ইনসাইড পলিটিক্স

কর্মীদের এতিম করে বিএনপির শীর্ষ নেতারা সিঙ্গাপুর পালাচ্ছেন কেন?


প্রকাশ: 26/08/2023


Thumbnail

বিএনপির তিন শীর্ষ নেতা এখন সিঙ্গাপুরে। এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করে দলের তিন শীর্ষ নেতার সিঙ্গাপুর যাওয়া নিয়ে বিএনপির কর্মীদের মধ্যে এখন তোলপাড় চলছে।  এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করেই বিএনপি ক্ষান্ত হয়নি, যেকোনো মুহূর্তে সরকারকে ফেলে দেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। আর সেই রকম একটি উচ্চারণ এবং কর্মসূচির পর বিএনপির নেতারা যখন একে একে সিঙ্গাপুর পালাচ্ছেন, তখন কর্মীদের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠছে। বিএনপি নেতারা কেন সিঙ্গাপুর পালাচ্ছেন, তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে বিএনপি নেতাদের মধ্যে। 

উল্লেখ্য যে, প্রথমে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সিঙ্গাপুরে যান তার চিকিৎসার জন্য। তার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি সিঙ্গাপুরে আছেন। বিএনপির প্রধান প্রধান নেতা বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা তারেক জিয়া লন্ডনে পলাতক। সেই হিসেবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করা হতো এই দুই শীর্ষ নেতার পরেই। তার অনুপস্থিতিতেই স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যরা দলের হাল ধরবেন, এটাই ছিল প্রত্যাশিত এবং গত কয়েক বছর ধরেই দল পরিচালিত হচ্ছিল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্যান্যবারের মতোই আন্দোলনের মাঝপথে সবাইকে রেখে সিঙ্গাপুরে যান সস্ত্রীক। 

তার ঘনিষ্ঠরা বলছেন, তিনি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেছেন। প্রশ্ন উঠেছে যে, আন্দোলনের এই সমযয়ে তাকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যেতে হলো কেন? দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া যখন দেশেই চিকিৎসা নিচ্ছেন, তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কি সমস্যা হলো দেশে চিকিৎসা নেওয়ার? দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও আজ সস্ত্রীক সিঙ্গাপুর চলে গেছেন। মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আবার বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাও বটে! কাজেই বিএনপি’র এখন চার জন নেতার সিঙ্গাপুরে অবস্থান নিয়ে এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে দলটির ভেতরে। তারা কি আন্দোলন ব্যর্থ হবে, এটা জেনে আগাম পালিয়েছেন? নাকি অন্য কোন কৌশলের জন্য তারা সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন? না কি ব্যাপারটি স্রেফ কাকতলীয়, চিকিৎসার জন্যই তারা সিঙ্গাপুর গেছেন? ফিরে আসবেন। 

বিএনপি নেতারা বিষয়টি কি ঠিকঠাকভাবে নিতে পারছেন না। এই মেনে নিতে না পারার প্রধান কারণ হলো, বেগম খালেদা জিয়া যখন দেশেই চিকিৎসা গ্রহণ করছেন, তখন নেতারা একের পর এক সিঙ্গাপুরে যাচ্ছেন, সরকার তাদেরকে সিঙ্গাপুর যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে। কিসের ভিত্তিতে? তার মানে কি সরকারের সঙ্গে তাদের গোপন সমঝোতা হয়েছে? 

এর আগে মির্জা আব্বাসকে একাধিকবার বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকার বাধা দিয়েছিল। তার পাসপোর্টও আটক করা হয়েছিল। কিন্তু এবার তিনি সস্ত্রীক সিঙ্গাপুর যাওয়ার অনুমতি পেলেন কিসের ভিত্তিতে? - এই প্রশ্নটি বিএনপির কর্মীদের মধ্যে বেশ বড় আকারেই দেখা দিচ্ছে। কোনো কোনো নেতা অবশ্য মনে করছেন, সিঙ্গাপুরে তারা যাচ্ছেন গোপন শলা-পরামর্শ করার জন্য। তারেক জিয়ার দু’জন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি নিয়মিত সিঙ্গাপুরে যান। এর আগেও ২০১৮’র নির্বাচনের আগে তারেকের প্রতিনিধিরা সিঙ্গাপুরে এসেছিলেন এবং সেখানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আবদুল আওয়াল মিন্টু, আমীর খসরু মাহমুদ একসাথে বসে নির্বাচনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। এবারও কি সে রকম কিছু ঘটতে যাচ্ছে? 

কোনো কোনো বিএনপির নেতারা মনে করেন, সিঙ্গাপুরে তারেক জিয়ার সাথে তাদের সরাসরি কোন একটা পরামর্শ গ্রহণের বিষয় রয়েছে। কারণ বাংলাদেশে এদের প্রত্যেকের ফোন ইন্টাসেপ্ট হয়। এ কারণে তারা সিঙ্গাপুর গিয়ে নির্বিঘ্নে আন্দোলন এবং নির্বাচনের ব্যাপারে পরামর্শ করার জন্য গেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মনে করছে, সামনে আন্দোলনের ব্যাপারে তারেক জিয়ার খোলামেলা অবস্থান জানার জন্যই তারা সিঙ্গাপুর সফর করছেন। তবে এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন অধিকাংশ বিএনপি নেতা। তারা মনে করেন, এই যুগে তারেক জিয়ার সঙ্গে কথা বলার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া তারেক জিয়ার এখন কোন বৈধ পাসপোর্ট নেই। তিনি সিঙ্গাপুরে আসতে পারেন না। যদি তারা তারেক জিয়ার সাথে কথা বলতে যেতেন, তাহলে তাদেরকে লন্ডনে যেতে হতো, সিঙ্গাপুরে নয়। কাজেই গোপন পরামর্শের জন্য এই তিনি নেতা সিঙ্গাপুরে গেছেন, এটি ঠিক নয়। 

তবে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান গ্রহণের জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং মির্জা আব্বাস সিঙ্গাপুরে গেছেন কিনা, তা নিয়ে বিএনপিতে আলাপ-আলোচনা ভালোই আছে। তবে বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করছেন, আসলে এক দফা আন্দোলন শেষ পর্যন্ত হবে না, বিএনপি নির্বাচনে যাবে এবং নির্বাচনের আগে শরীরটা ঝালাই করে নেওয়ার জন্যই তারা সিঙ্গাপুরে গেছেন। খুব কমসংখ্যক বিএনপি নেতা মনে করছেন, এটা কাকতালীয় ব্যাপার, তারা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়েছেন, অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য যেতেই পারেন, এটির মধ্যে দোষের কিছু নেই। 

কিন্তু এক দফা আন্দোলন ঘোষণার পর দলের গুরুত্বপূর্ণ সব নেতা দেশের বাইরে চলে যাওয়া বিএনপি’র জন্য একটা বড় ধরনের আঘাত বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে আরও অন্তত তিনজন রয়েছেন, যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ, একজন রয়েছেন দেশের বাইরে। এ অবস্থায় বিএনপির এক দফা আন্দোলনও যে রোগাক্রান্ত হয়েছে, সে ব্যাপারে বিএনপি’র কোনো কর্মীরই কোনো সন্দেহ নেই। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭