ইনসাইড বাংলাদেশ

শেখ হাসিনা-ড. ইউনূস বিরোধ : কোথায় শুরু, কোথায় শেষ?


প্রকাশ: 28/08/2023


Thumbnail

১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ। সেই সময় মোবাইল টেলিফোনের একচেটিয়া মার্কেট ছিল সিটিসেল মোবাইল কোম্পানির। সিটিসেল মোবাইল কোম্পানি ছিল বিএনপি নেতা মোরশেদ খানের। তারা অন্য কোন কোম্পানিকে লাইসেন্স দেননি। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর এই অবস্থা পাল্টে দেন। তিনি গ্রামীণফোনের লাইসেন্স দেন। গ্রামীণফোনকে লাইসেন্স দেয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বক্তব্যে শেখ হাসিনার ভূয়শী প্রশংসা করেছিলেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, কোথাও আমাকে এক কাপ চা পর্যন্ত খাওয়াতে হয়নি এই লাইসেন্স পাওয়ার জন্য। 

ওই বছরই অর্থবছরের বাজেটে গ্রামীণ দারিদ্র্য মোচনের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকে ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। ড. মুহাম্দ ইউনূসের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ সখ্যতা এবং সম্পর্ক সে সময়ে ছিল সর্বজনবিদিত। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সে সময় ‘একটি বাড়ি একটি খামার’- প্রকল্পের ভূয়শী প্রশংসা করেছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন, এই ধরনের প্রকল্প গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করবে। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভোল পাল্টে ফেলেন। তিনি তখন বিএনপির অনুগত এবং বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে যান, বিএনপির বিভিন্ন কর্মকান্ডের ব্যাপারে তার নিরবতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিরবতা পুরো জাতিকে হতবাক করে দিয়েছিল। 

বাংলাদেশের কোন রাজনীতিক ইস্যুতেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাওয়া যায় না। তিনি শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সরব থাকেন। এই ড. মুহাম্মদ ইউনুস ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। একজন অর্থনীতিবিদ হয়ে তিনি কীভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলেন?- এই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে এই নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরপরই বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় হতে শুরু করেন। নিজে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন, যদিও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া থেকে তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেন এবং সরাসরি স্বীকার করেন, এটি তার কাজ নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ সময় তার প্রকাশ্য বিরোধ শুরু হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইয়াজউদ্দিনের সরকারকে সমর্থন করেন, যে কোনো মূল্যে নির্বাচন হতে হবে বলে ২২শে জানুয়ারি এক তরফা নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং তিনি সুস্পষ্টভাবেই আওয়ামী লীগ বিরোধী একটি অবস্থানে চলে যান।

২২ শে জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যখন রাজনীতিতে টানটান উত্তেজনা, সেই মুহূর্তে ১/১১’র সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। তথ্য-প্রমাণে এখন নিশ্চিত হওয়া গেছে, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি যে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল, তার পিছনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাত ছিল। আর এখান থেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে ড. মুহম্মদ ইউনূসের প্রকাশ্য দ্বৈরথ শুরু হয়। এই দ্বৈরথ গণতন্ত্রের সঙ্গে অনির্বাচিত সরকারের বিরোধ। এই বিরোধ হলো এই যে, বাংলাদেশ দেশের জনগণের কথায় চলবে, নাকি কিছু সুশীলের কথায় চলবে?- এই হলো তার বিরোধ।  

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিভিন্ন অনিয়ম, যেগুলো সব সরকার মুখ বুঝে সহ্য করেছে, সে ব্যাপারে তদন্ত শুরু করে। আর এই সমস্ত তদন্তের প্রেক্ষাপটেই দেখা যায় যে, ড. মুহাম্মদ ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংকের একজন বেতনভুক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তিনি একজন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদায় চাকরি করেন। অন্যান্য সরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের যেভাবে চাকরি থেকে অবসর নিতে হয়, ইউনূসের ক্ষেত্রেও সেটি প্রযোজ্য, কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূস দা করছেন না। তখন সরকার তা যথাযথভাবে আইন প্রয়োগ করে। এর বিরুদ্ধে ড. ইউনূস আদালতে যান, সেখানে পরাজিত হন। হিলারি ক্লিনটন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য ফোন করেন। কিন্তু শেখ হাসিনা সেই ফোনে নতজানু হননি। এভাবেই ইউনূসের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধ শুরু হয় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার। প্রশ্নটা হলো- একজন ব্যক্তি কি আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারেন কিনা? আইন তার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হবে কিনা?

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তিনি আন্তর্জাতিক প্রভাববলয় ব্যবহার করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক আছে- এই পরিচয়টি ব্যবহার করে তিনি যা ইচ্ছা তাই করেছেন। কোথাও তিনি আইনের তোয়াক্কা করেননি। বিভিন্ন দেশ থেকে সম্পদ এনেছেন, সেই সম্পদ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নয়ছয় করেছেন। তিনি তার আয়কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য সমস্ত উপার্জন নিজের নামের ট্রাস্টে দান করেছেন। সেই ট্রাস্টের প্রধান কাজ হিসেবে দেখানো হচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার পরিবারের সদস্যদে কে ভরণপোষণ করা, তাদের আরাম-আয়েশ নিশ্চিত করা। এভাবেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস নানারকম স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন অবাধে। 

যে কোনো একজন সাধারণ নাগরিক যদি এটি করতো, তাহলে তার জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করতো। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য সাত খুন মাফ। শেখ হাসিনা টি করেছেন, দা হচ্ছে- প্রত্যেকটি নাগরিকের জন্য যে আইন সমান, তা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন। আর এই নিশ্চিত করতে গিয়েই অনেক সুশীল সমাজের কাছে তিনি সমালোচিত হচ্ছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আক্রোশপূর্ণ আচরণ করা হচ্ছে। এই নিয়ে এখন বারাক ওবামা পর্যন্ত বিবৃতি দিচ্ছেন। তবে শেখ হাসিনার লড়াইটা খুব স্বাভাবিক এবং সাদামাটা। তিনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান, আইনের দৃষ্টিতে ড. মুহাম্মদ ইউনুস কেন, কেউই যে আলাদা নয়, সকলেই যে সমান- সেটি প্রমাণ করার লড়াই-ই হলো ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে লড়াই। আর সেখানে আইনের শাসন বিজয়ী হলেই এই লড়াই শেষ হবে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭