ইনসাইড বাংলাদেশ

পুলিশ ও প্রশাসন আগের মতো আওয়ামী লীগের কথা শুনছে না!


প্রকাশ: 18/08/2023


Thumbnail

উত্তর অঞ্চলের একটি জেলা শহর। আওয়ামী লীগের একজন নেতা খবর পেলেন যে বিএনপি এবং তার মিত্ররা সংগঠিত হচ্ছে, তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল করবে। এই বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে তারা এলাকায় নাশকতা তৈরি করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের ওই নেতা ফোন করলেন সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে। ওসি বললেন, স্বাভাবিক সভা-সমাবেশ করার ক্ষেত্রে তারা বাধা দিতে পারবেন না। এটা তাদের ওপর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের ওই নেতা ক্ষুব্ধ হলেন। তিনি এরপর এসপিকে ফোন করলেন। এসপি তাকে বললেন, সমাবেশ করলে বাধা কোথায়? সমাবেশ করার অধিকার সবারই আছে। আপনারাও সমাবেশ করুন কিন্তু গোলযোগ করবেন না। আওয়ামী লীগের ওই নেতা হতভম্ব হয়ে গেলেন। তিনি এরপর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি অবহিত করেন। এটা শুধুমাত্র একটি উত্তরাঞ্চলের জেলার চিত্র নয়, ঢাকার বাইরে অধিকাংশ জেলাগুলোতে একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা এখন আওয়ামী লীগের কথা আগের মতো শুনছে না। একটা সময় ছিল যখন এমপি বা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা পুলিশকে যে ভাবে বলতেন সেভাবেই তারা বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক কর্মসূচির আগে পুলিশ ঘটা করে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতেন। সিভিল প্রশাসনও আওয়ামী লীগের নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে।

বিভিন্ন জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নতুন ডিসিরা দায়িত্ব গ্রহণ করেই নিরপেক্ষ থাকতে চাইছেন। সাম্প্রতিক সময়ে একজন জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়েছিলেন একজন নির্বাচিত এমপি। ওই নির্বাচিত এমপি কিছু বিষয়ে জেলা প্রশাসককে সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু জেলা প্রশাসক তাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি এ ধরনের সুপারিশ শুনতে রাজি নন। ওই এমপি দুঃখ করে বলছিলেন, করোনার পর থেকেই যখন জেলার দায়িত্ব সচিবদেরকে দেয়া হয়েছে তখন থেকে আমলারা আমাদের কথা শুনছে না। কিন্তু এখন নির্বাচনের আগে এসে আমলারা পুরো উল্টো সুরে কথা বলা শুরু করছে। 

এ তো গেলে মাঠ প্রশাসনের কথা। ঢাকা সচিবালয়েও ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের কর্মকর্তারা এখন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এবং নেতাদের চেষ্টা-তদবির কিছু শুনছে না। কদিন আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের একজন এমপি। একটি রাস্তা সংক্রান্ত কাজের ব্যাপারে তিনি স্থানীয় সরকার প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে গিয়েছিলেন। ওই এমপি বলছিলেন, আগে এখানে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন যার কাছে আওয়ামী লীগের লোকজন গেলে তিনি তাদেরকে সহায়তা করতেন। অতি সম্প্রতি তিনি অবসরে গেছেন। এবার তিনি যুগ্ম সচিব বা অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে গেল সবাই তাদেরকে বললো এখন নির্বাচনের আগে তাকে কোন ভাবে সহায়তা করা সম্ভব নয়, নির্বাচনের পর যোগাযোগ করার জন্য। শুধু এই একটি মাত্র নয়, এরকম বহু মন্ত্রণালয়ে এখন আমলারা নিরপেক্ষ অবয়ব গ্রহণ করেছেন। তারা আওয়ামী লীগের কথা এখন আর শুনছেন না। 

বিভিন্ন মহল মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির কারণে পুলিশ প্রশাসন এবং সিভিল প্রশাসনের মধ্যে এক ধরনের  নিরপেক্ষতা এসেছে। তারা এখন ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। কারণ এ ধরনের ঝুঁকির ফলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। এর ফলে তাদের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়তে পারে—এমন ভাবনা থেকেই তারা সবকিছু থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু বিভিন্ন মহল মনে করছেন, আসলে বিরোধী দলের রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের মধ্যে যারা ঘাপটি মেরে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন ছিল তারা এখন সক্রিয় হয়েছেন। আর এই কারণেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আমলারা সবকিছু বুঝতে চাইছেন। রাজনৈতিক চাপের ওপর নির্ভর করছে তাদের মেজাজ-মজি। আগের মতো আওয়ামী লীগের কথায় তারা আর সব কিছু করছেন না। এটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাও বটে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭