ইনসাইড পলিটিক্স

কর্মীদের আশঙ্কা: 'পুরোনো ছন্দে' ফিরছেন ফখরুল


প্রকাশ: 23/08/2023


Thumbnail

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আগামীকাল সিঙ্গাপুর সফর নিয়ে বিএনপিতে এখন তোলপাড় শুরু হয়েছে। তিনি পুরোনো ছন্দে চলছেন কিনা সেটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দলের মহাসচিবের সিঙ্গাপুর যাওয়ার খবর জানা জানি হওয়ার পরপরই দলের তৃণমূলের একজন কর্মী পল্টনে দাঁড়িয়ে বলেছেন, মির্জা ফখরুল বারবার এরকম করেন কেন? যখনই আন্দোলনের একটা গতি পায় তখনই তিনি উল্টো পথে হাঁটা শুরু করেন। যখনই আন্দোলনের ব্যাপারে নেতাকর্মীদের উৎসাহ তৈরি হয়, তখনই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিদেশে পালিয়ে যান। উল্লেখ্য যে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সস্ত্রীক আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে একটি ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। 

বিএনপির চলমান এক দফা আন্দোলনের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সিঙ্গাপুর সফর নিয়ে কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং অসন্তোষ লক্ষ্য করা গেছে। তারা বলছেন, এখন বিএনপি মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে আন্দোলন করছে। আন্দোলনের কর্মসূচিতে তার উপস্থিতি নিঃসন্দেহে কর্মীদের চাঙ্গা করে। কিন্তু যার নেতৃত্বে আন্দোলন তিনিই যখন কর্মসূচি অনুপস্থিতি সেটা স্বাভাবিক ভাবেই আন্দোলনে একটা নেতিবাচক প্রভাব রাখবে। এ রকম একটি সময়ে তার সিঙ্গাপুর সফর কর্মীদের মধ্যে নানা রকম প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। 

বিএনপির একজন কর্মী বলেছেন, মির্জা ফখরুল কেন বারবার এ ধরনের আচরণ করছেন জানি না। তবে এটা আন্দোলনে নিশ্চিতভাবে প্রভাব রাখবে এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে সন্দেহের অবকাশ তৈরি হবে। কারণ এবারই প্রথম নয়, এর আগেও তিনি আন্দোলনের মধ্যে বারবার এমন করেছেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আন্দোলন চলাকালীন তিনি হঠাৎ মধ্যরাতে সিঙ্গাপুর যান। এ রকম তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও করেছেন। এখন আবার ঠিক নির্বাচনের আগে আগে তিনি একই ছন্দে চলছেন কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

একটা সময় ছিল যখন ড. কামাল হোসেনকে এরকম সমালোচনার মুখোমুখি পড়তে হতো। ড. কামাল হোসেন যখনই দেশে কোন আন্দোলন হতো তখনই তিনি বিদেশে চলে যেতেন। সেই একই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এবারই প্রথম নয়, বিএনপি যতবার আন্দোলনকে গুছিয়ে নিয়েছে, বড় ধরনের আন্দোলন করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে এবং আন্দোলনে কর্মীদেরকে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হয়েছে ততবারই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাতের অন্ধকারে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তার বিদেশ যাওয়ার ফলে আন্দোলনের গতি নষ্ট হয়েছে, কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। 

বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিদেশে যাওয়ার ফলে আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ এর আগে তিনি জেলে ছিলেন, তখন আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বরং তার জেলে থাকা অবস্থায় গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করেছে বিএনপি এবং বিএনপির এমপিরা পদত্যাগও করেছেন। কাজেই বিএনপি মহাসচিব এই মুহূর্তে বিদেশে গেলে আন্দোলনের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। কিন্তু দলের ক্ষুব্ধ কর্মীরা এরকম বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। তারা মনে করেন জেলে যাওয়া আর বিদেশ যাওয়া এক জিনিস নয়। কর্মীরা বলছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জেলে যাওয়ার ফলে কর্মীদের মধ্যে আরও চাঙ্গা ভাব তৈরি হয়েছিল, কর্মীরা মনে করেছিল তাদের নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ফলে তারা আরও স্বীকার করে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিদেশ যাওয়াটি সম্পূর্ণভাবে এক ধরনের বিলাসিতা। একজন কর্মী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া যখন উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারছেন না, তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুরে গিয়ে আরাম আয়েশে চিকিৎসা করেন কীভাবে। 

বিএনপির কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তারটাও তাহলে সাজানো নাটক ছিল। তাকে দিয়ে সরকার আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে আনতে চায়। আর এ কারণেই তাকে একদিকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে আবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার দাবি করে আসছি। কিন্তু সরকার এই দাবি মানছে না। সেক্ষেত্রে আমাদের নৈতিকভাবে উচিত কোনো নেতার-ই বিদেশ না যাওয়া। বেগম খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশে রেখে নেতাদের বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে বিএনপির স্থায়ী এই কমিটির সদস্য মনে করেন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭