ইনসাইড পলিটিক্স

ফুরফুরা এবং আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 19/08/2023


Thumbnail

গতকাল ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ডয়চে ভেলেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ভারতের বার্তার কথা প্রকাশিত হয়েছে। ভারত বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার বার্তা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। শুধু তাই নয়, ভারতের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, শেখ হাসিনাকে দুর্বল করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সকলেই। আর এই বার্তার পর আওয়ামী লীগের মধ্যে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। গত কিছুদিন ধরেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের নার্ভাসনেস কাজ করছিল। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি, একের পর এক বিভিন্ন শর্ত আরোপের ফলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। 

তারা মনে করছিলেন, শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে প্রভাব বিস্তার করছে, তাতে আগামী নির্বাচন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে কিনা; তারপরও নির্বাচনে যদি বিএনপি না আসে, সে নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কিনা- সর্বোপরি এই ধরনের নির্বাচনের পর কী প্রতিক্রিয়া হবে? 

সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব দৃশ্যমান ছিল। নাইজেরিয়ায় নির্বাচনের পর সে দেশের ৬শ’র বেশি কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদদের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। একইভাবে কম্বোডিয়ার নির্বাচনের পরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেছিল। এ রকম বাস্তবতায় বাংলাদেশে কি হবে?- এ নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেকের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। আওয়ামী লীগের বাইরেও প্রশাসনের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি চোখে পড়ার মতো ছিল। বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। এরকম একটি পরিস্থিতির মধ্যেই ভারত বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কি ভাবছে? -এটি নিয়ে অনেকের মধ্যে নানামুখী আলোচনা হয়েছিল। অনেকেই মনে করছিল, ভারত শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতমুখী অবস্থান নেবে না। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিলেমিশেই কাজ করবে। অনেকেই মনে করেছেন, ভারত নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকবে। পুরো বিষয়টা দর্শকের মত দেখবে। 

কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারত তার অবস্থান পরিষ্কার করলো। আর ভারতের এই অবস্থান পরিষ্কার সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষেই যায়। আর এতেই আওয়ামী লীগের নেতারা উল্লসিত। ভারতের এরকম প্রকাশ্য অবস্থানের ফলে আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সঙ্কট, তা অনেকটাই কেটে গেল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিশেষ করে এর ফলে নির্বাচন বানচালের যে প্রচেষ্টা, সেটা ব্যহত হবে। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের বিরোধিতা করলেও বা আগামী নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দাবি করলেও সেটি হালে পানি পাবে না। আর অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই মনে করছেন, ভারতের এই প্রকাশ্য অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত কিছুটা হলেও নমনীয় হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বাংলাদেশের উপর থেকে কমবে। 

বিভিন্ন মহল মনে করছেন, ভারত বাংলাদেশে যেমন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়, তেমনি বাংলাদেশে এখনো অসম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তি যেন ক্ষমতায় না আসে, সেটাও নিশ্চিত করতে চায়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, একটি জাতীয় নির্বাচনে যে কোনো দল অংশগ্রহণ করতে পারে, যে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন থেকে দূরেও থাকতে পারে- এটি ওই দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এই বার্তাটি আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে উজ্জীবনী বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনে করছেন, এর ফলে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়বে এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে সংশয় কেটে কেটে যাবে। 

এর ফলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। বাস্তবেও হয়েছে তাই। গত কালকের আনন্দবাজার এবং ডয়চে ভেলেতে ভারতের অবস্থানের বার্তাটি প্রকাশিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ শিবিরের চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের এই চাঞ্চল্য শেষ পর্যন্ত নির্বাচন পর্যন্ত অটুট থাকে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭