ইনসাইড পলিটিক্স

ভারতের প্রকাশ্য অবস্থানে হতাশ-লন্ডভন্ড বিএনপি


প্রকাশ: 19/08/2023


Thumbnail

ভারতের পক্ষ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক বার্তা দেয়া হয়েছে। ভারত বলেছে, বাংলাদেশে যদি শেখ হাসিনা সরকারকে দুর্বল করা হয় তাহলে তা সকলের ক্ষতি। বিশেষ করে আঞ্চলিক শান্তি স্থিতিশীলতা রক্ষায় শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। একই সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত জানিয়ে দিয়েছে যে, শেখ হাসিনাকে দুর্বল করলে পুরো বিশ্বই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ এই মুহূর্তে বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন ও জঙ্গিবাদ দমনে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। ভারতের এই বার্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে গ্রহণ করেছে সেটি না জানা গেলেও এটি স্পষ্ট যে ভারতের এই বার্তার ফলে তাদের মনোভাব সুস্পষ্ট হয়েছে। ভারত যে আগামী নির্বাচনে নিশ্চুপ ভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে না—এটা এখন মোটামুটি নিশ্চিত। আর ভারতের এই প্রকাশ্য অবস্থান বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করেছে। ভারতের এই আনুষ্ঠানিক অবস্থানের ফলে বিএনপির মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। বিএনপি যে আন্দোলনের ছক এবং পরিকল্পনা তা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভারতের অবস্থানের প্রকাশ্য সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এভাবে একটি দেশের গণবিচ্ছিন্ন সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া মানে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। বিএনপির আরেকজন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও ভারতের অবস্থানের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে যে সমালোচনাই করা হোক না কেন বিএনপির নেতারা এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন। কারণ তারা জানেন যে এই অঞ্চলে শেষ পর্যন্ত রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে ভারত। ভারত যদি বাংলাদেশে বিএনপিকে ছাড়াই একটি নির্বাচন করতে চায়, তাহলে ভারতের পক্ষে সেটি সম্ভব। আর শেষ পর্যন্ত ভারতের অবস্থানের বাইরে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন কঠোর পদক্ষেপ নেবে কিনা তা নিয়েও তাদের সন্দেহ রয়েছে।

বিএনপি গত এক বছরের বেশি সময় ধরে মার্কিন নির্ভর রাজনীতি করছিল। মার্কিন দূতাবাসের প্রেসক্রিপশন নিয়ে বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছিল। প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বৈঠকও হচ্ছিল। এরকম একটি বাস্তবতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে চাপে ফেলবে এবং শেষ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে বাধ্য করবে—এমন একটি আশা ছিল বিএনপি নেতাদের মধ্যে। এ কারণে তারা উজ্জীবিত হয়েছিল। কিন্তু এখন ভারতের প্রকাশ্য অবস্থানের কারণে বিএনপির পুরো পরিকল্পনা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কারণ বিএনপির সামনে ২০১৩’র অভিজ্ঞতা রয়েছে। ওই সময় বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে ছিল এবং নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল। 

শুধু বিএনপি নয়, জাতীয় পার্টির একটি অংশও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল। সেই সময় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং নিজে বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। আর এই কথা বলার পর শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির একটি অংশকে নির্বাচনে আনতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে দেড়শর বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হলেও, ভারত নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয় এবং ভারতের পথ ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশগুলো নির্বাচন নিয়ে আপত্তি তোলেনি। আর এর ফলে ২০১৪’র ৫ জানুয়ারির নির্বাচন আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পায় এবং ওই সরকার পুরো মেয়াদে দায়িত্ব পালন করে। 

এবার যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে আর ভারত যদি বাংলাদেশের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে সেই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়, সেক্ষেত্রে বিএনপির সামনে আর কোন পথ থাকবে না। বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ডাক আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং সহযোগিতা পাবে না। ফলে বিএনপির জন্য এটি একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ালো। ভারতের সম্মতি এবং ভারতের সহানুভূতি ছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে বড় কোনো প্রভাব রাখা যায় না, সেটি বিএনপি'র চেয়ে আর কে বেশি জানে। এখন দেখার বিষয় ভারতের এই মনোভাবের পর বিএনপির কিভাবে তার রণকৌশল ঠিক করে। 

এখন বিএনপির সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছে। প্রথমত, ভারত বিরোধী কঠোর অবস্থানে গিয়ে ভারতের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানানো। দ্বিতীয়ত, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ভোটের চ্যালেঞ্জে জয়ী হওয়া। বিএনপি কোনটা করবে সেটা দেখার অপেক্ষায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭