ইনসাইড বাংলাদেশ

আইভি রহমানের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ : দিন দিন বাড়ছিল মৃত্যুর মিছিল


প্রকাশ: 24/08/2023


Thumbnail

মৃত্যুর মিছিলে দিন দিন বাড়ছিল জনসংখ্যা। ২১ আগস্টের ভয়াবহ ও বিভিষিকাময় হামলায় গ্রেনেডের স্পিন্টারের আঘাতে আহত আহত হয়ে অনেকেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে পরাজিত হয়েছেন। ওই দিন ২১ আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছিলেন ১৬ জন। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। অর্থাৎ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় যারা আহত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে থেকে একে একে আরও পাঁচ জন গ্রেনেড হামলার মৃত্যুর মিছিলে ঢলে পড়েন। কি ভয়ানক সে হামলা! কারো হাত নেই, কারো পা নেই, উড়ে গেছে গ্রেনেডের উত্তপ্ত আঘাতে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ। বাতাসে ভেসে আসে শত শত মানুষের গগন বিদারী আর্তচিৎকার। বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টারত মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় সেই মর্মান্তিক দিন। 

এমনই এক ভয়ানক মর্মান্তিক দিনে গ্রেনেডের স্পিন্টারের আঘাতে আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে ক’দিন প্রাণে বেঁচেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘাতকদের স্পিন্টারের ছোবল দেওয়া বিষে মৃত্যুর কাছে হেরে গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বেগম আইভি রহমান অন্যতম। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাত্র চার দিনের মাথায় আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বেগম আইভি রহমান মৃত্যুর কাছে পরাজিত হন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছোড়া গ্রেনেডে আইভি রহমানের দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গুরতর অবস্থায় তাঁকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে আইভি রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ছিলেন। তিনি সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের মা।  

আজ ২৪ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে ৪ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ২৪ আগস্ট তিনি মারা যান। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বেগম আইভি রহমান।

আইভি রহমানের পুরো নাম জেবুন নাহার রহমান আইভি। ১৯৪৪ সালের ৭ জুলাই ভৈরবের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম। তার পিতা জালাল উদ্দিন আহমেদ ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও মা হাসিনা বেগম একজন আদর্শ গৃহিণী ছিলেন। আইভি রহমান ১৯৫৮ সালের ২৭ জুন নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তৎকালীন তুখোড় ছাত্রনেতা জিল্লুর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আট বোন চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম। 

স্বাধীনতার আগে আইভি রহমান ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার মধ্যদিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির বর্ণাঢ্য জীবন শুরু করেন। ছাত্রজীবনে তিনি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শোষিত বাংলা ও বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি তখন ছাত্রলীগের প্রথম সারির নেত্রী এবং নীতিনির্ধারক। ১৯৬৯ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে রাজনীতির প্রতি বাঙালি নারীদের আগ্রহী ও উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে তার ছিল অবিস্মরণীয় অবদান।

১৯৭১ সালে বাঙালির স্বাধীনতা আদায়ের লক্ষ্যে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সে সময় তিনি ও তার স্বামী জিল্লুর রহমান ভারতে গিয়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে আইভি রহমান মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। রাজনীতি ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মহিলা সমিতির সভানেত্রী ও জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মহিলা সংস্থা এবং জাতীয় মহিলা সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন। নারীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ও সমাজের অবহেলিত শিশু, প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে তার উজ্জ্বল ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

ভৈরবের যুবসমাজ তাকে আইভি আপা বা ভাবি বলে সম্বোধন করতেন। তার প্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ ছাড়াও ভৈরবের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে তিনি নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৯৮ এবং ২০০৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় তিনি ভৈরবের অসহায় ও বিপন্ন মানুষের পাশে ত্রাণ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। বন্যার অপরিচ্ছন্ন পানিতে নেমে জলাবদ্ধ মানুষের দুয়ারে দুয়ারে তিনি ত্রাণসামগ্রী, ওষুধ ও শিশুখাদ্য পৌঁছে দিয়েছেন।

অকুতোভয়, আজন্ম সংগ্রামী এ মানুষটির আকস্মিক মৃত্যু বাঙালি জাতি যেমন মেনে নিতে পারেনি, তেমনি পারেনি ভৈরবের সর্বস্তরের মানুষ। আন্দোলন, সংগ্রামে আইভি রহমানের অবদানের কথা বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। আইভি রহমানকে স্মরণ করে ভৈরব স্টেডিয়ামের নাম রাখা হয় শহীদ আইভি রহমান পৌর স্টেডিয়াম। তার নিজ গ্রামে আইভি চত্বর নামে একটি ম্যুরাল স্থাপন ছাড়াও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভৈরব শহরের কমলপুর এলাকায় আইভি রহমান স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে।

২১ আগস্টের হামলায় আওয়ামী লীগের চার শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়ে শরীরে স্পিন্টার নিয়ে আজও মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আহত হয়েছিলেন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরাও। এখনও অনেক নেতাকর্মী সেদিনের সেই গ্রেনেডের স্পিন্টারের মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অনেক নেতাকর্মীকে তাৎক্ষণিক দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করালেও তারা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি। 

রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমান ছাড়াও সেদিন নিহত হন ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসির উদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। জাতি তাদের মনে রাখবে আজন্মকাল। জাতি সশ্রদ্ধচিত্তে মনে করবে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বেগম আইভি রহমানকে।

আইভি রহমারে মৃত্যুবার্ষিকীর এই দিবসটি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করবে আওয়ামী লীগ। আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে বনানী কবরস্থানে তার কবর জিয়ারত, শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও মোনাজাত।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭