ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচনমুখী বিএনপি: আওয়ামী লীগ কি উদ্বিগ্ন


প্রকাশ: 27/08/2023


Thumbnail

কদিন আগেই বিএনপির নেতারা বলছিলেন, এক দফা আদায় ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না এবং এ রকম নির্বাচন তারা করতেও দেবেন না। এ রকম একটি পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। কিন্তু এক দফা আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়েছে গণমিছিল এবং কালো পতাকা মিছিলের মধ্যে এক দফা আন্দোলন ঘুরপাক খাচ্ছে। বিএনপির নেতারা, এমনকি কর্মীরাও স্বীকার করেন যে, এ ধরনের কর্মসূচি দিয়ে আর যাই হোক নির্বাচন প্রতিরোধ করা যাবে না। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, কৌশলগত কারণে বিএনপি এখন আন্দোলন ঢিমে তাল দিয়েছে। তারা আসলে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কূটনীতিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। বর্তমান সরকারের অধীনে সম্মানজনক একটি সমাধানের মাধ্যমে তারা নির্বাচনে যেতে চায়। কূটনীতিকরা বিএনপিকে আশ্বস্ত করেছে, অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন যেন হয় সেটি তারা নিশ্চিত করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিষ্কার ভাবে বিএনপিকে জানিয়েছে দিয়েছে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন যেন হয় সেটি দেখভাল করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনের পরে প্রয়োজন হলে নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়া থেকে বিরত থাকা এমনকি নানা রকম নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কথাও বলে বিএনপিকে আশ্বাস্ত করেছে। আর সে কারণেই বিএনপি আন্দোলনের লাগাম টেনে ধরছে, নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছে গোপনে গোপনে।

আনুষ্ঠানিক ভাবে বিএনপি এখন কিছুই ঘোঘণা করেনি। তবে বিএনপির নেতাদের কথাবার্তা এবং বিভিন্ন ধরনের কর্ম তৎপরতায় স্পষ্ট হয়েছে যে, দলটি নির্বাচনমুখী। সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন নির্বাচনের ব্যাপারে প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছে। কারা মনোনয়ন পাবে তা নিয়ে যাচাই বাছাই চলছে দলটির মধ্যে। বিএনপির নেতারা অনানুষ্ঠানিক আলাপ চারিতায় স্বীকার করেছেন যে, এবার ২০১৮ সালের মত নির্বাচন হবে না। আন্তর্জাতিক মহল এ নির্বাচনকে কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখবে। এ রকম পরিস্থিতিতে বিএনপি যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে এটি মোটামুটি নিশ্চিত। আর এটি আওয়ামী লীগের জন্য খুশির খবর হলেও আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশই এতে অখুশি।

আওয়ামী লীগে যারা ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন, যারা বাংলাদেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে কখনো অংশগ্রহণ করেননি তারা এখন মুখ বেজার করেছেন। তাদের অনেকের মধ্যেই এখন আতঙ্ক এবং উদ্বেগ। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই স্বীকার করছেন যে, এবারের নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ হবে। এটি প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গিকার। তাছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত সহ সবাই একটি ব্যাপারে একমত তা হলো নির্বাচন হতে হবে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ। এর মধ্যে কোন রকম কিন্তু থাকবে না। আর তাই যদি হয় তাহলে  আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জে নির্বাচন হবে বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই মনে করছেন।

টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় আছে বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধী একটি মনোভাব সব সময় কাজ করে। যারা টানা ক্ষমতায় থাকে তাদের প্রতি একটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয় বিভিন্ন সময়। এ রকম বাস্তবতায় আওয়ামী লীগকে একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতে পারে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। তাছাড়া গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু নেতার আচার-আচরণ তাদের জনগণের প্রতি মনোভাব এবং দৃষ্টিভঙ্গি এক ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে সাধারণ মানুষের ওপর। সব কিছু মিলিয়ে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং সেই নির্বাচন যদি অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ হয় তাহলে আওয়ামী লীগকে ২০০৮ এর পর সবচেয়ে কঠিন একটা নির্বাচনী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে এ রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আওয়ামী লীগের কতজন প্রস্তুত।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, এ ধরনের নির্বাচন হলে অর্থাৎ বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসে তাহলে পরে অন্তত অর্ধেক আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের কোন বিকল্প নেই। আর আওয়ামী লীগ এখন এ রকম একটি পরিকল্পনা থেকে এগোচ্ছে। আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে আওয়ামী লীগকেও কৌশলী হতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে বিএনপির হঠাৎ করে কৌশল পরিবর্তন আওয়ামী লীগের কাউকে কাউকে এক ধরনের উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের অনেকে মনে করছে সামনের পরিস্থিতি অত ভালো নয়। নির্বাচনে জয়ী হতে গেলে আওয়ামী লীগকে সবকিছু উজার করে দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যার কোন বিকল্প নেই।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭