আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রশাসনে একটা নিরপেক্ষ অবয়ব দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এ জন্য প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিরপেক্ষ ব্যক্তি দেওয়ার চিন্তাভাবনা আছে সরকারের মধ্যে। আন্তর্জাতিক মহলও সরকারকে এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে। আর এ কারণেই এখন প্রশাসনের ভেতর নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সন্ধান চলছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখনও জটিলতা কমেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে শেষ পর্যন্ত বিএনপিও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে আসবে এবং তারা বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে কিছু শর্ত দিয়ে। তবে সেই শর্তগুলো কি ধরনের হবে তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি। তবে যে ধরনেরই হোক না কেন নির্বাচনের সময় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা একটি বড় ইস্যু হিসেবে সামনে আসবে। প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে যেন নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা থাকে সেটি নিশ্চিত করতে চাচ্ছে সকল মহল। আর এ কারণেই সরকার প্রশাসনে নিরপেক্ষ ব্যক্তি সন্ধান করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিভিন্ন বিদেশী রাষ্ট্র এবং নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করতে চান—এরকম পক্ষগণ প্রশাসনের ব্যাপারে কয়েকটি শর্ত দিয়েছে। তাতে বলা হচ্ছে যে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকা কোন ব্যক্তি নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকতে পারবেনা। বিভিন্ন মহল মনে করছেন যে, নির্বাচনের আগে পাঁচ থেকে সাতটি মন্ত্রণালয় অন্তত গুরুত্বপূর্ণ। যেগুলো সরাসরি নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং অর্থ বিভিাগ। এ সমস্ত জায়গাগুলোতে যেন সচিব পদে দল নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা থাকেন এবং কোন চুক্তিভিত্তিক ব্যক্তি না থাকেন সেটি নিশ্চিত করতে চাইছে। সরকার নীতিগতভাবে বিষয়টিতে একমত।
বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিবের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী অক্টোবর মাসে। এক্ষেত্রে তাকে যদি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয় তাহলে বিরোধীপক্ষরা কিভাবে নেবে সেটা বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের ইচ্ছা তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া। আবার যারা নির্বাচন করতে চায়, এমনকি জাতীয় পার্টি পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে নির্বাচনের প্রভাব বিস্তার করতে পারে—এমন কোন মন্ত্রণালয়ে সচিব নিয়োগ করার বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। আর তাই শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগ। এখানে একটি বিভাগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রাপ্ত একজন সিনিয়র সচিব রয়েছেন। এই বিষয়টিও সরকারকে বিবেচনা করে দেখতে হবে। এছাড়াও জনপ্রশাসন সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব পদে পরিবর্তন হবে কিনা তা নিয়েও বিভিন্ন রকম আলোচনা চলছে। তবে সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রশাসনে বিভিন্ন পদগুলোতে যারা আছেন তারা সবাই নিরপেক্ষ। আওয়ামী লীগ প্রশাসনে কোন দলীয়করণ করেননি। যোগ্যতা এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ সচিব পদে নিয়োগ দান করা হয়েছে। তবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ব্যাপারে সরকার অনেকটা নমনীয় অবস্থান যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সমঝোতার স্বার্থে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রাপ্ত কাউকেই নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুলোর সচিব পদে না রাখার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে প্রশাসনে একটা বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আগামী অক্টোবরের শেষ দিকে এই ধরণের পরিবর্তন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।