ইনসাইড পলিটিক্স

তিন নেতার সিঙ্গাপুর সফর: ক্ষুব্ধ-হতাশ বেগম জিয়া


প্রকাশ: 27/08/2023


Thumbnail

বেগম খালেদা জিয়া কারান্তরীণ রয়েছেন। সরকারের বিশেষ অনুকম্পায় জামিন পেয়ে তিনি ফিরোজায় অবস্থান করার অনুমতি পেয়েছেন। সেখানে থেকে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই মূহুর্তে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওওয়ার অনুমতির জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে এখন পর্যন্ত এই অনুমতি দেননি। 

আইন মন্ত্রণালয় বলে দিয়েছে, যেহেতু সরকার ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারা একবার প্রয়োগ করেছে কাজেই তার (খালেদা জিয়া) ক্ষেত্রে আর বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারার যে শর্ত বেগম জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছে সেই শর্তের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার কথা নেই। বরং তিনি নিজ বাসভবনে থেকে চিকিৎসা নেবেন-এমনটি বলা হয়েছে। ফলে বেগম জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার আবেদন করতে গেলে নতুন করে আবার আবেদন করতে হবে। তার আগে তাকে জেলে যেতে হবে। 

আইনি এই মারপ্যাঁচে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার হচ্ছে না। তবে বিভিন্ন মহল মনে করে, বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। বিএনপিকে নির্বাচনের মাঠে আনার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে-এমন অভিযোগও কোনো কোনো মহল থেকে করা হচ্ছে। যদিও  সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি বলে দেয়া হয়েছে যে, বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যাওয়ার অনুমতির সাথে বিএনপি নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো বেগম খালদা জিয়া এখন পর্যন্ত বিদেশে যাওয়ার অনুমতি পাননি। 

দলের প্রধান যখন বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পাননি সে সময় বিএনপির তিন নেতা সিঙ্গাপুরে গেছেন উন্নত চিকিৎসার জন্য। এই তিন নেতার মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ছাড়া কারো শারীরিক অবস্থা তেমন গুরুতর না। তারা গেছেন শুধু রুটিন চেকআপের জন্য। যখন বিএনপি বাঁচা মরার এক দফা আন্দোলন করছে সে সময় আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে সিঙ্গাপুরে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোটাকে অনেকে মনে করছেন আন্দোলনের সাথে তামাশা। তবে বেগম খালেদা জিয়া মনে করছেন অন্য জিনিস। তিনি মনে বরেছেন যে, এই নেতাদের সাথে সরকারের যে গোপন যোগাযোগ রয়েছে তা স্পষ্ট হয়েছে তাদের সিঙ্গাপুরে টিকিৎসার করতে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। কারণ সরকারের সাথে সমঝোতা ছাড়া বিদেশে যেতে পারেন- সেটি বেগম খালেদা জিয়া অন্তত বিশ্বাস করেন না।

বিএনপির যে তিন নেতা বিদেশ গেছেন তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ১০টির বেশি মামলা রয়েছে এবং প্রত্যেকটি মামলা থেকে তারা জামিনে রয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে রয়েছে ৮৭টি মামলা। মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ১৬ টি মামলা রয়েছে। এই অবস্থায় তারা কিভাবে বিদেশ যান সরকারের সাথে সমঝোতা না করে সেই প্রশ্ন বেগম খালেদা জিয়ার। এর মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি যেমন দুবর্ল হয়েছে তেমনি এক দফা আন্দোলনও মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে, বিএনপি নেতাদের সাথে আসলে সরকারের গোপন যোগসাজশ রয়েছে। যে কারণে এক দফা আন্দোলনও আসলে একটি সাজানো নাটক হচ্ছে। এই আন্দোলনের যেকোনো পর্যায়ে বিএনপির পক্ষ থেকে এই নেতারা দলকে নির্বাচনমুখী করবেন এবং নির্বাচনে মাধ্যমে এই সরকার আরেকবার ক্ষমতায় আসার সুযোগ পাবে।

বেগম খালেদা জিয়া ঘনিষ্ঠরা মনে করেন যে, নেতাদের উচিত ছিল একটি নৈতিক অবস্থান নেয়া। যেহেতু তাদের দলীয় প্রধান সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না, উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছেন না সেহেতু তাদেরও দেশে চিকিৎসা গ্রহণ করা ছিল নৈতিক অবস্থান থেকে কিন্তু সেটি তারা করেননি। যারা নেতার জন্য সামান্য ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন না, তারা এক দফা আন্দোলন করবেন কিভাবে এবং কর্মীদের আস্থা অর্জন করবেন কিভাবে- এই প্রশ্ন শুধু বেগম খালেদার না, বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেও। তাই অনেকে মনে করছেন যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে সমঝোতা এবং আপসের  কৌশলের খেলা সেই কৌশলের খেলায় বিএনপি বারবার মুখ থুবড়ে পড়ছে কিছু নেতার লোভ এবং আপসকামিতার কারণে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭