ইনসাইড পলিটিক্স

তারেক নেতৃত্বে থাকলে বিএনপির সাথে কোনো আলোচনা করবে না ভারত


প্রকাশ: 22/08/2023


Thumbnail

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারত এখন তৎপর হয়েছে। ভারত একদিকে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বলছে, একটা সমঝোতার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করছে। কোনো কোনো নেতাকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে, সেখানে বৈঠক হচ্ছে। বাংলাদেশেও একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভারতের কূটনীতিকদের বৈঠকের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধীদল বিএনপির সঙ্গে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠকের কথা শোনা যায়নি। 

বিএনপির কোনো নেতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দিল্লি সফরের জন্য আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ এবং আবদুল মঈন খানের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক মহলের কিছু কিছু যোগাযোগ হচ্ছে। তবে সেই যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে। 

একাধিক সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে জানিয়েছে যে, ভারতের পক্ষ থেকে বিএনপিকে পরিষ্কার বার্তা দেয়া হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে যে ভারতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করতে গেলে বিএনপিকে প্রথমে তারেককে নেতৃত্ব থেকে বাদ দিতে হবে। তারেক নেতৃত্বে থাকলে বিএনপির সঙ্গে কোনো রকম সংলাপ বা সমঝোতায় যেতে রাজি নয় ভারত। বিএনপির একাধিক নেতা ভারতের এই মনোভাবের কথা স্বীকার করেছেন। 

ভারত আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থানের কথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জানায়। এ বিষয়টি ভারতের প্রভাবশালী একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবার পর এ নিয়ে হৈচৈ শুরু হয়। প্রথমে কয়েকজন নেতা ভারতের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে ভারতকে আধিপত্যবাদ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপির কয়েকজন নেতা এই সমালোচনার লাগাম টেনে ধরতে সক্ষম হন। তারা বরং ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার বার্তা নতুন করে প্রচার শুরু করেন। কিন্তু তাদের এই বার্তা ভারতকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। 

ড. আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা বিজেপির আমন্ত্রণে ভারত সফর করে। এই সফরের পর এখন জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের ভারত সফর করছেন। এ কারণেই বিএনপির নেতারা মনে করছেন এরপরে হয়ত তারাও আমন্ত্রণ পাবেন। কিন্তু একাধিক কূটনৈতিক সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে আপাতত বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না। 

একটি প্রধান রাজনৈতিক দলকে কেন আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না—এরকম একটি জিজ্ঞাসার উত্তরে বিভিন্ন মহল মনে করছেন তারেক জিয়ার বিষয়। তারেক জিয়া একজন দণ্ডিত আসামী। যেকোনো দেশের রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একজন দণ্ডিত ব্যক্তি রাজনৈতিক দলের নেতা হতে পারে না। কিন্তু বিএনপির গঠনতন্ত্রের ১১ এর (গ) সংশোধন করে তারেক জিয়াকে এখনো বিএনপির প্রধান নেতা হিসেবে রেখেছেন। এটি একটি রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না বলে ভারত মনে করে। তবে এই আনুষ্ঠানিক কারণে বাইরে অনেক অন্য কারণ রয়েছে ভারতের নেতিবাচক অবস্থানের জন্য। 

বিভিন্ন মহল মনে করছেন যে, তারেক জিয়াকে ভারতে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের এজেন্ট মনে করে। তারেক জিয়ার সঙ্গে ভারতীয় বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন গুলোর প্রকাশ্য ও গোপন যোগাযোগ রয়েছে এমন তথ্য প্রমাণও ভারতের হাতে রয়েছে। তাছাড়া ভারত মনে করে যে, তারেক জিয়া একজন দুর্বৃত্ত এবং সন্ত্রাসীদের মদদ দাতা।

২০০১ সালে ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় এসেছিল। সেই সময় তারেক জিয়া ভারত সফর করেছিলেন এবং সেখানে তিনি গোয়েন্দা সংস্থা 'র' এর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং বিভিন্ন থিঙ্কট্যাঙ্কদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তাদেরকে তারেক আশ্বস্ত করেছিলেন যে, তিনি ক্ষমতায় এলে ভারতের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসার পর তারেক জিয়ার প্ররোচনায় বাংলাদেশ ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের স্বর্গ ভূমিতে পরিণত হয়েছিল। ১০ ট্র্যাক অস্ত্রের ঘটনা যার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এছাড়া এই সময়ে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সাথে তারেক জিয়ার যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। আর এ কারণেই ভারত মনে করে যে, এই অঞ্চলের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্য  তারেক জিয়া একটা হুমকি। এ অঞ্চলকে জঙ্গিবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদ মুক্ত করার জন্য তারেক জিয়া একটা বড় বাধা। আর সে কারণেই তারেক জিয়া যতদিন বিএনপির নেতৃত্বে থাকবে ততদিন ভারত বিএনপির সঙ্গে কোনো সমঝোতায় যাবে না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭