ইনসাইড পলিটিক্স

ক্যাশিয়ার মিন্টুকে নিয়ে বিএনপিতে নানা জল্পনা


প্রকাশ: 25/08/2023


Thumbnail

আবদুল আউয়াল মিন্টু বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে পরিচিত ক্যাশিয়ার মিন্টু হিসেবে। ২০১৩ সালের আন্দোলনে আবদুল আউয়াল মিন্টু ছিলেন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এই সময় তিনি বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কোথায় বোমা ফুটাতে হবে, কোথায় বাসে আগুন দিতে হবে, কোথায় মিছিলের জন্য টাকা দিতে হবে সব দায়িত্ব পালন করতেন আবদুল আওয়াল মিন্টু। সে থেকেই তিনি ক্যাশিয়ার মিন্টু হিসেবে বিএনপিতে পরিচিতি লাভ করেন। 

বিএনপি নেতারা বলছেন, বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন আব্দুল আউয়াল মিন্টু। বেগম খালেদা জিয়ার নাম ব্যবহার করে এই চাঁদা আদায় করা হতো। চাঁদার একটা অংশ মিন্টু নিজের কাছে রেখে বাকি অংশ আন্দোলনের খরচ জোগানোর জন্য ব্যবহার করতেন। বিএনপির হাইকমান্ড থেকেও বলে দেয়া হয়েছিল যে, যারা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে তারা মিন্টুর কাছ থেকে টাকা পাবেন। মিন্টুর কাছে তালিকা পাঠানো হতো সেই তালিকা অনুযায়ী মিন্টু বিভিন্ন পর্যায়ের সারাদেশে নেতাকর্মীদের কাছে টাকা পাঠিয়ে দিতেন। ২০১৪ সালেও তিনি একই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। 

২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ সময় মিন্টুকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তহবিল সংগ্রহ এবং মনোনয়ন বাণিজ্যের। এ সময় লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছিলেন আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং তার পুত্র তাবিথ আউয়াল। তারাই বিভিন্ন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন, মনোনয়ন পেলে কত টাকা দিবেন তা চূড়ান্ত ফয়সালা হতো। টাকা মিন্টুর কাছে পৌঁছানোর পর লন্ডনে বার্তা যেত এবং সেখান থেকে মনোনয়ন চূড়ান্ত হতো। কিন্তু সেই মনোনয়ন দিতে গিয়ে গুবলেট করে ফেলেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। একেক আসনে তিনি থেকে চারজনকে প্রতিশ্রুতি দেন যে, টাকা দিলে তিনি মনোনয়ন পাবেন এবং তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে টাকা নেন। এ সব টাকা শেষ পর্যন্ত তিনি কি করেছেন এবং কত টাকা লন্ডনে দিয়েছেন এ নিয়ে বিএনপির হাই কমান্ডের মধ্যে নানারকম কথাবার্তা রয়েছে। ওই নির্বাচনের পর যারা মনোনয়ন পেয়েছেন এবং যারা মনোনয়ন পাননি সবাই আবদুল আউয়াল মিন্টুর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে যান। মনোনয়নের জন্য চাহিদা মতো টাকা দেওয়ার পরও কেন একাধিক ব্যক্তি প্রার্থী হলেন এ নিয়ে আবদুল আউয়াল মিন্টুর ওপর অনেকে ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন। তাছাড়া প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও মনোনয়ন না পেয়েও অনেকে আবদুল আউয়াল মিন্টুর ওপর ক্ষুব্ধ হন। এরকম পরিস্থিতিতে নিজেকে আস্তে আস্তে গুটিয়ে রাখেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। 

২০১৮ এর পর থেকেই রাজনীতির মাঠে আবদুল আউয়াল মিন্টুর উপস্থিতি ছিল খুবই কম। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবার তৎপর হয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যাওয়া এই নেতা। আবদুল আউয়াল মিন্টু আবার এখন বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বিশেষ করে ভারতের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়ন ঠিক করার দায়িত্ব আবদুল আউয়াল মিন্টুকে দেওয়া হচ্ছে এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে বিএনপিতে। বিএনপির বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ করছেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাই তাকে নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠেছে যে, কোন মতলবে মিন্টু আবারও সক্রিয় হয়েছেন। 

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। সেই ক্ষমতায় আসার পিছনে আবদুল আউয়াল মিন্টুর একটা বড় ভূমিকা ছিল বলেই অনেকে মনে করেন। আবার ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে আবদুল আউয়াল মিন্টু আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে বিএনপিতে যোগদান করেন এবং সেই নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করার ক্ষেত্রে মিন্টুর একটা ভূমিকা ছিল। কিন্তু সেই মিন্টু ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে একজন অর্থ পিপাষু ব্যক্তি হিসেবে বিএনপিতে পরিচিতি লাভ করেন। টাকা নয়ছয়ের ক্ষেত্রেও তার জুড়ি মেলা ভার বলে বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন। এরকম বাস্তবতায় মিন্টু আবার সক্রিয় হলেন কার পক্ষে এ নিয়ে বিএনপিতে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭