এডিটর’স মাইন্ড

বাংলাদেশ নিয়ে পাঁচ বিষয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ঐক্যমত


প্রকাশ: 22/08/2023


Thumbnail

বাংলাদেশ নিয়ে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র এখন দৃশ্যত মুখোমুখি অবস্থানে। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং এই নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নানামুখী চাপ প্রয়োগ করছে ঠিক সেখানে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থান গ্রহণ করেছে ভারত। ভারত বলেছে, এই নির্বাচন বাংলাদেশের একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়। নির্বাচনে যেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা রক্ষা হয় সেটি যেমন দেখতে হবে তেমনি এই অঞ্চলের শান্তি এবং স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে শেখ হাসিনার সরকারকে দুর্বল করা যাবে না। কিন্তু বাইরে দুই প্রভাবশালী দেশের এই বৈপরীত্য থাকলেও ভেতরে দেশ দুটি বাংলাদেশ নিয়ে কতগুলো মৌলিক বিষয়ে একমত হয়েছে বলে জানা গেছে। 

গত কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে। এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করে জো বাইডেনের সাথে একান্ত বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। এছাড়াও দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। এসব আলোচনায় তারা দুই দেশের স্বার্থ এবং আঞ্চলিক স্বার্থের বিষয়গুলোকে সামনে তুলে ধরতে ধরছেন। এক্ষেত্রে তাদের পাঁচটি ঐক্যমতের জায়গায় নির্ধারিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে; 

১. যেকোনো প্রকারে চীন বলয়ে বাংলাদেশকে ঢুকতে দেওয়া যাবেনা: ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই মনে করে বাংলাদেশকে কোন অবস্থাতেই চীনের বলয়ে ঢুকে দেওয়া যাবেনা। বাংলাদেশ যেন চীনের বলে না যায় এজন্য দুই দেশ কাজ করবে। এক্ষেত্রে ভারত মনে করে যে সরকারের ওপর অব্যাহত চাপ প্রয়োগ করলে অর্থনৈতিক কারণে এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। আর এ কারণেই ভারত মনে করছে যে সরকারের স্থিতিশীলতা দরকার এবং দরকার উন্নয়নের ধারাবাহিকতাও। তাহলে চীনের বলয় থেকে বাংলাদেশকে বের করে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

২. নির্বাচন পদ্ধতি: নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দৃশ্যত একমত হয়েছে। দুই দেশই মনে করে যে সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোন সরকার ব্যবস্থা কায়েম করা বাংলাদেশের জন্য সুবিধা হবে না। বিশেষ করে বাংলাদেশের নির্বাচনে পাকিস্তানি মডেল কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে ভারত যে অভিমত ব্যক্ত করেছে তার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একমত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয় বরং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে।

৩. সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত উভয় দেশই মনে করে বাংলাদেশ যেন কোন অবস্থাতেই আরেকটি আফগানিস্থান না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা কোনোভাবেই যেন এই দেশে উগ্র-সাম্প্রদায়িক এবং মৌলবাদী গোষ্ঠীর উত্থান না ঘটে সে জন্য সচেতন থাকতে হবে। এই বিষয়টিতে ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিরোধ নেই বলেই অনেকে মনে করেন।

৪. অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত একমত যে বাংলাদেশের নির্বাচন হতে হবে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এই নির্বাচনে যেন জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটে তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে প্রধান সকল দলের অংশগ্রহনের নিশ্চয়তা চায় ভারত এমনটি মনে করে না। ভারত মনে করে যে বাংলাদেশের নির্বাচন দেশেটির অভ্যন্তরীণ বিষয়। কারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলো না করলো সেটা দেখার বিষয় নয়। নির্বাচন যেন অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ হয় সেটি হলো দেখার মূল বিষয়।

৫. বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য: ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশই মনে করে যে বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের চারণভূমির না হয় সেজন্য সকল রাজনৈতিক দলকে অঙ্গীকার করতে হবে। এই অঙ্গীকার কেবল মৌখিক অঙ্গীকারের সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। অঙ্গীকার পূরণে তাদের সক্ষমতাও যাচাই-বাছাই করা হবে। 

আর এই পাঁচটি বিষয়ে ঐক্যমতের ভিত্তিতে তারা আগামী দিনে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যে রাজনৈতিক সঙ্কট হবে সেই সংকটের সমাধান করতে পারবে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭