লিট ইনসাইড

পিতা, আমরা মুক্ত আকাশ দেখছি (পর্ব-১৯)


প্রকাশ: 19/08/2023


Thumbnail

চলছে শোকাবহ আগস্ট মাস। এ মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। আগস্ট ষড়যন্ত্রের আদ্যোপান্ত নিয়ে অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর সারা জাগানো বই ‘পিতা, আমরা মুক্ত আকাশ দেখছি’ এর ধারাবাহিক পর্বের ঊনবিংশ পর্ব পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-

ঢাকার মগবাজার এলাকার একটি বাড়িতে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং শুরু হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছে ৭১-এর ঘাতক আল-বদর, আল-শামসের সদস্যরা। আলোচনার মূল বিষয় হল, কিভাবে বঙ্গবন্ধু এবং তার সরকারকে খতম করা যায়। কেননা, বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় থাকলে এদেশকে কিছুতেই পাকিস্তানের অনুগত রাখা যাবে না। তা ছাড়া ৭১-এর পরাজয়কে আল-বদর, আল-শামসরা কিছুতেই ভুলতে পারেনি।

সভায় বক্তারা যেসকল বক্তব্য প্রদান করে চলল, তাতে স্পষ্ট হল যে, ইতিমধ্যেই তাদের সঙ্গে হাবিবুর রহমান গংদের যোগাযোগ হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান তাদের এই তৎপরতাকে সমর্থন করার জন্যে যা যা প্রয়োজন, তার সবকিছুই করতে প্রস্তুত। হাবিবুর রহমানদের তরফ থেকে তাদেরকে এই আশ্বাস দেয়া হয়েছে যে, তারা বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে তাদের কাজকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। কাজেই হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে বিষয়টি জটিল হওয়াতে তাদের সকলকে বাহ্যিকভাবে আলাদা আলাদাভাবে কাজ করে যেতে হবে যাতে করে জনগণ কিছুতেই আঁচ করতে না পারে যে ষড়যন্ত্রকারীদের এক গ্রুপের সঙ্গে আরেক গ্রুপের কোনোপ্রকার যোগাযোগ আছে। কাজের সুবিধা এবং জনগণকে সহজে বিভ্রান্ত করার জন্যেই তারা গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যেমন মগবাজারের মিটিং- ৭১-এর আল-বদর, আল-শামস হিসেবে যারা উপস্থিত হয়েছে, তাদেরকে সাংকেতিক নাম দেয়া হয়েছে মগবাজার গ্রুপ। কাজেই মগবাজার গ্রুপ বললেই বুঝে নিতে হবে, তারা কারা।।

ষড়যন্ত্রকারীদের একটি অঙ্গ হিসেবে মগবাজার গ্রুপ কাজ চালিয়ে গেলেও তাদের আসল নেতা দেশের বাইরে অবস্থান করছিল। এতে তাদের অসুবিধা নয়, বরং সুবিধাই হয়। কেননা, জনগণ থেকে শুরু করে সরকারের অধিকাংশ লোকই বুঝতে পারেনি যে, মগবাজার গ্রুপ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। বরং তাদের ধারণা ছিল যে, দেশের পরিস্থিতি ৭১-এর ঘাতকদের অনকূলে নয়। কারণেই তারা নিজেদের গা বাঁচাতে ব্যস্ত। সুতরাং ওদের তরফ থেকে কোনোরকম ক্ষতির আশঙ্কা নেই। অথচ প্রকৃত অবস্থা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত।

যা হোক, মগবাজারের সভায় উপস্থিত সদস্যদের আশ্বস্ত করা হয় যে, তাদের নেতা বিদেশে অবস্থান করলেও নিয়মিত টাকা পাঠাচ্ছেন। দেশের অভ্যন্তরে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ চালিয়ে যেতে হবে, সে নির্দেশও তিনি বিদেশ থেকে দিয়ে চলেছেন। তারই নির্দেশে মগবাজার গ্রুপ কুমিল্লা গ্রুপ হিসেবে পরিচিত হাবিবুর রহমান। চলেছে এবং নিজেদের শক্তি সম্পর্কে অনেক বেশি আশাবাদী হয়েছে। তারা মনে করে, গং-এর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে একে অপরের সহযোগী হিসেবে কাজ করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করাটা এখন আর কোনো কঠিন কাজ নয় এবং হত্যাপরবর্তী জামেলাটা সামাল দেয়াও তেমন কঠিন কাজ হবে না।

মগবাজার গ্রুপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল যে, তাদের সদস্যরা দেশের যে-কোনো স্থানেই অবস্থান করুক না কেন, তাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখতে হবে। জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের অংশ হিসেবে বেশি করে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। এর ধর্মীয় অনুষ্ঠান মগবাজার গ্রুপের সদস্যরা কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করবে। ইয়লামের পবিত্র বাণী-প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে কৌশলে বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যেতে হবে। একই লক্ষ্যে দেশের অধিকাংশ মসজিদের সঙ্গে গ্রুপ সদস্যদের সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকতে হবে। তাদের মনে রাখতে হবে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান মসজিদের মাধ্যমে এদেশের ধর্মভীরু জনগণের যত কাছাকাছি যাওয়া যাবে, অন্য কোনো পন্থায় ততটা কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব নয়। ধর্মীয় অনুষ্ঠান মসজিদের মাধ্যমে লোকজনকে ধীরে ধীরে বোঝাতে হবে, বঙ্গবন্ধু সরকারের এদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র করার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশ থেকে ইসলামকে শেষ করে দেয়া। জনগণকে যদি কথাটা ভালভাবে বোঝানো যায়, তা হলে তাদের মধ্যে জেহাদি মনোভাব সৃষ্টি হবে। সাধারণ মানুষকে এভাবে বিভ্রান্ত করা গেলে বঙ্গবন্ধুকে সহজেই জনগণ থেক বিচ্ছিন্ন করা যাবে। জনগণকে আরো বোঝাতে হবে, ভারত থেকে অনেক হিন্দুকে আমদানি করা হয়েছে, যাদের কাজই হচ্ছে দেশ থেকে ইসলামকে উচ্ছেদ করে দেয়া। এসকল হিন্দু বিভিন্নভাবে মুসলমানদের বেশ ধারণ করে তাদের কাজ গোপনে গোপনে চালিয়ে যাচ্ছে। তারা মুসলমান পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেছে। কাজেই সাচ্চা মুসলমান হিসেবে এদেরকে রুখতে হবে। এটা সকলের জন্যে ফরজ হয়ে গেছে।

তখন ৭১ সালে ট্রেনিংপ্রাপ্ত আল-বদর, আল-শামসের সদস্যরাই সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। এমনকি বিভিন্ন উপায়ে ক্ষমতাসীন দল প্রশাসনে ঢুকতে সক্ষম হয় তাদের অনেকেই। ছাড়া নিজেদের অস্তিত্বরক্ষার স্বার্থেই নতুন রাজনৈতিক দল জাসদে ভিড়ে যাওয়া সদস্যরা তো ছিলোই। মগবাজার গ্রুপ এসকল খুনীদেরকেই আবার সংগঠিত করতে থাকে। কারণ তারা জানত, সুসংগঠিত আল-বদর, রাজকাররা আবার মনোবল ফিরে পাবে এবং ৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগও হাতছাড়া করবে না। কথায় আছে, যে বাঘ একবার মানুষের মাংসের স্বাদ পেয়েছে, সে সুযোগ পেলেই মানুষ হত্যা করবে। ৭১- যারা একবার নিরীহ জনগণকে হত্যা করে হত্যার স্বাদ পেয়েছে, মা-বোনদের ধর্ষণ করে ধর্ষণের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেসেইসকল সাচ্চা কর্মীদের দিয়ে দুনিয়ার এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা করানো যাবে না।

মগবাজারের সভা শেষ হল। যে যার বাড়ির দিকে বেশ সন্তুষ্ট চিত্তেই পা বাড়াল। এতদিন পর কাজের মতো কাজ পেয়ে তারা যেন নিজেদের ধন্য মনে করল। এভাবেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র এগিয়ে চলল।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭