ইনসাইড পলিটিক্স

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আক্রান্তরা সুদিনে কি পেলেন?


প্রকাশ: 21/08/2023


Thumbnail

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আজ এক স্মরণসভার আয়োজন করে। ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে  যেখানে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল সেখানে মঞ্চ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি গ্রেনেড হামলার সময় যারা আহত ছিল, মঞ্চের সামনে যারা উপবিষ্ট তাদের অনেকের কথাই স্মরণ করেন। বিশেষ করে গ্রেনেড হামলার পরে তিনি জাহাঙ্গীর কবির নানক সহ আরও কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে যে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা যারা আক্রান্ত হয়েছিল, যারা জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছিল, ওই সময় যারা অসীম সাহসিকতার সঙ্গে আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়ার জন্য চেষ্টা করেছিল, যাদের রাজনীতিতে এরপর আর কোন বিপর্যয় নাই, কোন আপস নাই, কোন রকমের বিভ্রম নাই তারা গত ১৫ বছরে কি পেয়েছেন? 

আওয়ামী লীগের রাজনীতি হিসেব-নিকেশ করে দেখা যায় যে, ২১ আগস্টের আক্রান্তরা বা ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যারা বিএনপি-জামাত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, নানা রকম ভাবে নির্যাতন-নিপীড়িত হয়েছে তারা কিছুই পায়নি। বরং ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগের যারা জাকিয়ে বসেছে, যারা বিভিন্নভাবে অনুপ্রবেশ করেছে তারাই এখন আওয়ামী লীগের হর্তাকর্তা সেজেছে, তারাই এখন আওয়ামী লীগের বড় বড় পদ এবং মন্ত্রিত্ব দখল করে আছে। 

প্রধানমন্ত্রী নিজেই আজকের বক্তৃতায় জাহাঙ্গীর কবির নানকের কথা বলেছেন। জাহাঙ্গীর কবির নানক ২০০৯ সালে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ব্যাস, এটুকুই। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, যুবলীগের চেয়ারম্যান এবং দীর্ঘ পঁচাত্তর-পরবর্তী থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে আদর্শিক রাজনৈতিক চর্চা করার পর গত ১৫ বছরে তিনি পেয়েছেন প্রতিমন্ত্রী আর দুবার এমপি। আর গত নির্বাচনে তাকে এমপি থেকে বিদায় করা হয়েছে। এবারও তিনি এমপি পদের জন্য মনোনয়ন পাবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। 

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে কাজী জাফরউল্লাহর নাম বলেছেন ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা প্রসঙ্গে। কাজী জাফরউল্লাহ আরও ভাগ্যাহত। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আছেন বটে গত ১৫ বছরে তিনি মন্ত্রীও হতে 

পারেননি। অথচ এই সময়ের মধ্যে বহু অযোগ্য অথর্ব ব্যক্তিরাও মন্ত্রী হয়েছেন। কাজী জাফরউল্লাহর রাজনৈতিক জীবনে কোনো রকম ব্যতয় নাই, কোন রকম আপসকামিতা নেই। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি কোন দিন সমঝোতা করেননি। সেই কাজী জাফরউল্লাহ তার নির্বাচনী এলাকাতেও এখন প্রায় উদ্বাস্তু। এছাড়াও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় আহতদের অনেকেই এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, যারা আসলে কিছুই পাননি।

২০০৪ সালের ২১আগস্টে সমাবেশের গ্রেনেড হামলায় মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছিলেন মাহবুবা পারভীন। ওই সময় তিনি ছিলেন ঢাকা জেলা বৃহত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক। গ্রেনেড হামলায় ক্ষত তিনি আজও রয়ে বেড়াচ্ছেন। এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি প্রায় অনাহুত। শেখ হাসিনা তার খোঁজ নেন। কিন্তু দলে তিনি কোনো বড় পদ-পদবী পাননি। এমনকি মহিলা এমপিও হতে পারেনি। মহিলা এমপি বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা লাভ করছে হাইব্রিডরা যাদের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই ছিলনা। 


ছেলের ছবি হাতে বিচারের অপক্ষোয় বৃদ্ধ মোতালেব মৃধা ও মোরশেদা বেগম। ফাইল ছবি

একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় একমাত্র ছেলে মামুন মৃধাকে হারিয়েছেন মোতালেব মৃধা এবং মোরশেদা বেগম দম্পতি। সেই মামুন মৃধার পরিবার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেলেও রাজনৈতিকভাবে গত ১৫ বছরে কোন সুবিধাই করতে পারেননি। এখন আইন পেশা সঙ্গে যুক্ত শাহানারা ইয়াসমিন ২১ আগস্ট আহত হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। মহিলা এমপি বা মন্ত্রী বা অন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন যারা ২১ আগস্ট বা ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে রাজনীতির মধ্যেও ছিলেন না।

বাহাউদ্দিন নাছিম কিংবা ড. আওলাল হোসেন মত পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদরা ২১ আগস্টে আহত হয়েছিলেন। সেই সময় দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছিলেন। আজকে তারা কি পেলেন? তাহলে কি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এটাই বাস্তবতা। যারা দুঃসময়ে মার খাবে, তারা সুসময়ে সাইড লাইনে বসে থাকবে। সুসময় আসবে অতিথি পাখিরা, তারাই সবকিছুর চেটেপুটে খাবে! 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭