ইনসাইড বাংলাদেশ

অবশেষে মঞ্চে এলেন জিয়া


প্রকাশ: 24/08/2023


Thumbnail

১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতির পদ দখল করেন। ২৩ আগস্ট তিনি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন (অব.) এম মনসুর আলী, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামরুজ্জামান আরও বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করেন এবং ঠিক তার পরদিন ২৪ আগস্ট মেজর জেনারেল কেএম শফিউল্লাহকে সরিয়ে দিয়ে খুনি মোশতাক তার বিশ্বস্ত দোসর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর ‘চিফ অব আর্মি স্টাফ’নিয়োগ করে। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হলেও ২৪ আগস্টের আগ পর্যন্ত তার ভূমিকা নিয়ে কেউই তেমন কিছু জানত না। ২৪ আগস্টের পরই তিনি মূল মঞ্চে আসেন।

১৫ আগস্টের সময় কেএম শফিউল্লাহ সেনাপ্রধান হিসেবে থাকলেও তিনি কেবল নামমাত্র সেনাপ্রধান ছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি ছিলেন একজন মেরুদণ্ডহীন ও ব্যক্তিত্বহীন সেনাপ্রধান। অনেকেই মনে করেন শফিউল্লাহ তার চাকরির মায়ায় মোশতাকের পদলেহন করেছিলেন এবং তার আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু এসব করে তার কোন লাভ হয়নি। বরং ২৪ আগস্ট জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করা হয়।

ইতিহাস বিশ্লেষকরা মনে করেন, জিয়াউর রহমানের সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্রের বৃত্ত পুরন হয় এবং এই পুরো পরিকল্পনার সাথে তিনি জড়িত নয়, সেটি প্রমাণ করার জন্যই তিনি ৮ দিন অপেক্ষা করে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। এর পরবর্তি ঘটনাপ্রবাহে আস্তে আস্তে তিনি দেশের অবৈধ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। 

৭৫’ এর পর লরেন্স লিফশুলজ এবং অ্যান্থনি মাসকারেনহাস দুইজন বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং গবেষণা করতে গিয়ে তারা খুনিদেরও সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এ সমস্ত খুনিদের সাক্ষাৎকার থেকে এটি সুস্পষ্ট হয় যে, জিয়াউর রহমান এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিশেষ করে কর্নেল ফারুক এবং রশিদ জিয়াউর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন এবং এই যোগাযোগের সময় ফারুক এবং রশিদকে জিয়াউর রহমান বলেছিলেন যে, আমি এটা শুনলাম, তোমরা যদি করতে পার, কর। কিন্তু আমি সরাসরি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবো না।

১৯৭৬ সালে ৩০ মে খুনি ফারুক লন্ডনে ডেইলি সান'স পত্রিকাকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার পুরো বিবরণ দেন এবং তাতে তিনি স্বীকার করেন যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সম্পর্কে তিনি জিয়াউর রহমানকে অবহিত করেছিলেন।

সাম্প্রতিককালে আরও কিছু নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে যে, খুনি মোশতাকের সঙ্গেও জিয়াউর রহমানের যোগাযোগ ছিল। পুরো ঘটনাটি সাজিয়েছিলেন জিয়া নিজেই। তিনি কর্নেল ফারুক-রশিদকে ব্যবহার করেছিলেন, ব্যবহার করেছিলেন খুনি মোশতাককে। তিনি জানতেন যে, এভাবেই ক্ষমতার পরিবর্তন করতে হবে। তার গায়ের যেন রক্তের দাগ না লাগে সে জন্যই তিনি ফারুক-রশিদকে ব্যবহার করেছিলেন। আর খুনি মোশতাককে ব্যবহার করেছিলেন। তিনি যে এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় যখন তিনি আত্মস্বীকৃত খুনিদের কূটনীতিক চাকরি দিয়েছিলেন।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৮১ সময়কাল ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের কালো অধ্যায়। ঘোর অমানিশার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আমল। জিয়ার শাসনামলকে কেবল বাঙালির ইতিহাসের লজ্জা ও কলঙ্কিত অধ্যায় হিসেবেই অভিহিত করা যায়। যার সুচনা হয়েছিল ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ও ২৪ আগস্ট জিয়াউর রহমানের সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্যে দিয়ে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭