ইনসাইড বাংলাদেশ

নির্বাচনের মাঠে চাপে আট মন্ত্রী


প্রকাশ: 26/08/2023


Thumbnail

যে সমস্ত মন্ত্রীরা তাদের মন্ত্রণালয়ের কাজের নানারকম বিতর্কে জড়িয়েছেন, এলাকায় তাদের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। মজার ব্যাপার হলো আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে যে, আগে জনপ্রিয় ছিলেন কিন্তু মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার পর নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার কারণে তাদের জনপ্রিয়তা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। ওই সব আসনে যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি-জামাত অংশগ্রহণ করে তাহলে বড় ধরনের শঙ্কায় পড়বেন এই সমস্ত মন্ত্রীরা। আর আওয়ামী লীগ এই জরিপের ভিত্তিতে তাদের কৌশল ঠিক করবে বলে একাধিক আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতা বাংলা ইনসাইডারকে জানিয়েছেন। যে সমস্ত মন্ত্রীরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় চাপে আছে তাদের মধ্যে রয়েছেন;

নূরুল ইসলাম সুজন,পঞ্চগড়-২: নুরুল ইসলাম সুজন, এমপি পঞ্চগড়-২ আসনের একজন জনপ্রিয় প্রার্থী। পারিবারিকভাবেই তিনি এলাকায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। এখন তিনি রেলমন্ত্রীর দায়িত্বে। কিন্তু রেল মন্ত্রী হওয়ার পর নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার রেশ তার নির্বাচনী এলাকায় পড়েছে। তার নির্বাচনী এলাকায় যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি এবং জামাত অংশগ্রহণ করে তাহলে ভালো রকম চাপের মুখেই পড়বেন রেলমন্ত্রী। তার জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারে মিশনে তাকে ভালোই সময় দিতে হবে এবং জনসংযোগ বাড়াতে হবে বলে আওয়ামী লীগের জরিপে মন্তব্য করা হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, রংপুর-৪: রংপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। গত পাঁচ বছরে ব্যর্থতার আলোচনায় সবচেয়ে আলোচিত মন্ত্রীর নাম টিপু মুনশি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে তিনি ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন। দলের ভেতর থেকে তাকে বারবার পদত্যাগের জন্য আহ্বান জানানো হয়। সংসদে যাদেরকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছে তাদের মধ্যে টিপু মুনশি একজন। এতদিন ধরে এলাকায় তিনি একজন সজ্জন এবং জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু মন্ত্রী হওয়ার পর তার এলাকাতেও জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী এই এলাকায় তার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন এমন তথ্য উঠে এসেছে আওয়ামী লীগের জরিপে। অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে টিপু মুনশি রংপুর-৪ আসনে কি করবেন তা অনিশ্চিত। 

জুনায়েদ আহমেদ পলক, নাটোর-৩: জুনায়েদ আহমেদ পলক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দুই মেয়াদে। এলাকায় তিনি নানা রকম উন্নয়নমুখী এবং ব্যতিক্রম তৎপরতার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনি সমালোচিত বটে। আর এই সমালোচনার ঢেউ পড়েছে তার নির্বাচনী এলাকা নাটক-৩ আসনে। তবে আওয়ামী লীগের জরিপে দেখা গেছে যে, তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনে যতটা না এলাকায় ব্যাকফুটে গেছেন তার চেয়ে বেশি তার নড়বড়ে অবস্থা তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য। তার নির্বাচনী এলাকায় নাটোর আওয়ামী লীগের একটি অংশ নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে অব্যাহতভাবে। তার প্রভাব পড়েছে ভোটারদের মধ্যে। এই নির্বাচনী এলাকায় তিনি এখন দলের কারণেই চাপের মুখে পড়েছেন। আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে হলে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বন্ধ করতে হবে বলেই জরিপে মন্তব্য করা হয়েছে। 

বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, খুলনা-৩: খুলনা-৩ আসেন থেকে মুন্নুজান সুফিয়ান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি শ্রম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু শ্রম মন্ত্রণালয়ের নানা বিতর্কের কারণে এলাকায় তার জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। এই আসনে তিনি আবার নির্বাচনে প্রার্থী হলে তাকে বড় ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে বলে জানা গেছে। 

জাহিদ মালেক, মানিকগঞ্জ-৩: জাহিদ মালেক মানিকগঞ্জ-৩ আসন থেকে পরপর তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি একদা জাতীয় পার্টির নেতা কর্নেল মালেক এর পুত্র। এই নির্বাচনী এলাকায় দুটি পরিবারের প্রভাব সর্বজনবিদিত। একটি মুন্ন পরিবার অন্যটি কর্নেল মালেক এর পরিবার। তবে এবার মন্ত্রী হওয়ার পর নানা রকম বিতর্কের কারণে তার নির্বাচনী এলাকায় তিনি এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। বিশেষ করে এসেনশিয়াল ড্রাগের জমি সংক্রান্ত বিতর্ক নিয়ে তার এলাকায় এখন নানা রকম আলাপ আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই মনে করেন যে, শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ অংশগ্রহণ করে তাহলে জাহিদ মালেককে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়াতে হতে পারে। 

নসরুল হামিদ বিপু, ঢাকা-৩: নসরুল হামিদ বিপু, ঢাকা-৩ আসনের একজন জনপ্রিয় প্রার্থী। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। কিন্তু লোডশেডিং, বিদ্যুৎখাত নিয়ে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সমালোচনার ঢেউ আছড়ে পড়েছে তার নির্বাচনী এলাকায়। অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তাঁর নির্বাচনী এলাকার সমস্যাটা অন্য রকম। সেখানে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রয়েছেন। যিনি নানা কারণে আলোচিত। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে বিএনপি এলে নসরুল হামিদকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়তে হবে।

ইমরান আহমদ, সিলেট-৪: সিলেট-৪ থেকে নির্বাচিত ইমরান আহমদ প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী। এই মন্ত্রণালয়কে নিয়ে প্রায় নানা রকম বিতর্ক এসেছে। তাছাড়া তিনি বয়সের ভারে জর্জরিত। তবে এলাকায় তার কোণঠাসা হওয়ার প্রধান কারণ আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বলে মনে করেন অনেকে। 

আ হ ম মোস্তফা কামাল, কুমিল্লা-১০: বাংলাদেশের আলোচিত ও বিতর্কিত মন্ত্রীদের মধ্যে অন্যতম আমাদের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডে তিনি প্রায় অনুপস্থিত থাকেন। কিন্তু এ রকম অবস্থায় তিনি যদি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং সেই নির্বাচন যদি অংশগ্রহণমূলক হয় তাহলে তার ভরাডুবি অনেকটা নিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জরিপে। এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদলের তাগিদও দিয়েছে। 

বিভিন্ন জরিপ থেকে এই আট মন্ত্রীর যে ব্যাকফুটে যাওয়ার অবস্থান চিত্রিত করা হয়েছে তার সঙ্গে তাদের মন্ত্রণালয়ের কাজের ব্যর্থতার সম্পর্ক আছে কিনা তা অবশ্য গভীরভাবে বিচার বিশ্লেষণ করা দরকার। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭