ইনসাইড বাংলাদেশ

অবিলম্বে খাদিজাকে মুক্তি দিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন


প্রকাশ: 28/08/2023


Thumbnail

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী  খাদিজাতুল কুবরার বিনা বিচারে কারাবন্দীর এক বছর অতিবাহিত হওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। 

 

সোমবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়।

 

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন,  খাদিজাতুল কুবরাকে বিনা বিচারে ৩৬৫ দিন জামিন না দিয়ে কারাগারে আটক রাখা স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। খাদিজার আটকের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে সরকার। এ ভয়ের সংস্কৃতি এতটাই প্রখর হয়েছে যে তার কারনে খাদিজার উপর চলমান অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকেরা মুখ বন্ধ করে আছে। এটা চলতে পারে না। 

 

তারা আরও বলেন, খাদিজাকে যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা দেওয়া হয়েছে তা কখনোই রাষ্ট্রদ্রোহী হতে পারে না। খাদিজা যে প্রশ্নগুলো করেছিলো সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সে প্রশ্নগুলো সকল সাধারন মানুষের মনের কথা। আমরা আজকে খাদিজার মুক্তি নিয়ে লড়াই করেছি এটা শুধু খাদিজার মুক্তির জন্য নয় এটা আমাদের সকলের মুক্তির জন্য লড়াই। 

 

মানববন্ধনে খাদিজার সহপাঠী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসলিমা জাহান মুন বলেন, বাকস্বাধীনতা বলে আমাদের যে একটি সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে সেটার সুফল আমরা আজ কোথায় পাচ্ছি? আজ দেশে যদি বাকস্বাধীনতা থাকতো তাহলে আমার সহপাঠীকে বিনা বিচারে এক বছর কারাগারে থাকতে হতো না। আমরা যদি বাকস্বাধীনতার সুফল না পেয়ে থাকি তাহলে সংবিধান থেকে বাকস্বাধীনতার বিষয়টি তুলে দিতে পারেন। 

 

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৭-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া সোমা বলেন, আমাদের বিশ্বিবদ্যালয়ে একটি অকার্যকর প্রশাসন আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়ার বডির কাছে আমরা গিয়েছিলাম। তারা বলেছে, খাদিজাকে নিয়ে যারা কথা বলবে, তারাও রাষ্ট্র বিরোধীতার অপরাধে দোষী হবে। যারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থী জেলে থাকলেও নির্লিপ্ত অবস্থান গ্রহন করে। এ ধরণের প্রশাসন আমাদের দরকার নেই। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, খাদিজা কি চোর, ডাকাত? সে এ বিশ্ববিদ্যালযের একজন শিক্ষার্থী।  শিক্ষক হিসেবে আপনাদের কি কোন লজ্জা নেই? আপনাদের একজন শিক্ষার্থী একবছর ধরে জেলে আছে। কিন্তু আপনারা তার জন্য কিছুই করতে পারলেন না। এর চেয়ে লজ্জার কিছু হতে পারে না। 

 

মানববন্ধনে খাদিজার মা ফাতেমা খাতুন মোবাইল ফোনে যুক্ত হয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, এক বছর হযে গেল খাদিজাকে আমি পাশে নিয়ে ঘুমাতে পারি না। কোন অপরাধে আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হলো? শুধু একটা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করার জন্য এতদিন জেলে থাকতে হবে? এটা আমার জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। আজ সকলেই কিন্তু আছে আমার মেয়ে নেই। আমার মেয়েকে যেন আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়। সে দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত।  আমি আমার মেয়েকে চিকিৎসা করাতেও পারলাম না। খাদিজাকে চিন্তায় আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।  আমার এমন কোন দিন নেই, যেদিন চোখের পানি না ঝরে। 

 

মানববন্ধনে খাদিজার বোন সিরাজুম মনিরা উপস্থিত হয়ে বলেন, আমার বোন কী অপরাধ করেছে, আজকে এক বছর ধরে জেলে আছে। জেলে দেখা করতে গেলে জিঙ্গেস করে, কেন আমি এতদিন কারাগারে। তখন আমাদের কাছে কোন উত্তর থাকে না। আমার বোন কেন কারাগারে? সে কী এমন অপরাধ করেছে! এতদিন তাকে বিনা বিচারে আটক রাখতে হবে। আমার বোনকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে আগামী নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ব শরীরে উপস্থিত থেকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। 

 

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, আমি শিক্ষকদের প্রতিনিধি হয়ে নয়, নিজের তাড়না থেকে আজকের মানববন্ধনে উপস্থিত হয়েছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এভাবে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে পারে না। একটা শিক্ষার্থী এতদিন কারাগারে আছে, সে কতটা মানসিক বিপর্যস্ত ও ট্রমার মধ্যে আছে! আমি দাবি জানায়, অতিসত্ত্বর তাকে জামিন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সুযোগ দিন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭