ইনসাইড পলিটিক্স

যেভাবে 'র‌' কে ধোঁকা দিয়েছিল আইএসআইয়ের এজেন্ট ‘তারেক’


প্রকাশ: 21/08/2023


Thumbnail

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট জয়ী হয়েছিল। এই জয়ের পিছনে ভারতের ভূমিকা ছিল। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা 'র‌' এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা এবং মদদে বিএনপির ক্ষমতায় আসার পথ সহজ হয়েছিল। ২০০১ এর নির্বাচনের আগে ভারতে গিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক জিয়া। তার সঙ্গে গিয়েছিল বিএনপির উচ্চপদস্থ দুজন নেতা। তারা সেখানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল 'র‌' এর চীফ।

নানা কারণেই সেসময় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর অসন্তুষ্ট ছিল। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে না গিয়ে গ্যাস রপ্তানি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। সে সময় বাংলাদেশ থেকে গ্যাস নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল ভারতের দুটি কোম্পানি। সে কোম্পানিগুলোর আংশিক মালিকানা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। আর এ সময় তারেক জিয়াকে প্রস্তাব দেয়া হয় ভারতের 'র‌' এর পক্ষ থেকে যে, বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে তারা ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করবে কিনা। পাশাপশি সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা বন্ধ সহ নানা বিষয় তারেক জিয়ার কাছ থেকে সুনিদিষ্ট আশ্বাস চেয়ছিল 'র‌'। 

'র‌' এর প্রধানের সাথে বৈঠকটি ছিল দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে। যে বৈঠকে বিএনপির নেতা তারেক জিয়া সব কিছুতেই ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছিলেন এবং সব শর্তেই তিনি সম্মতি জানিয়েছিলেন। আর সে কারণেই 'র‌' এর পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছিল। আর এর ফলে নির্বাচনের মাঠ সাজানো হয়েছিল এমন ভাবে যেন আওয়ামী লীগের পরাজয় অবধারিত হয়। কিন্তু তিন বছর পেরোতে না পেরোতেই 'র‌' এর মোহ ভঙ্গ ঘটে। ইসলামাবাদের 'র‌' এজেন্টরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে থাকে যে তারেক জিয়া আসলে আইএসআইয়ের এজেন্ট। তিনি 'র‌' কে ধোঁকা দিয়েছেন।

প্রথমে 'র‌' এর কর্মকর্তারা এ রকম তথ্য বিশ্বাস করেন নাই। তবে আস্তে আস্তে তারাও এ ব্যাপারে অনুসন্ধান এবং তদন্ত করে। তাদের অনুসন্ধান এবং তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেখা যায় যে, তারেক জিয়ার সঙ্গে আইএসআইয়ের সম্পর্ক আরও আগে থেকে। ১৯৯৮ সালে আইএসআইয়ের সাথে তারেক জিয়ার প্রথম যোগাযোগ হয়। এরপর ২০০০ সালে দুবাইতে আইএসআইয়ের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তির সাথে তারেক জিয়ার সাক্ষাৎ হয়। সেই সাক্ষাতে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং তারেক জিয়ার করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সে সময় থেকেই তারেক মূলত আইএসআইয়ের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর থেকে একে একে প্রকাশ হতে থাকে। 'র‌' এর কাছে মুচলেকা দেয়ার পরও তারেক জিয়া আইএসআইয়ের শর্ত অনুযায়ী কাজ শুরু করেন। তিনি বাংলাদেশকে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দেন। এর মধ্যে ১০ ট্র্যাক অস্ত্রের ঘটনাটি একমাত্র ঘটনা ছিল যেটি একজন পুলিশ কর্মকর্তার দক্ষতার কারণে উন্মেচিত হয়। এর বাইরেও বহু অস্ত্র বাংলাদেশকে করিডর হিসেবে ব্যবহার করে ভারতে গেছে বলে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত হয়। 

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় আবার প্রমাণিত হয়েছিল তারেক জিয়ার সঙ্গে সরাসরি ভাবে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা এর সম্পর্ক রয়েছে। শুধু পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন নয়, আরও বেশ কিছু জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গেও তারেকের সম্পর্ক রয়েছে। এবং এই সময় আইএসআইয়ের সঙ্গে তারেক জিয়ার সম্পর্ক আর কোন গোপন বিষয় থাকেনি, এটি প্রকাশ্য হয়ে যায়। তখন মোহ ভঙ্গ ঘটে 'র‌' এর।

পৃথিবীতে যে কয়েকটি বিষয়ে 'র‌' বড় ধরনের ধোঁকা খেয়েছিল আইএসআইয়ের কাছে, তার মধ্যে একটি হলো তারেক জিয়াকে নির্বাচন করা এবং তারেক জিয়াকে বিশ্বাস করা। একজন আইএসআইয়ের এজেন্ট এর ওপর 'র‌' নির্ভর করেছিল। এটি 'র‌' এর জন্য একটি সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। 'র‌' এর সে সময়কার প্রধান এ নিয়ে একটি বই লিখেছেন যে বইটি খুব শিগগির প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭