ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ইউক্রেন আক্রমণে ব্যর্থ, বলছেন মার্কিন গোয়েন্দারা


প্রকাশ: 23/08/2023


Thumbnail

ইউক্রেনের মূল লক্ষ্য ছিল মেলিটোপোল শহর দখল করা। কিন্তু তারা তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় খোদ মার্কিন গোয়েন্দারাই বলছে, তারা তাদের অভিযানে ব্যর্থ।


মেলিটোপোল শহর দখলের লক্ষ্যে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে আলাদা করতে আক্রমণ চালিয়েছিল ইউক্রেন, কিন্তু এতে তারা ব্যর্থ হয়।


ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ ইউক্রেনের ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল ইউক্রেন। এই উদ্দ্যেশে মার্কিন এবং ব্রিটিশদের সহায়তায় রাশিয়ার সাথে ক্রিমিয়ার সংযোগকারী কের্চ স্ট্রেইট সেতুতে আক্রমণ করে ইউক্রেন। এই হামলার কারণে সেতুর রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও তারা ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সম্প্রদায়। সেতুটি এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে।


প্রকৃতপক্ষে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে রোবোটাইন গ্রামের চারপাশে, যা মেলিটোপোল থেকে ৫০ মাইল (৮০.৫ কিলোমিটার) দূরে অবস্থিত। এখানে ইউক্রেনীয়রা তাদের সেরা-প্রশিক্ষিত এবং কৌশলগত রিজার্ভ বাহিনী রেখেছে, যার মধ্যে সেরা ইউক্রেনীয় ৮২তম এয়ারবর্নও অন্তর্ভূক্ত।


পশ্চিমা অস্ত্র সরঞ্জাম- যেমন ব্রিটিশ চ্যালেঞ্জার ট্যাঙ্ক, ইউএস স্ট্রাইকার আট চাকার ট্যাঙ্ক, ব্র্যাডলি ফাইটিং যান, এবং মার্কিন-নির্মিত মাইন রেজিস্ট্যান্ট অ্যাম্বুশ প্রটেক্টেড হেভিলি সশস্ত্র পরিবহন- এসব ব্যবহার করে ইউক্রেন ভেবেছিল তারা রাশিয়ার প্রতিরক্ষার প্রাচীর ভেঙে ফেলবে এবং মেলিটপোলেরও নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেবে, কিন্তু ব্যর্থ হলো ইউক্রেন।


আশঙ্কা করা হচ্ছে, যদি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর যুদ্ধের জন্য মজুদ রাখা রিজার্ভের অনেকাংশই ক্ষতি হয়, যেমনটি এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, তবে ইউক্রেন কার্যকর এই যুদ্ধে টিকে থাকতে পারবে না। আর এ ক্ষতি ইউক্রেনের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাকে ধ্বংস করতে পারে।


ইউক্রেনের কৌশলগত মজুদ প্রতিস্থাপনের জন্য কোনো জনবল নেই। শিক্ষিত যুবকদের বেশির ভাগই হয়ত নিয়োগের জন্য ঘুষ দিয়ে বা দেশ ছেড়ে চলে গেছে।

জেলেনস্কি এই সপ্তাহে দেশের সমস্ত সামরিক নিয়োগকারীদের বরখাস্ত করেছেন। তিনি দেশে নিয়োগ অভিযান পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনীতে ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সী পুরুষদেরও তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যেই মাঠে দেখা সৈন্যদের অনেকেই ছিল বেশি বয়সী।


যদি ইউক্রেন সেনাবাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ ছাড়া লোকবল ব্যবহার করে, তারা বোঝা ছাড়া আর তেমন কিছুই হবেন না। কারণ, অবিশ্বস্ত সৈন্যদের নিয়ে যুদ্ধ হয় না, যারা হয়তো যুদ্ধও করতে চায় না।


এটি ইউক্রেনীয় অফিসার এবং নন-কমিশনড অফিসারদের (এনসিও) জন্য বর্তমানে একটি জটিল সমস্যা, কারণ ঐসব লোকেরা জীবনের ঝুঁকি নিতে নারাজ। এমনকি এখন এমন কিছু ইউনিটের উদাহরণ রয়েছে, যারা আত্মঘাতী হিসেবে বিবেচিত কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে।


অপরদিকে, রাশিয়ান কৌশল প্রায় সব সেক্টরেই সক্রিয় প্রতিরক্ষা রাখে। ব্যতিক্রম হলো খারকিভ ও ব্লাস্ট, যেখানে রাশিয়ানরা দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে এবং শীঘ্রই কুপিয়ানস্ক শহরে আক্রমণ করবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে হাব, যা ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বে তার সৈন্যদের গোলাবারুদ এবং সরবরাহ চালানোর জন্য প্রয়োজন হয়। অনেক পর্যবেক্ষকই মনে করেন আগামী সপ্তাহে কুপিয়ানস্কের পতন ঘটবে।


রাশিয়া বলেছে, তারা এখনও তাদের নিজের আক্রমণ শুরুই করেনি, তবে এটি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। উত্তর-পূর্বে প্রায় ১,০০,০০০ সৈন্য জড়ো করা হয়েছে, যা আসন্ন আক্রমণে মোতায়েন করা যেতে পারে। সরঞ্জামের বহরগুলিও দেখা গেছে এবং চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে, অর্থাৎ নির্মাণ প্রক্রিয়া চলছে। তবে, রাশিয়া কোথায় যাচ্ছে তা তেমন স্পষ্ট নয়।


কেউ কেউ মনে করেন, রাশিয়া ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভকে লক্ষ্য করবে। যাহোক, রাশিয়ান সেনাবাহিনীর কাছে অন্যান্য বিকল্প রয়েছে। ইউক্রেনের আক্রমণাত্মক পিটার বের হয়ে গেলে উত্তর এবং দক্ষিণ থেকে ইউক্রেনের প্রধান সেনাবাহিনীকে আটকানোর চেষ্টা করতে পারে রাশিয়া। এটি দেশকে বিপন্ন করবে এবং কিয়েভের জন্য একটি অস্তিত্ব সংকটও সৃষ্টি করতে পারে।


কংগ্রেসনাল (পন্থী) ইউক্রেন ককাসের সহ-সভাপতি, প্রতিনিধি অ্যান্ডি হ্যারিস (আর-এমডি) এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে ইউক্রেন যুদ্ধ জয় যোগ্য নয়। অন্যদের মতো তিনিও একটি অচলাবস্থার সম্ভাবনার কথা বলছেন। তবে রাশিয়া যে এই দ্বন্দ্বের শেষ না দেখে ছাড়বে না, তিনি এটাও বলেন।


তিনি আরও বলেন,‘ইউক্রেনের বিপরীতে রাশিয়ার জনবলের কোনো ঘাটতি নেই এবং এর যুদ্ধ শিল্প এখন দিনরাত ২৪ ঘন্টা কাজ করছে। তারা যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তৈরি করছে। রাশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের মত নয়, যেখানে দক্ষ শ্রমিকের গুরুতর ঘাটতি এবং উল্লেখযোগ্য সরবরাহ শৃঙ্খল সমস্যা রয়েছে।’


মূল আমেরিকান প্রতিরক্ষা কোম্পানি যেমন- রেথিওন (আরটিএক্স কর্পোরেশন) স্বীকার করে যে, তারা চীন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহের উপর নির্ভর করে। আর চীনারা সেই পাইপলাইনটি বন্ধ করতে খুব বেশি সময় লাগবে না।


এদিকে বাইডেন ইউক্রেনের জন্য আরও ২০.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চান। তবে কংগ্রেসকে অবশ্যই এতে সম্মত হতে হবে। তবে কংগ্রেস এমন একটি প্রায় হেরে যাওয়া প্রস্তাবে এত বড় অর্থলগ্নি করতে চাইবে কিনা এটি স্পষ্ট নয়।


এদিকে ওয়াশিংটনের কেউই রাশিয়ানদের সাথে কথা বলার এবং বিরোধ নিষ্পত্তিতে সামান্যতম আগ্রহ দেখাচ্ছে না। উল্টো মার্কিন প্রশাসন বাইডেন পুনর্নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ প্রসারিত করতে চায়, যা শুধুমাত্র যুদ্ধ চালিয়ে রাখার মাধ্যমে একটি অচলাবস্থার ধারণাকেই প্রচার করা ছাড়া আর কিছু নয়। তবে আশার কথা এটা যে, সব কিছুরই শেষ আছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭