ইনসাইড পলিটিক্স

খসরু আউট মিন্টু ইন


প্রকাশ: 23/08/2023


Thumbnail

নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এক দফা আন্দোলনের পর থেকেই থেমে থেমে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে দলটি। কিন্তু বিএনপি এই আন্দোলনে আন্তর্জাতিক মদদ পেতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলেই জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র। সূত্রটি বলছে, প্রথম দিকে বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর পরোক্ষ মদদপুষ্ট হলেও পাশার দান উল্টে দিয়েছে ভারত।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, বাংলাদেশে হাসিনা সরকার দুর্বল হলে তা ভারত এবং আমেরিকা কারও পক্ষেই সুখকর হবে না। নয়াদিল্লি একাধিক স্তরের বৈঠকে এই বার্তা বাইডেন প্রশাসনকেও জানিয়েছে এবং বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার বর্তমান ভূমিকায় ভারত যে খুশি নয়, ওয়াশিংটনকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সেই বার্তাও। ফলে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম দিকে বিএনপির আন্দোলনে পরোক্ষ মদদ দিলেও বর্তমান সময়ে কৌশল পাল্টিয়ে বিএনপিকে আন্দোলন ছেড়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের চাপ দিচ্ছে বলে জানিয়েছে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র। 

অন্যদিকে বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের প্রকাশ্য এই অবস্থান এবং ভারতের এই অবস্থানের ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো কৌশল পরিবর্তনের কারণে নাখোশ বিএনপির হাইকমান্ড। বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের প্রকাশ্য এই অবস্থান এবং এই অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কৌশল পরিবর্তন নিয়ে বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়েও পরিবর্তন আনা হয়েছে।

প্রথমে বিএনপির আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কূটনৈতিক আলোচনা এবং সমঝোতা ইত্যাদি বিষয়গুলোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে। কিন্তু আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিএনপির পক্ষে আন্তর্জাতিক মদদ পেতে পুরোপুরি ব্যর্থ বলেই মনে করছে বিএনপির হাইকমান্ড। সে কারণেই আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর অবস্থানে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল মিন্টুকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত করেছে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপির সূত্রটি বলছে, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে অর্থাৎ  ২০০১ সালের আগে ভারতের সাথে বিএনপির একটি সমঝোতা হয়েছিল। সে সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভারতে গিয়েছিলেন এবং ভারতের ক্ষমতাসীন সরকার দলের সাথে তার একটি আলোচনাও হয়েছিল। সে সময়ে ভারতের সাথে এই সখ্যতা তৈরি করেছিলেন বিএনপির বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু। সে কারণেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদের পরিবর্তে ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আব্দুল আউয়াল মিন্টু বিএনপির মধ্যে সবার থেকে ভারতপন্থি রাজনীতিতে একধাপ এগিয়ে। ভারতের সাথে তার একটা সুসম্পর্ক রয়েছে। যে কারণেই বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ নিয়ে  ভারতের এ ধরনের অবস্থান এবং মনোভাব পরিবর্তন করতেই আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।  

কূটনেতিক সূত্র জানায়, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে অন্তত ১৬টি ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ক্যাম্প পরিচালিত হতো। তারেক জিয়ার সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতায় এই ক্যাম্পগুলো পরিচালিত হতো বলে ভারত অভিযোগ করেছে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সীমানা এবং রুট ব্যবহার করে অনেক অস্ত্রের চালান ভারতের সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায়, যার মধ্যে (১০ ট্রাক অস্ত্র) একটি চালান চট্টগ্রামে ধরা পরেছিল। এই অস্ত্রগুলোর চালানে তারেক জিয়াই মূল ভূমিকা পালন করতো বলে ভারত অভিযোগ করেছে। ভারতের অভিযোগ হলো, তারেক জিয়া লন্ডনে বসে ভারত বিরোধী প্রচারণা এবং অপপ্রচারে নেতৃত্ব দিচ্ছে। সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে ভারত বিরোধী যে প্রচারণাগুলো হয়, তা তারেক জিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় হয় বলে ভারত অভিযোগ করেছে।

এছাড়াও, তারেক রহমানের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধী এবং তাঁদের সন্তানদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যুদ্ধাপরাধী এবং তাঁদের সন্তানরা ভারতের স্বার্থ বিরোধী তৎপরতার সঙ্গে জড়িত। তারেক জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার সময় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নয়নে যে প্রতিশ্রুতিগুলো দিয়েছিল, তাঁর একটিও পূরণ করেননি। সেজন্য তারেক জিয়াকে বিশ্বাস করা যায় না বলে অভিযোগ ভারতের। এবং সর্বশেষ অভিযোগ হলো, ভারত মনে করে বিএনপি যদি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে তারেক জিয়া বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যে বিদ্যমান সম্পর্ক, চুক্তি, উন্নয়ন অংশীদারিত্ব রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে নেতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ফলশ্রুতিতে ভারত আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।  

বিএনপি এবং তারেক সম্পর্কে ভারতের যেসব অভিযোগ রয়েছে এবং ভারতের যে মনোভাব রয়েছে, তা পরিবর্তন করতেই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। কিন্তু এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, বিএনপি এবং তারেক জিয়া সম্পর্কে ভারতের যেসব অভিযোগ রয়েছে এবং যে মনোভাব রয়েছে, তার পরিবর্তন করতে পারে কি না বিএনপির এই নেতা। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭