ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগে এত জামায়াত


প্রকাশ: 18/08/2023


Thumbnail

গত ১৪ আগস্ট যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াতের নেতা যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ওরফে দেলু রাজাকার মারা গেছেন। তার এই মৃত্যুর পর জামায়াত এটাকে নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করেছে এবং সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, দেলু রাজাকারের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের একটি বড় অংশের মধ্যে শোক দেখা গেছে। এই শোকের কারণ কি—নিয়ে আওয়ামী লীগের উচ্চমহলে নানামুখী আলাপ আলোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ কি জামায়াত আক্রান্ত হয়ে গেল? আওয়ামী লীগে এত জামায়াত এলো কোত্থেকে—এই প্রশ্ন উঠেছে। 

ইতিমধ্যে ছাত্রলীগ এ ব্যাপারে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। যারা সাঈদীর মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়েছে তাদের সবাইকে দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই সমস্ত ছাত্রলীগের নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছিলেন। প্রায় অর্ধশতাধিক এ ধরনের সমব্যথীকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শুধু ছাত্রলীগ নয়, তাঁতী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীও এরকম শোক জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়েছিলেন। তাদেরকেও শাস্তির মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের অনেক তৃণমূলের মধ্যেও দেলু রাজাকার প্রেম দেখা গেছে। সাঈদীর মৃত্যুতে তাদের মাতম আওয়ামী লীগকে বিস্মিত করেছে। 

আওয়ামী লীগের মধ্যে এত জামায়াতপন্থিরা ঢুকলো কিভাবে—এই নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে বিস্ময় দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে দেখা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে আস্তে আস্তে জামায়াতের অনুপ্রবেশ ঘটে আওয়ামী লীগে। বিশেষ করে একটা পর্যায়ে ছাত্রলীগের মধ্যে ব্যাপক জামায়াতের অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছিল। আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এ নিয়ে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছিলেন।

ছাত্রলীগের এই জামাতি করণের প্রেক্ষাপটে এক সময় শুদ্ধি অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। কিন্তু এখনও ছাত্রলীগে যে জামায়াত এবং তাদের বংশধর ভালোভাবেই গাঁটছড়া বেঁধে উঠেছে দেলু রাজাকারের মৃত্যুর পর তা আবার প্রকাশ হলো। শুধু ছাত্রলীগেই এ রকম অনুপ্রবেশ ঘটেনি, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে এ ধরনের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এই অনুপ্রবেশকারীরা মনেপ্রাণে জামায়াত করলেও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার জন্য আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে এসেছেন। 

আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও ইত্যাদি করে। এ সমস্ত অপরাধে যখন তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় তখন এ মামলাগুলো থেকে বাঁচার জন্য অনেকে আওয়ামী লীগে এসেছে। অনেকেই স্বজ্ঞানে এবং অপরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে যেন পরবর্তীতে তারা তাদের স্বার্থ উদ্ধার করতে পারে, আওয়ামী লীগকে বিপদে ফেলতে পারে। আর এই ধরনের প্রতারণাকারীই এখন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর শোক প্রকাশ করছে।

আওয়ামী লীগের একজন যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বলেছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি বারবার এই অনুপ্রবেশকারীদেরকে চিহ্নিত করার জন্য বলছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের উদ্যোগে সারা দেশে এ ধরনের অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে ৭৬ হাজার অনুপ্রবেশকারীদের পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল, যারা বিএনপি-জামায়াত থেকে এসেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের খুব অল্প কয়েক জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, অনতিবিলম্বে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা গেলে সামনে আওয়ামী লীগকে বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়তে হতে পারে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭