কোর্ট ইনসাইড

আইডিয়ালের সীমানায় ঢুকতে পারবেন না মুশতাক: আদালত


প্রকাশ: 21/08/2023


Thumbnail

ধর্ষণ মামলায় রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে স্কুলের ত্রিসীমানায় যেতে নিষেধ করেছেন চেম্বার আদালত।

সোমবার (২১ আগস্ট) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম খন্দকার মুশতাক আহমেদের জামিন বহাল রেখে এ আদেশ দেন। অন্য শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সে কারণে এ আদেশ দেন আদালত। সেই সঙ্গে গভর্নিং বডির কোন কাজেও অংশ নিতে পারবেন না তিনি।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

এর আগে রোববার (২০ আগস্ট) খন্দকার মুশতাক আহমেদকে বিয়ে করা আইডিয়ালের শিক্ষার্থী সিনথিয়াকে তার বাবার জিম্মায় দিতে হাইকোর্টের রিট দায়ের করেন মেয়েটির বাবা।

ছাত্রীকে বিয়ে করা বহিষ্কৃত গভর্নিং বডির সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আপিল বিভাগ। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন রোববার।

বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট ধর্ষণ মামলায় মুশতাককে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেয়। এ জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আবেদনের পক্ষে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন বলেন, স্কুল গভর্নিং বডির একজন সদস্য মুশতাক ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন। এই সদস্য যদি স্কুলে যাতায়াত করেন তাহলে সে ভবিষ্যতে আরও ছাত্রীদের ক্ষতি করতে পারেন। এ জন্য সে যাতে স্কুলে প্রবেশ করতে না পারে এ বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ করা উচিত।

এরপরই আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি স্কুলের ত্রিসীমানায় যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

খন্দকার মুশতাক গভর্নিং বডির সদস্য থাকাকালে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ে করেন। এই বিয়ে নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। খোদ রাষ্ট্র পক্ষের কৌসুলিরা হাইকোর্টে বলেন, খন্দকার মুশতাক রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করেছেন। এভাবে কোনো ছাত্রী ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপদ নয়। এমনকি হাইকোর্ট বলেন, এটা বিকৃত রুচির বিয়ে।

গত ১৭ আগস্ট মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির দাতা সদস্য ৬০ বছর বয়সী খন্দকার মুশতাক আহমেদকে বিয়ে করা আইডিয়ালের ছাত্রীকে নিরাপদ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে অভিযুক্ত মুশতাককে আগাম জামিন দেন আদালত।

বিচারপতি শেখ জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালত বলেছেন, আইডিয়ালের ছাত্রীর বয়স নিয়ে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তাই ভিকটিমের বয়স নির্ধারণ করা জরুরি। বয়স নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত ভিকটিম ছাত্রী নারী ও সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অধীনে সেইফ হোমে (নিরাপদ হেফাজতে) থাকবে।

তবে ছাত্রীকে প্রলোভন ও ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় খন্দকার মুশতাক আহমেদকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরে মুস্তাকের জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

এর আগে হাইকোর্ট আসামি খন্দকার মুশতাক আহমেদ, আইডিয়ালের ছাত্রী ও তার বাবার বক্তব্য শোনেন।

এর আগে ১৬ আগস্ট বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান এবং বিচারপতি খন্দকার দীলিরুজ্জামান এর হাইকোর্ট বেঞ্চ খন্দকার মুশতাক আহমেদের আগাম জামিন আবেদন শুনতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

শুনানিতে হাইকোর্ট মুশতাককে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি বিবাহিত? উত্তরে মুশতাক বলেন, হ্যাঁ, তবে সেই সংসার অনেক আগেই ভেঙে গেছে। আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। এ সময় হাইকোর্ট বলেন, ছাত্রীকে বিয়ে করে নৈতিকতা ভেঙেছেন আপনি।

গত ১ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীনের আদালতে খন্দকার মুশতাক আহমেদকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় আইডিয়ালের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকেও আসামি করা হয়। ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রীর বাবা মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন।

আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন। 

মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, তার মেয়ে (ভুক্তভোগী) মতিঝিল আইডিয়ালের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আসামি মুশতাক বিভিন্ন অজুহাতে কলেজে আসতেন এবং ওই ছাত্রীকে ক্লাস থেকে অধ্যক্ষের কক্ষে ডেকে আনতেন। খোঁজ-খবর নেওয়ার নামে আসামি তাকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করতেন।

কিছুদিন পর আসামি মুশতাক ওই ছাত্রীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় ভুক্তভোগীকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করেন। পরে ভুক্তভোগী ও তার পরিবারকে ঢাকা ছাড়া করবে বলে হুমকি দেন। মুশতাকের এ ধরনের আচরণের বিষয়ে আইডিয়াল অধ্যক্ষকে (২ নম্বর আসামি) ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন ভুক্তভোগী। তবে তিনি (অধ্যক্ষ) ব্যবস্থা করছি বলে আসামি মুশতাককে তার রুমে নিয়ে আসেন। সেসময় ভুক্তভোগীকেও ক্লাস থেকে নিয়ে এসে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে মুশতাককে সময় ও সঙ্গ দিতে বলেন।

এ বিষয়ে বাদী কলেজের অধ্যক্ষের কাছে প্রতিকার চাইতে গেলেও কোনো সহযোগিতা করেননি। বরং আসামি মুশতাককে অনৈতিক কাজে সাহায্য করে আসতে থাকেন। বাদী উপায় না পেয়ে গত ১২ জুন তার মেয়েকে ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে আসামি মুশতাক তার লোকজন দিয়ে তার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যান। এরপর বাদী জানতে পারেন মুশতাক ভুক্তভোগীকে একেক দিন একেক স্থানে রেখে অনৈতিক কাজে বাধ্য করেছেন এবং যৌন নিপীড়ন করেছেন।

পরে সোমবার (১৪ আগস্ট) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ মামলায় আগাম জামিন চান মতিঝিল আইডিয়ালের অধ্যক্ষ ফৌজিয়া রশিদ। ঐদিনই শুনানি শেষে তাকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দেন আদালত।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭