ইনসাইড পলিটিক্স

হঠাৎ বিএনপিতে নির্বাচনমুখী আলোচনা


প্রকাশ: 22/08/2023


Thumbnail

বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। এই দাবিতে তারা এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এক দফা আন্দোলনের পর থেমে থেমে বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছে। কিন্তু এ সমস্ত কর্মসূচিগুলো আদৌ আন্দোলনের কর্মসূচি নয় বরং জনসংযোগ মূলক কর্মসূচি এবং সংগঠনের কর্মসূচি বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

গত কিছুদিন ধরে বিএনপির অভ্যন্তরীণ আলোচনাগুলো অনেকটাই নির্বাচনমুখী বলে দলের সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন। বিশেষ করে নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে কোন কোন আসনে আওয়ামী লীগ জিতবে, কোন কোন আসনে বিএনপি জিতবে, কোন কোন শর্তে নির্বাচন নিরপেক্ষ হতে পারে, এমনকি বিএনপির নেতারা এখন প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা, সরকারের বিভিন্ন পদায়ন নিয়ে নিয়মিত কথা বলছে। 

একটি রাজনৈতিক দল যখন এক দফা আন্দোলন করে তখন তাদের একটিমাত্র লক্ষ্য থাকে, সেটি হলো সরকারের পতন ঘটানো। অতীতে যে সমস্ত এক দফা আন্দোলন বাংলাদেশে হয়েছে সেই আন্দোলনের সময় ছোটখাটো অন্যান্য বিষয়গুলোও উপেক্ষা করা হচ্ছে। কারণ এক দফা অর্জিত হলেই সব অর্জন হবে। কিন্তু বিএনপি সে পথে হাঁটছে না। বরং বিএনপি একজন ডিসির রদবদল, পুলিশের ভূমিকা ইত্যাদি নিয়ে কথা বলছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, বিএনপি এখন নির্বাচনমুখী। একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে বিএনপির অন্তত আড়াইশো আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। বিএনপি এখন তার আন্দোলনের মিত্রদের খুব একটা ঘনিষ্ঠ করছে না। কারণ শেষ পর্যন্ত যদি নির্বাচন হয় তাহলে সেই নির্বাচনে সবাইকে আসন্ন হিসাব দিতে হবে। সেটা বিএনপি করতে চায় না। যদি বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করে তাহলে জামাত বা এরকম বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে সাথে নিয়ে নির্বাচন করবে। ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনে ঐক্য করে খুব একটা লাভ হবে বলে বিএনপি নেতারা মনে করেন। 

বিএনপির একাধিক সূত্র গুলো বলছে, তারা আসলে সেপ্টেম্বর মাসে বড় ধরনের একটা আন্দোলনের কর্মসূচির চেষ্টা করবে। তারা দেখতে চাইবে যে এর মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো যায় কিনা। যদি সেটি না যায় তাহলে অক্টোব থেকে তারা নির্বাচনের অভিমুখে যাত্রা শুরু করবে। বিএনপির একাধিক নেতা যারা কিছুদিন আগেও বলতেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই তারা এখন সুর পাল্টেছে। তারা বলছেন যে, সরকারই এখন চাচ্ছে না আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। 

সরকার কি চাইছে না চাইছে সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু বিএনপির হাওয়া যে বদল হয়ে গেছে, সরকার পতনের বদলে তারা অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম দাবিদাওয়াগুলো তৈরি করার কাজ করছে। এ কারণেই এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচিতে বিএনপির মনোযোগ এখন কম। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য এ ধরনের বক্তব্যকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। 

স্থায়ী কমিটির ওই সদস্য বলেছেন যে, বিএনপির জন্য এখন উভয়সঙ্কট। বিএনপি যদি এই মুহূর্তে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে আসে তাহলে দলটি ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। কারণ দলের কর্মীরা নেতাদেরকে কচুকাটা করবে। আর এই দলের বিশ্বাসযোগ্যতাও নষ্ট হয়ে যাবে। যারা কর্মী সমর্থক আছে তারা নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখতে পারবেনা। আবার যদি এই দলটি নির্বাচন বর্জন করে এক দফা আন্দোলনের বিজয় হতে না পারে তাহলেও এই দলটি ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। কারণ এবার যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে ছাড়াই আওয়ামী লীগ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচন করতে পারে এবং সফল হয় তাহলে বিএনপি নাম-নিশানা থাকবে না। এরকম একটি উভয় সংকটের মধ্যে বিএনপিকে প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে ভেবেচিন্তে। বিএনপির ওই নেতা মনে করেন যে, আমাদের হাতে সময় কম, এটা জানি। তবে জয় ছাড়া বিএনপির সামনে আর কোন বিকল্প নেই। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭