ইনসাইড পলিটিক্স

একে একে সব দরজা বন্ধ হচ্ছে বিএনপির


প্রকাশ: 23/08/2023


Thumbnail

গত প্রায় ১৫ বছর ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। কিন্তু আন্দোলনের মাঠে সুবিধা করতে পারেনি দলটি কিংবা সরকারবিরোধী আন্দোলন জমে উঠার আগেই আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবে গত বছর থেকে মার্কিন প্রেসক্রিপশনে দলটি আন্দোলনে নামলে দলের নেতাকর্মীরা কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল এবং আন্দোলনেও কিছুটা জোয়ার এসেছিল। তবে হঠাৎ করেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষ্ক্রিয়তার কারণে এক দফা ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি সংকটে ভুগছে বিএনপি। অর্থাৎ আন্দোলনের বড় ভরসা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ই এখন পিছুটান নিয়েছে। ফলে বিএনপির জন্য আন্দোলনের পথ এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এখন নির্বাচনে আসা ছাড়া বিএনপির সামনে আর কোনো পথই খোলা থাকলো না। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসক্রিপশনই নয়, বিএনপির জন্য অন্যান্য সম্ভাব্য সব দরজাও আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

বিএনপির আন্দোলনের সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে ভারত প্রকাশ্য অবস্থান নিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পিছুটান নিয়েছে। বাংলাদেশের সাথে চীনের ঘনিষ্ঠতা এবং রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ ছিল। তবে এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নির্ভার করেছে ভারত। আর সে কারণেই এবার বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য পদ পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে ভারত সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে  বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন ঐক্যমতে পৌঁছেছে। 

বিএনপি ধারণা ছিল যে, এক দফা আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ কোণঠাসা হয়ে পড়বে। ফলে একটা পর্যায়ে গিয়ে সরকার বিএনপির দাবি মানতে বাধ্য হবে। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের প্রকাশ্য অবস্থান আওয়ামী লীগকে আরও চাঙ্গা করেছে। আওয়ামী লীগ বিএনপির আন্দোলনের ব্যাপারে আরও কঠোর অবস্থানে গেছে। আর এ কারণেই সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলাগুলো এখন আবার নতুন করে সক্রিয় করেছে।

পাশাপাশি বিএনপির লক্ষ্য ছিল যে, বাংলাদেশের সরকারবিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত করে একটা যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো বিএনপি এখনও সেটা করতে পারেনি। বরং দলটি এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করে কর্মসূচি সংকটে ভুগছে। টানা ধারাবাহিক কর্মসূচি দেয়ার কথা ঘোষণা করলেও দলটি থেমে থেমে কর্মসূচি দিচ্ছে। যার ফলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নিষ্ক্রিয়তা চলে এসেছে। এছাড়াও সরকারবিরোধী দলগুলোকে এখনও এক প্লাটফর্মে আনতে পারেনি বিএনপি। দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপোড়া যেমন তৈরি হয়নি তেমনি অন্যান্য দলগুলোকে আস্থায় আনতে পারেনি বিএনপি। ফলে জোটবদ্ধ হয়ে যে আন্দোলন করার কথা ছিল সেটিও হচ্ছে না।

জাতীয় পার্টিও বিএনপির জন্য একটি বড় ভরসার জায়গায় ছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টিও এখন বিএনপি থেকে দূরে দূরে থাকছে। বিশেষ করে আজ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের ভারত সফর করে দেশে ফিরেছেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে জি এম কাদের ভারতকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টিও বিএনপির ছাতছাড়া হয়ে গেল।

এদিকে আন্দোলনের শুরু থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া যেভাবে সক্রিয় ছিলেন এখন তাকে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। কারণ তারেকের ব্যাপারে ভারতের তীব্র আপত্তি রয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী এবং ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে তার যোগাযোগের বিষয়টি ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন করে অবহিত করেছে। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তারেক জিয়াও এখন এক প্রকারে আস্তাকুঁড়ে পড়েছে। আর এভাবেই একে একে সব দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিএনপির। এখন আগামী নির্বাচনে যাওয়া ছাড়া বিএনপির সামনে আরও কোনো পথ-ই খোলা থাকছে না। এখন দেখার বিষয় বিএনপির শেষ পর্যন্ত কি সিন্ধান্ত নেয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭