ইনসাইড বাংলাদেশ

শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের প্রস্তাব?


প্রকাশ: 18/08/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হবে—এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। তা ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলছেন, এ ধরনের নির্বাচন হলে তা প্রতিহত করা হবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচন হতে হবে সংবিধানের আওতায়। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোন দল নির্বাচনে এলো না এলো তা দেখার বিষয় নয়। নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হবে। 

এরকম একটি টানটান উত্তেজনার মধ্যে কূটনৈতিক মহলে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে। তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সমঝোতায় আনার চেষ্টা করছে। এ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো দফায় দফায় বৈঠক করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। এছাড়াও কূটনীতিকরা নিজেদের মধ্যেও আলাপ আলোচনা করছে। আর এ সমস্ত আলাপ-আলোচনায় বড় ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশের সুশীল সমাজের একটি অংশ। 

যখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উপস্থাপন করা হচ্ছে অন্যদিকে সংবিধানের আওতায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পাল্টা প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে ঠিক সেই সময় কূটনৈতিক পাড়ায় একটি জাতীয় সরকারের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। 

বিভিন্ন সূত্র বলছে, আলোচনাটি খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে এই আলোচনার প্রধান দিক হলো শেখ হাসিনাকে মাইনাস করে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না। কিন্তু আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সহ প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি ঐক্যমতের সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা যায় কিনা তা নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে। 

এ নিয়ে একজন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, এটি কোন আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব নয়, স্রেফ বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হয়েছে। সম্ভাব্যতা নিয়ে দুই একজন নেতার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেতারা বলছেন, এ ধরনের প্রস্তাব আওয়ামী লীগ কখনই গ্রহণ করবেনা। আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার বাইরে কাউকে প্রধানমন্ত্রী করে নির্বাচন করবে না। 

অন্যদিকে বিএনপিও এই প্রস্তাবের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। তারা বলছেন, এ ধরনের জাতীয় সরকারের প্রস্তাবনা বিভ্রান্তিকর এবং অযৌক্তিক। তবে এই জাতীয় সরকারের বিষয়টি রাজনীতিতে নতুন করে তৃতীয় ধারা সৃষ্টির লক্ষ্যে কিনা তা নিয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রশ্ন তুলেছেন। 

জাতীয় সরকারে আওয়ামী লীগের দুইজন প্রবীণ হেভিওয়েট নেতাকে রাখার কথা বলা হয়েছে। আমির হোসেন আমু অথবা তোফায়েল আহমেদকে জাতীয় সরকারের প্রধান করা যায় কিনা—এরকম প্রশ্ন দুজন কূটনীতিক বিএনপির একাধিক নেতাকে জিজ্ঞেস করেছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও কূটনৈতিক মহলে প্রশংসাসূচক আলোচনা হয়েছে। 

আওয়ামী লীগের বাইরে জাতীয় পার্টির জিএম কাদের, বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননের নামও জাতীয় সরকারে রাখার বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে। একজন সুশীল যিনি জাতীয় সরকার নিয়ে কূটনীতিকদের এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন, তিনি বলেছেন, রাজনীতিতে যাদের পরিচ্ছন্ন ইমেজ আছে, যারা বিভিন্ন দলের সঙ্গে যুক্ত হলেও সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং তাদের দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই—এরকম ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায় কিনা—এরকম প্রস্তাব একটি ইউরোপের দেশ থেকে উত্থাপিত হয়েছে। তবে এটি নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। 

তবে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামীলীগ-বিএনপির বাইরে তৃতীয় শক্তিকে জাগ্রত করার চেষ্টা কূটনৈতিক মহলের রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে রাজনীতির তৃতীয় ধারার সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছিল। ১৯৯১ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম কিংবা ২০০৭ সালে কিংস পার্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থানের চেষ্টা হয়। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো ব্যর্থ হয়। এটি কি নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার নাকি রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে একটি তৃতীয় ধারা উত্থানের চেষ্টা—সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭