ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচনকালীন সরকার : প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আপত্তি নেই, তবে নিরপেক্ষ উপদেষ্টা চায় যুক্তরাষ্ট্র


প্রকাশ: 25/08/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। বিএনপি, আওয়ামী লীগ যেমন পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে রেখেছে, তেমনি কূটনৈতিক মহলও দুই পক্ষকে একটি সমঝোতায় আনার জন্য বিভিন্ন ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে। আর এই তৎপরতার প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, এখন সংবিধানের আওতায় নির্বাচন করা। বিএনপি বলছে, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু বর্তমান সংবিধানে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোন বিধান নাই। এরকম বিধান করতে গেলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আওয়ামী লীগ যেটা করবে না। 

এর ফলে কূটনৈতিক মহল সংবিধানের মধ্যেই সমস্যার সমাধান খুঁজতে চাইছে। আর সংবিধানের মধ্যে সমস্যার সমাধান খুঁজতে গিয়ে ভারত যেমন নির্বাচনকালীন সরকারে সকল দলের অংশগ্রহণের প্রস্তাব করেছে,তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারে আপত্তি তাদের নেই। তবে নির্বাচনকালীন সরকারে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ উপদেষ্টামন্ডলী থাকতে হবে। এই উপদেষ্টামণ্ডলী ১০ সদস্যের হতে পারে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন মহলকে প্রস্তাব দিয়েছে। 

আওয়ামী লীগের অন্তত দু’জন নেতা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে বলেছে, মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, নিরপেক্ষ উপদেষ্টামন্ডলী যদি নির্বাচনকালীন সরকারে থাকে, তাহলে আপত্তি কোথায়? সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ বলেছে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকার থাকার পর যেকোনো বিষয় নিয়েই আলোচনা হতে পারে। তবে এ নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, একটি ছোট্ট মন্ত্রিসভা এবং একটি শক্তিশালী উপদেষ্টামণ্ডলীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালিত হতে পারে। যে উপদেষ্টামন্ডলী হবে ক্ষমতাবান এবং তাদের পরামর্শ ছাড়া নির্বাচনকালীন সরকার কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে না। এই উপদেষ্টামন্ডলী নির্বাচন কমিশন এবং সরকারপ্রধানকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিবেন। সেই পরামর্শ অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সময়ে কাজকর্ম পরিচালিত হতে হবে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনকালীন সময়ে এরকম একটি উপদেষ্টামন্ডলী থাকবে, যেটি দল নিরপেক্ষ এবং তারা স্বাধীন সত্তা হিসেবে সরকারের যে কোনো অসঙ্গতি বা নির্বাচনে প্রভাবিত করার ঘটনার ব্যাপারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবেন। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এরকম অন্তত ২০ জন নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে, যে সমস্ত ব্যক্তিরা আগামী নির্বাচনে নির্বাচনকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে থাকতে পারেন। 

২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে সরকার গঠন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সরকারে একটি উপদেষ্টামন্ডলী গঠন করেছিলেন। ছয় সদস্যের এই উপদেষ্টামন্ডলী ছিল মন্ত্রীদের চেয়েও ক্ষমতাবান। অবশ্য ২০১৪’র পর থেকে উপদেষ্টামন্ডলীর কার্যক্রম আস্তে আস্তে সীমিত হতে থাকে। এখন উপদেষ্টা মন্ডলীর মধ্যে দু’একজন ছাড়া কেউই সক্রিয় নন। আর এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, একটি ১০ সদস্যের উপদেষ্টামন্ডলী থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটা ভারসাম্যমূলক অবস্থা প্রতিষ্ঠা হতে পারে। 

নির্বাচনকালীন সরকারে উপদেষ্টামন্ডলী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে সমস্ত ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, পিপিআরসি’র চেয়ারপার্সন হোসেন জিল্লুর রহমান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বেলার নির্বাহী পরিচালক রিজওয়ানা হাসান, মার্কিন প্রবাসী বাঙালি ইলিনয় ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজসহ আরও ব্যক্তিবর্গ। তবে এটি মাঠে গড়ালে এদের অনেকের ব্যাপারেই আওয়ামী লীগের আপত্তি থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনকালীন সরকার কিভাবে হবে, তা নিয়ে আরও দীর্ঘ আলোচনা এবং বিতর্ক হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭