ইনসাইড থট

সাবেক নয়, অবৈধ সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি ছিলেন জিয়াউর রহমান


প্রকাশ: 24/08/2023


Thumbnail

আজ ২৪ আগস্ট। ১৯৭৫ সালেই এই দিনে মেজর জেনারেল কেএম শফিউল্লাহকে সরিয়ে খুনী মোশতাক তার বিশ্বস্ত দোসর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর ‘চিফ অব আর্মি স্টাফ’ নিয়োগ করে। সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনী মোশতাক অসাংবিধানিক উপায়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। একটি জিনিস মনে রাখতে হবে যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পার্লামেন্ট কিন্তু ভেঙে দেয়া হয়নি। সুতরাং নিয়ম অনুযায়ী ভাইস-প্রেসিডেন্টের প্রেসিডেন্ট হবার কথা। খন্দকার মোশতাক কোনভাবেই প্রেসিডেন্ট হতে পারে না। তাহলে একজন আবৈধ রাষ্ট্রপতি যাকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করবেন তিনি কিভাবে বৈধ হন। তিনিওতো তাহলে অবৈধ। তাই জিয়াউর রহমানকে সাবেক সেনাপ্রধান বলা সংবিধান পরিপন্থী বলেই আমি মনে করি।

শুধু অবৈধ সেনাপ্রধান নয়, জিয়াউর রহমান একজন অবৈধ রাষ্ট্রপতিও ছিলেন। ১৯৭৮ সালের ৩ জুন জিয়া যখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নেন, তখনও তিনি সেনাপ্রধান ছিলেন। রাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা হয়েও তিনি রাষ্ট্রপতির পদ দখল করেন। সে সময় রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য তিনি সংবিধান ছিন্নভিন্ন করেছিলেন। এর প্রায় ২৭ বছর পর ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট জিয়ার সেই শাসনামলকে অবৈধ ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত। রায়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত জারি করা সব ধরনের নির্দেশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৫ সালে খন্দকার মোশতাক আহমদ, একই বছরের ৬ নভেম্বর বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ও পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ এবং সামরিক শাসন জারি অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থি হিসেবে উল্লেখ করেন আদালত। সুতরাং জিয়াউর রহমানকে সাবেক সেনাপ্রধান এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি কোনটিই বলা যাবে না। দুইটিই সংবিধান বিরোধী।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা যদি জিয়াউর রহমান হন, আর তার শাসন যদি অবৈধ হয়, তাহলে তার দলও অবৈধ বলেই আমি মনে করি। এই দল সেনাছাউনিতে তৈরি হওয়া স্বাধীনতাবিরোধী একটি দল। আবৈধভাবে ক্ষমতার উপর দাঁড়িয়ে যারা দল করেছে রাজনীতি করেছে তাদের দ্বারা বাংলাদেশের কি উন্নতি হবে? তারা সবসময় চায় বাংলাদেশকে পিছনের দিকে নিয়ে যেতে। দেশেকে পাকিস্তানে পরিণত করতে। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সেনাদের ইতিহাসে যে কলঙ্ক রচনা করেছেন সেটির জন্য তার মৃত্যুর পরও বিচার হওয়া উচিত। একইভাবে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে যে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তারও বিচার হওয়া উচিত।

নেপথ্যে থেকে ৭৫’এর ১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মূল কারিগর ছিলেন জিয়াউর রহমান। আমি মনে করি খুনী মোশতাকের চেয়েও বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে ষড়যন্ত্রে বেশি অবদান ছিল জিয়াউর রহমানের। বিভিন্ন দলিল এবং অনেকের দেয়া সাক্ষাৎকারে এটি এখন প্রমাণিত যে, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার জন্য সেদিন অস্ত্র নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল, বিশেষ করে কর্নেল ফারুক এবং রশিদ জিয়াউর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন এবং এই যোগাযোগের সময় ফারুক এবং রশিদকে জিয়াউর রহমান বলেছিলেন যে, আমি এটা শুনলাম, তোমরা যদি করতে পার, কর। কিন্তু আমি সরাসরি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবো না।

এছাড়া খুনী ফারুক লন্ডনে ডেইলি সান'স পত্রিকাকে একটি সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পুরো বিবরণ দেন এবং তাতে তিনি স্বীকার করেন যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সম্পর্কে তিনি জিয়াউর রহমানকে অবহিত করেছিলেন। জিয়াউর রহমান যে বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারী এবং আসল নাটের গুরু ছিলেন সেটি এখন আর গোপন কোন বিষয় নয়।

এই অবৈধ জিয়াউর রহমান ও তার দলকে আজকে যারা সমর্থন করছে তাদের থেকেও আমাদের সাবধান থাকতে হবে। তারা যত চাপে ফেলার চেষ্টা করুক না কেন, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বংবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এসব অবৈধ লোকদের এবং তাদের সহায়তাকারীদের রক্তচক্ষুকে ভয় পায় না। তিনিই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং তার অবদানেই গণতন্ত্র আজ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হয়েছে। যে যত চেষ্টাই করুক না কেন ষড়যন্ত্র করে কোন লাভ হবে না। ষড়যন্ত্রকারীদের ভাগ্যে যা হয় তাদেরকেও সেই ভাগ্যই গ্রহণ করতে হবে। মোশতাক এবং জিয়াউর রহমানের ভাগ্যে যা হয়েছিল তাদের পরিণতিও একই হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭