়েল আহমেদ ছিলেন অন্যতম। যদিও তোফায়েল আহমেদ বিভিন্ন সময় এটি অস্বীকার করেছেন। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি সুস্পষ্টভাবে তথ্য প্রমাণ নিয়ে বলছেন, তাকে ফোন করেছিলেন। এই ফোনের পর তোফায়েল আহমেদ কি করেছিলেন? তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন, তার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন। যেকোনো পরিস্থিতিতে তার সে সময় ৩২ নম্বরের দিকে ছুটে যাওয়া উচিৎ ছিল, যেমনটি ছুটে গিয়েছিলেন ব্রিগেডিয়ার জামিল। কিন্তু তোফায়েল আহমেদ তেমনটি করেননি। টেলিফোন পাওয়ার পর তোফায়েল আহমেদ কি করেছিলেন, - এই প্রশ্নে তোফায়েল আহমেদ ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন আওয়ামী লীগে এবং আওয়ামী লীগের বাইরে। 

৩. তোফায়েল আহমেদ কি রক্ষী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন?: তোফায়েল আহমেদ বিভিন্ন সময় বলেছেন যে, তিনি রক্ষী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন না। কিন্তু বিভিন্ন প্রামাণ্য দলিলপত্র, কাগজে সুস্পষ্টভাবে দেখা যায় যে, তোফায়েল আহমেদের হাতেই রক্ষী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ছিল। আর আওয়ামী লীগ সভাপতির ১৪ আগস্ট প্রকাশিত ‘বেদনায় ভরা দিন’- লেখাটি এই সত্যকে আবার সামনে এনেছে। তাহলে রক্ষী বাহিনীকে তিনি ব্যবহার করেননি কেন? -এই প্রশ্ন এখন অত্যন্ত বড় হয়ে জাতির সামনে এসেছে। তোফায়েল আহমেদ কেন বারবার রক্ষী বাহিনীর কথা অস্বীকার করছিলেন, তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। 

৪. তিনি কি ইউজিন বোস্টারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন?: ইউজিন বোস্টারের একটি তারবার্তা থেকে জানা যায় যে, তোফায়েল আহমেদ ১৫ আগস্টের পর মার্কিন দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন। যদিও অন্য সব অভিযোগের মতো এই অভিযোগও তোফায়েল আহমেদ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি এরকম কোনো রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেননি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মার্কিন একজন কূটনীতিক, ঘটনা সত্য না হলে, তার পররাষ্ট্র দপ্তরে এমন একটি তারবার্তা পাঠাবেন কি করে। এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর তোফায়েল আহমেদ এখনও দিতে পারেননি। 

৫. ২১ দিন তিনি করলেন?: দেখা যায় যে, তোফায়েল আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয় ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ সাল। ১৫ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় তোফায়েল আহমেদ কি করেছেন?- এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর এখন পর্যন্ত তোফায়েল আহমেদ দিতে পারেননি। 

সরকার ১৫ই আগস্টের ঘটনাবলীর ব্যাপারে একটি কমিশন করছে। কমিশন নিশ্চয়ই এসব প্রশ্নের নির্মোহ এবং সঠিক উত্তর খুঁজে বের করবে। তবে তার চেয়ে বড় কথা, জীবন সায়াহ্নে এসে তোফায়েল আহমদেকে তার রাজনৈতিক জীবনের স্বচ্ছতা প্রমাণ করার জন্য এর সঠিক উত্তর দিতে হবে নির্ভয়ে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭