সোশ্যাল থট

যতীন সরকার বলেছেন, ‘নাস্তিকতা মুরতাবাদ!’


প্রকাশ: 20/08/2023


Thumbnail

সম্প্রতি প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকাকে একটি ভিডিও ইন্টারভিউ দিয়েছেন অধ্যাপক যতীন সরকার। সেই ভিডিও ইন্টারভিউয়ের প্রতিক্রিয়ায় নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন তার ‘সুষুপ্ত পাঠক’ নামক ফেসবুক পেইজে অধ্যাপন যতীন সরকারের ইন্টারভিউয়ে বলা বক্তব্য নিয়ে লিখেছেন নিজের মন্তব্য। অধ্যাপক যতীন সরকারকে নিয়ে তসলিমা নাসরিনের লেখাটি হুবহু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। 

‘সুষুপ্ত পাঠক’ -পেইজে তসলিমা নাসরিনের লেখা: 

লেখক অধ্যাপক মার্কসবাদী যতীন সরকার ‘প্রতিদিনের বাংলাদেশ’ পত্রিকায় ভিডিও ইন্টারভিউতে বলেছেন, নাস্তিকতা মুরতাবাদ!... ইসলামের জন্ম না হলে পৃথিবী এক হাজার বছর পিছিয়ে থাকতো...

যতীন সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি করা প্রগতিশীল মানুষদের সংখ্যা অনেক। আমার মধ্যে কোন ভক্তি শ্রদ্ধা নেই। ফলে যত বড় মানুষ হোন তাকে সমালোচনা করতে আমার দ্বিধা হয় না। ব্লগার কিলিংয়ের সময় ইস্টিশন ব্লগে যতীন সরকারের একটি ইন্টারভিউ বের হয়েছিলো, সেখানেও তিনি ‘নাস্তিকতার আস্ফলন’ বলে ব্লগারদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছিলেন। তখন তাকে ‘বুড়ো মানুষ’ বলে অনেকে এড়িয়ে যেতে বলেছিলেন। যতীন সরকার পাকিস্তান শাসনের বিরুদ্ধে বলা ও মার্কিসবাদ প্রচার ছাড়া তাদের চিন্তা চেতনা এই সমাজে একজন মানুষকেও ভাবতে সাহায্য করেনি। যিনি মনে করেন ইসলামের জন্ম হয়েছিলো বলে পৃথিবী এক হাজার বছর এগিয়ে গেছে, নাস্তিকতা বর্জনীয়- তিনি কট্টর মৌলবাদীদের কাছে কতখানি সন্মান পাবেন ভেবে দেখুন। এখন হুমুয়ূন আজাদকে রেখে কি তাকে কেউ কোপাতে আসবে? তসলিমা নাসরিন দেশ ছাড়বে না তো কি যতীন সরকার দেশ ছাড়বে? ব্লগাররা মরবে নাকি যতীন সরকার মরবে?

'প্রতিদিনের বাংলাদেশ' পত্রিকা ইসলামের প্রগতীশীল ভূমিকা নিয়ে তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, ইসলাম নিয়ে তিনি অনেক পড়েছেন।... যদিও তিনি এক জায়গায় স্বীকার করেছেন তিনি ধর্মকে জেনেছেন মার্কসবাদ পড়ে! তিনি যে ইসলাম পড়েননি সেটা স্পষ্ট। ইসলাম জানতে হলে মাদ্রাসায় হায়ার ক্লাশে যেভাবে পড়ানো হয় সেভাবে জানতে হয়। যতীন খুড়ো সেভাবে পড়েননি তাতে কোন সন্দেহ নেই। যাই হোক, তিনি বলছেন খ্রিস্টান ধর্মের ক্যাথলিকরা গ্রীক জ্ঞান-বিজ্ঞানকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করেছে। আর মুসলমানরা সেই গ্রীক জ্ঞানবিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এটা পুরোপুরি মিথ্যাচার ছিলো যতীন খুড়োর! কেন? বাগদাদের ‘মুতাজিলাদের’ ঠিক একইভাবে ইসলামের মোল্লাতন্ত্র হত্যা করেছে। দেশান্তরিন করেছে। কারাগারে আমৃত্যু বন্দি করে রেখেছে তখনকার বিজ্ঞানী দার্শনিকদের। কেন? কারণ গ্রীক জ্ঞানবিজ্ঞানের সঙ্গে ইসলামের সাংঘর্ষিকতা দেখতে পেয়েছে ইমাম গাজ্জালির মত আলেমরা। ইবনে সিনা, আল বেরুণীরা কাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতেন? যতীন খুড়ো সেটা বেমালুম ভুলে গেলেন নাকি গোপন করলেন?

নাস্তিকতা নিয়ে তার মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিলেট থেকে ‘যুক্তি’ নামের একটা পত্রিকা বের হতো। এক লোক তার কাছে লেখা চাইলে তিনি ‘নাস্তিকতা মুরতাবাদ’ লেখাটা দেন। সম্পাদক লেখার শিরোনামটা বদলের অনুরোধ করলে তিনি অনড় থাকেন... বলে হা হা হা করে হাসেন যতীন সরকার। কেন, উনি কি জানেন না সেই সম্পাদকটি অনন্ত বিজয় দাস? যাকে কুপিয়ে খুন করেছে খুড়ো যাদের জন্ম না হলে পৃথিবী এক হাজার বছর পিছিয়ে যেতো বলে দাবী করেছেন! পত্রিকার নাম যুক্তি মনে আছে কিন্তু অনন্ত বিজয় দাসের নাম মনে নেই? অনন্ত বিজয় দাস এদেশের বুদ্ধির মুক্তির জন্য প্রাণ দিয়েছেন। মার্কসবাদী যতীন খুড়োদের কাছে তিনি চক্ষুশূল হবেনই। তাই অবাক হইনি। আমার রাগ বা বিরক্তি আসলে বিজয়দের উপরই! বেঁচে থাকতে তিনি এই মার্কসবাদী যতীন সরকারদের মনে করতেন চিন্তা ভাবনায় সমগোত্র! অভিজিত রায়ও তাই। 'মুসলিম লীগ নাস্তিকদের' সঙ্গে গলায় গলায় মিলতেন। অভিজিত মারা যাবার পর তার ব্লগের মুসলিম লীগ নাস্তিকরা তাদের আসল চেহারা দেখিয়ে দিয়েছে। আমার চাইতে সেটা কে আর বেশি জানে?

যতীন সরকার কোন মুক্তচিন্তার লেখক নন। তিনি এদেশে চিরদিন নিরাপদে লেখালেখি করে গেছেন। তার সময়ে তিনি সন্তুষ্ঠ ছিলেন। তার লেখায় একটি কিশোর কিশোরীও তাদের পঁচাগলা চিন্তা বিশ্বাস ধারণা থেকে বের হবার কোন পথ পাবে না। তিনি একজন সাধারণ লেখক। তাকে নিয়ে আমার আর কোন ভাবনা নেই।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭