প্রকাশ: 30/08/2023
২৮
আগস্ট ১৯৭৫ পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হেনরি বাইরোড অভ্যুত্থান-পরবর্তী
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের একটি চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন। বাইরোড তাঁর এই দীর্ঘ তারবার্তার
সারসংক্ষেপে উল্লেখ করেন :
বাংলাদেশের নতুন সরকার যদিও ইসলামি প্রজাতন্ত্র
হিসেবে দেশটির নাম পরিবর্তন করেনি, কিন্তু তা সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকার মনে করে যে
১৫ আগস্টের অভ্যুত্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ এবং মোটামুটিভাবে দুই দেশের সম্পর্কের
ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। পাকিস্তানিরা মনে করত যে, মুজিবের শাসনামলে বাংলাদেশ
ছিল ভারতের তাঁবেদার। আর সে কারণেই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ব্যাপারে
মুজিবের কম আগ্রহ ছিল। বাংলাদেশে অভ্যুত্থান সংঘটনের ফলে পাকিস্তান সরকার মনে করছে,
এখন দুরকম সুবিধাই হলো। দুই দেশের সম্পর্ক এখন আরও উন্নত হওয়ার সম্ভাবতা সৃষ্টি হয়েছে।
আর তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ যা, তা হলো, এখন এ ধরনের সম্পর্ক থেকে ‘প্রকৃত রাজনৈতিক
ও মনস্তাত্ত্বিক ফায়দা’ মিলবে। ইসলামাবাদ মনে করছে, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত
হলে তা তার নিজের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি আকর্ষণীয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি পাকিস্তানের
জনগণের মধ্যেও ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তান মনে করে, মুজিবকে উৎখাতের ঘটনাটি
তাৎপর্যপূর্ণ। এখন বাংলাদেশের সঙ্গে 'ভ্রাতৃসুলভ' সম্পর্ক গড়ে তোলার পথ সুগম হবে।।
পাকিস্তান
সরকার বাংলাদেশে তার জন্য নতুন সুবিধা পেতে বাস্তবসম্মত অবস্থান গ্রহণ করেছে বলেই মনে
হচ্ছে। তারা একই সঙ্গে ঢাকায় ভারতের অব্যাহত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং তার নিজের সীমাবদ্ধতার
বিষয়েও সজাগ রয়েছে। সে কারণে পাকিস্তান চাইছে তার অন্য বন্ধু দেশগুলো যাতে বাংলাদেশের
নতুন সরকারের নীতি প্রণয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখে। যার ফল হিসেবে ঢাকায় ভারত ও সোভিয়েত
ইউনিয়নের প্রভাব ক্ষুণ্ণ হবে। আর এর চূড়ান্ত পরিণাম দাঁড়াবে এই যে উপমহাদেশের ক্ষমতার
ভারসাম্যের ক্ষেত্রে তার নিজের অনুকূলে একটি সীমিত পরিবর্তন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
উপরন্ত পাকিস্তান সরকার সন্দেহাতীতভাবে এই সুবিধার দিকেও খেয়াল রেখেছে যে, বাংলাদেশে
যদি একটি কম ভারত-ঘেঁষা সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়, তাহলে ভারতের পূর্বাঞ্চলে দিল্লির
শাসকদের জন্য একটি অনিশ্চিত অবস্থার সূচনা ঘটানো সম্ভব হবে।
বাইরোড
লিখেছেন :
পাকিস্তানিরা মনে করছে যে তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক
কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নতুন সরকারের উদ্যোগকে তারা স্বাগত
জানাবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিনিধি ও পরিচিত বাঙালিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তারা
বেশ আশ্বস্ত। প্রধানমন্ত্রী ভুট্টো বাংলাদেশের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি ও সমর্থন জানিয়ে
যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, খন্দকার মোশতাক আহমদের কাছ থেকে তার জবাব পেয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট।
তাঁরা আশাবাদী যে রাষ্ট্রদূত নিয়োগে বাংলাদেশ খুব শিগগির উদ্যোগ নেবে এবং তারাও শর্তহীনভাবে
বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত পাঠাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। পাকিস্তান আরও আশাবাদী যে পাকিস্তান-বাংলাদেশ
সম্পর্কের উন্নতির কারণে তারা সিমলা চুক্তির বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত হতে
দেবে না। পাকিস্তান চুক্তি বাস্তবায়নে সংকল্পবদ্ধ থাকবে। তবে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের
এই সম্পর্কের উন্নয়নের ফলে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ওপর তার কতটা কী অনুকূল কিংবা
প্রতিকূল প্রভাব পড়বে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
(সূত্র: মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড।। পৃষ্টা:১১৮-১১৯)
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭