ইনসাইড পলিটিক্স

জাপা’কে নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র ‘কৌশলের খেলা’


প্রকাশ: 24/08/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কোন পক্ষে থাকবে- এটি এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। জাপা নেতা জি এম কাদের এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। গতকাল ভারত সফর শেষে দেশে ফিরেছেন তিনি। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, ভারতে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন এবং এ বৈঠকে তিনি নির্বাচনে যাবেন- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 

জাতীয় পার্টি যে নির্বাচনে যাচ্ছে- এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু নির্বাচনে তিনি কিভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, এটিই এখন একটি বড় প্রশ্ন। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় পার্টির সঙ্গে, বিশেষ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিএনপির একটি অংশের গোপন যোগোযোগ হচ্ছে নিয়মিত এবং শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচনে আসে, তাহলে এবার তারা জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট করতে পারে- এমন গুঞ্জনও রয়েছে। বিএনপির সাথে জোট করলে জাতীয় পার্টিকে একশ’ আসন দেওয়া হবে- এমন আলোচনাও রাজনীতির মাঠে শোনা যাচ্ছে।

জি এম কাদের এখন আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপির জোটে গিয়ে ক্ষমতার উলট-পালট ঘটাতে চান; বিশেষ করে জাতীয় পার্টি যে রাজনীতিতে একটি বড় ফ্যাক্টর, সেটি প্রমাণ করতে চান। এ কারণেই বিএনপির প্রতি তার এক ধরনের আগ্রহ রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তবে ভারত সফরের পর সে অবস্থানে জি এম কাদের থাকতে পারবেন কি না, সেটি নিয়ে এক ধরনের প্রশ্ন রয়েছে।

জাতীয় পার্টি দীর্ঘ দিন ধরেই আওয়ামী লীগের মিত্র। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেছিল। আর সেই মহাজোট দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিল। তার পর থেকেই জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে নির্বাচন করছে। যদিও ২০১৪ সালে ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল। সেই সময়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ নির্বাচনের মাঝপথে বেঁকে বসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করবে না, কাজেই তিনি নির্বাচন করবেন না। তিনি দলের সকল প্রার্থীকে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় রওশন এরশাদ পৃথক অবস্থান নেন এবং তার উদ্যোগের কারণেই শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি খন্ডিতভাবে হলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এমনকি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করা হয়। 

ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পুরোপুরি অংশগ্রহণ না করলেও তারা প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসে এবং ওই সংসদের মেয়াদ পূর্ণ করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি মহাজোটে ছিল এবং এই নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির ভেতরে নানা রকম আপত্তি, অনীহা রয়েছে। এরশাদের মৃত্যুর পর জি এম কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হয়ে জাতীয় পার্টিকে আলাদা একটা পরিচয় দিতে চান। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের ‘বি-টিম’ নয়- এই বক্তব্যটি তিনি সামনে নিয়ে আসতে চান এবং সেখান থেকে তিনি আওয়ামী লীগের বৃত্ত ছেকে বেড়িয়ে একটি স্বাতন্ত্র অবস্থান গ্রহণ করেন এবং আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচক হয়ে যান। কিন্তু নির্বাচনের আগে তার এই স্বাতন্ত্র অবস্থান আওয়ামী লীগের জন্য খুব একটা পছন্দের হচ্ছে না। এই কারণেই জাতীয় পার্টিতে মাঝে মাঝে অস্বস্থির ডালপালা মেলে। 

কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাতীয় পার্টিতে যে ঘটনাগুলো ঘটে, সে ঘটনাগুলোতে ক্ষমতাসীনদের হাত রয়েছে। ১৯ আগস্ট জাতীয় পার্টির নেতা এবং সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর পরেই জাতীয় পার্টির মধ্যে নানা রকম গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। জাতীয় পার্টি কি তাহলে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে? জাতীয় পার্টির মধ্যে কি দ্বন্দ্ব চরমে? যদিও জি এম কাদের দিল্লি থেকে ফিরে এ ধরনের দ্বন্দ্বের কথা অস্বীকার করেছেন। বরং তিনি বলেছেন, রওশন এরশাদ অসুস্থ, তাকে দিয়ে কিছু লোকজন বিভিন্ন বিষয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিচ্ছেন। তবে জি এম কাদেরের ভূমিকা এখনও রহস্যময়। রওশন এরশাদ যদি নির্বাচনের আগে শারীরিকভাবে সুস্থ না থাকেন, তাহলে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে কোন পক্ষে খেলবে- সেটিই এখন দেখার বিষয়। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭