ইনসাইড পলিটিক্স

রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধান : শেষ ভরসা কি জাতীয় পার্টি?


প্রকাশ: 27/08/2023


Thumbnail

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, দেশের রাজনীতিতে ততই উত্তাপ বাড়ছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে চা দোকান পর্যন্ত গড়িয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে আসছে না, সেহেতু নির্বাচন হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আবার কেউ কেউ বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলেও যথাসময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচন সম্পন্ন করবে, যথাসময়ে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন এবং এই নির্বাচনে কে অংশগ্রহণ করলো, বা কে করলো না, সেটা প্রতিটি দলের নিজস্ব ব্যাপার।

একদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ তাদের শরিকরা সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে যেমন অনড়, অন্যদিকে একইভাবে বিএনপিসহ বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার একদফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। দুই পক্ষই কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এ অবস্থায় আগামী দিনে সব রাজনৈতিক দল নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রশ্নেও জনমনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পারিবারিক বা সামাজিক আড্ডায় রাজনৈতিক আলোচনা উঠলেই সামনে আসছে নির্বাচন প্রসঙ্গ। প্রশ্ন উঠেছে ভোট হবে কি না?

ভোট হলে কীভাবে হবে? বিএনপিসহ শরিক দলগুলো আসবে কি না? যদি তারা না আসে, সেক্ষেত্রে নির্বাচন কি অংশগ্রহণমূলক হবে? যদি অংশগ্রহণমূলক না হয় তবে বিশ্ব কি এই নির্বাচন মেনে নেবে? - প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনায় আড্ডা জমে ওঠে। অনেক সময় এ ধরনের আড্ডায়ও দুটি পক্ষ দাঁড়িয়ে যায়। পক্ষে-বিপক্ষে চলে ধুন্ধুমার কথার লাড়াই। এ লড়াই থেকেই উঠে আসে নির্বাচন ঘিরে ধোঁয়াটে পরিস্থিতির চিত্র। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের  প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমঝোতার পথে হাঁটার পরিবর্তে অবস্থান নিয়েছে দুই মেরুতে। এতে করে রাজনৈতিক সঙ্কট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। পালটাপালটি কর্মসূচি দিয়ে মাঠের রাজনীতি সরব রাখলেও চলমান সঙ্কট থেকে উত্তরণে সমাধান কোন পথে, তা বলছে না কোনো পক্ষই। এমনকি কোনো পক্ষ থেকেই সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়ার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। ফলে বড় দুইটি দল যদি সমঝোতার পথে না আসে, তবে রাজনৈতিক এই সঙ্কট আরও বিকট আকার ধারন করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।   

তবে বাংলাদেশের আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সঙ্কট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিনিধিসহ অনেকেই কথা বলেছেন। তারা বলেছন, তারা সংলাপের পক্ষে। কিন্তু এই সংলাপের সঙ্গে তারা যুক্ত হচ্ছে না। তারা আরও বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকেই এ সংকট সমাধান করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিনিধিরা সংলাপের কথা বললেও কোন পথে বা কিভাবে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে তারা কোনো প্রকার দিক নির্দেশনা দেয়নি। তবে সম্প্রতি ভারত বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে উদ্যোগী হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সংশ্লিষ্ট্র সূত্র। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র আমন্ত্রণে ভারত সফর করেছেন। সফর থেকে ফিরে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের নেতারা জানিয়েছেন, ভারত বাংলাদেশে একটি  অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। এর পরেই ভারত সফরে গিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়াম্যান জি এম কাদের। তবে জি এম কাদেরের সঙ্গে ভারতের কি কথা হয়েছে, তা নিয়ে তিনি গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে নারাজ। এর পর বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলেরও ভারতদ সফরের কথা রয়েছে বলে একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে। 

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচন এলেই জাতীয় পার্টির দাম বাড়ে। জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় একটি ফ্যাক্ট হিসেবে পরিণত হয়। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, তা জাতীয় পার্টির মাধ্যমেই  সমাধানের একটি পথ রয়েছে। কারণ বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, তাহলে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে জাতীয় পার্টি। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের একটি পথ হতে পারে। জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ভারতকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এছাড়াও তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে এক সাক্ষাতে জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টি এককভাবে ৩শ’ আসনেই নির্বাচনে প্রার্থী দিবে। যদি জাতীয় পার্টি এটি করে, তবে বিএনপি নির্বাচনে না এলেও রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন খানিকটা হলেও সম্ভব।             

এই পরিস্থিতিতে বেশ ঢাকঢোল পিটিয়েই আওয়ামী লীগসহ তাদের শরিকরা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। বসে নেই সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও। তবে বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের বলয়ের দলগুলোর তৃণমূলের নেতারা আন্দোলনে সক্রিয়। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরাও নির্বাচন সামনে রেখে বেশ তৎপর। তবু ভোটের আবহ তৈরি হচ্ছে না কোথাও। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে নাকি বিএনপিসহ একটি বড় অংশ নির্বাচন বর্জন করবে-এমন সব জিজ্ঞাসা রাজনীতির অন্দরমহল থেকে প্রকাশ্যে চলে আসছে। রাজনৈতিক দলগুলোর এই মুখোমুখি অবস্থানে জনগণের শঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা, বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

তিনি শনিবার (২৬ আগস্ট) গণমাধ্যমকে বলেন, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তা কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না। তাই সমাধানের পথ খোঁজা জরুরি। বিগত দুটি নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কেমন হয়, তা দেশবাসী দেখেছে। দিনের ভোট রাতেই হয়ে গেছে। মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তাই দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে-মানুষ এই কথা আর বিশ্বাস করে না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এখন আর সরকারকে বিশ্বাস করে না। কিন্তু তাদের দাবি কোন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়িত হবে, এ বিষয়টিও খোলাসা করে বলতে হবে। এজন্য আলোচনায় বসতে হবে। আর আলোচনার এই উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। তা না হলে দেশে সংঘাত-সহিংসতার পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা আছে।

তবে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনো সুযোগ নেই দাবি করেন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি শনিবার (২৬ আগস্ট) গণমাধ্যমকে বলেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) একটি গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক সরকারের পরিবর্তে আরেকটি অসাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠার কথা বলছে। তারা সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদী শক্তিকে উসকে দিয়ে এবং ধর্মের নামে তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতে চায়। তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব না। মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধে বৈষম্যহীন, শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। তাই তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনো সুযোগ নেই।

সংকট উত্তরণে আলোচনার বিকল্প নেই দাবি করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, একদল যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া। আরেক দল যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় যেতে মরিয়া। এরা কেউ জনগণের কথা ভাবে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এতে সঙ্কট বাড়বে ছাড়া কমবে না। সংকট উত্তরণে প্রয়োজন আলাপ-আলোচনায় বসা। আমরা আগেই বলেছি, সবাই মিলে আলোচনার টেবিলে বসলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কীভাবে আয়োজন করা সম্ভব, এ বিষয়ে ফর্মুলা দেব। এ বিষয়ে আমাদের নিজস্ব ফর্মুলা আছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭