ইনসাইড থট

২১ আগস্ট দার্শনিক শেখ হাসিনার দর্শন হত্যার চেষ্টা করেছিল ষড়যন্ত্রকারীরা


প্রকাশ: 21/08/2023


Thumbnail

১৫ আগস্ট এবং ২১ আগস্টের মধ্যে আসলে কোন মৌলিক পার্থক্য নেই। এটি এখন প্রমাণিত যে দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা মিলে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল এবং তার কোন নিকটাত্মীয়রা যাতে এর প্রতিবাদ করতে না পারে সেজন্য তাদেরকেও হত্যা করা হয়েছিল। শুধুমাত্র শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে যায়। আজ ২১ আগস্ট। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মদদে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার উপরে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঠিক যে কারণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল, সেই একই কারণে এবং একইভাবে ২১ আগস্টেও দার্শনিক শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রচেষ্টা করা হয়।

১৯৭৫ সালের পর আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল এমন পর্যায়ে যায় যা থেকে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনা দলের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আসেন। যারা শেখ হাসিনাকে সভাপতি করেছিলেন তাদের ভেতরও ভিন্ন মত ছিল। কিছু লোক মনে প্রাণে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা দলে দায়িত্ব গ্রহণ করুক এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু যারা বড় মাপের নেতা তারা অনেকেই চেয়েছিল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে একটি পুতুল হিসেবে সাজিয়ে রাখতে। এছাড়া সামরিক শাসক ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি তার দেশে ফেরার পথ রুদ্ধ করে রেখেছিল। পদে পদে ছিল হুমকি আর বিপদের হাতছানি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো তিনিও সৎসাহসী। এসব কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন বাংলাদেশকে নতুন করে জেগে ওঠায় অনুপ্রাণিত করতে। মানুষের মধ্যে সত্যিকারের দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে।

যারা নেত্রী শেখ হাসিনাকে কেবল নামমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি বানিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন, ভেবেছিলেন তাকে নিজেদের মত করে চালাবেন তারা হয়ত একটা জিনিস ভুলে গেছেন যে, স্কুলজীবনেই রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। ১৯৬২-তে স্কুলের ছাত্রী হয়েও আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। আজিমপুর গার্লস স্কুল থেকে তাঁর নেতৃত্বে মিছিল গিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, স্কুলের ছাত্রী হিসেবে সরাসরি তখনকার একটি রাজনৈতিক সভায় যোগ দেওয়া শুধু তাঁর সাহসিকতাই নয়, তাঁর রাজনৈতিক সচেতনতারও পরিচয় বহন করে। সেই সময়ের কথা চিন্তা করলে এটি অত্যন্ত কঠিন কাজ ছিল। তারা ভুলে যায় যে, যখন মেয়েদের মধ্যে ছাত্রলীগ ছিল না বললেই চলে তখন শেখ হাসিনা গভর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে (বর্তমানে বদরুননেসা সরকারি মহিলা কলেজ) অধ্যয়নকালে ১৯৬৬-৬৭ শিক্ষাবর্ষে কলেজ ইউনিয়নের সহসভাপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন ওবং শতকরা প্রায় ৭৩ শতাংশ ভোটে তিনি নির্বাচিত হন। সেই সময় মোনায়েম খান পাবলিকলি বললেন যে, শেখ মুজিবের মেয়ে যদি নির্বাচনে বিজয়ী হয় তাহলে এটা ছয় দফার জন্য ম্যান্ডেট হয়ে যাবে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে স্বাভবিকভাবেই তাঁর পিতার কাছ থেকে রাজনীতি শিখেছেন। ইচ্ছা না থাকলেও শিখেছেন। কারণ পরিবেশটাই ছিল একটি রাজনীতির কারখানা। তার মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবও ছিলেন অত্যন্ত রাজনীতিক-সচেতন। এ কারণেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করেই তিনি ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসলেন এবং একটি রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে এগোতে থাকলেন। তার মূল দর্শন ছিল কিভাবে দেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করা যায়।

দার্শনিক শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরে আসেন তখন দেশে কারফিউ চলছিল। তিনি এই কারফিউ তুলে নিতে বাধ্য করলেন। শেখ হাসিনা ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত দীর্ঘ লড়াই করেছেন সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে, নিজদেশি দানব থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্য। বাংলার মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার আদায় করার জন্য। ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে দার্শনিক শেখ হাসিনা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়তে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে যখন বিএনপি নির্বাচিত হলে তারা সেই অগ্রগতির ধারাকে শেষ করে দেয় এবং দার্শনিক শেখ হাসিনাকেও পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র করে যাতে বাংলাদেশ আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। তারা খুব পরিকল্পিতভাবে শেখ হাসিনাকে হত্যার নীলনকশা তৈরি করে। কিন্তু ২০০৪ সালেই সেই ২১ আগস্ট আল্লাহ যেন তাকে নিজস্ব চাদর দিয়ে ঢেকে তাকে রক্ষা করলেন।

১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে একজন ব্যক্তি হিসেবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল একটি দেশের স্বাধীনতাকে, হত্যা করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর দর্শনকে। ঠিক একইভাবে ২১ আগস্ট দার্শনিক শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রচেষ্টাও হয়েছিল সেই একই কারণে। কিন্তু তাদের যড়যন্ত সফল হয়নি। সেইদিন আল্লাহ শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়েছিলেন তার নিশ্চয়ই একটি উদ্দেশ্য আছে। বাংলাদেশকে যেন আর পিছনে ফিরে তকাতে না হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন করা এই বাংলাদেশ যেন অদম্য গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

সেদিন আমরা আমাদের কাছের অনেককে হারিয়েছি। গ্রেনেডের আঘাতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ মোট ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান। কিন্তু সেই শোককে আমরা শক্তিতে পরিণত করতে পেরেছি। নেত্রীকে যে আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন, তার নেতৃত্বকে গ্রহণ করে দেশ গড়ার সংগ্রামে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ ১০০ বছরে এই রকম দার্শনিক আমরা পাবো না। এই কারণে আমরা চাই আল্লাহ তাকে দীর্ঘজীবী করুক এবং আল্লাহ তাকে শান্তির সাথে রাখুক এবং আমাদের দেশ পরিচালনায় তিনিই যেনো থাকেন। যাতে করে তিনি আমাদেরকে আরও সেবা দিয়ে যেতে পারেন, দেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭