তসলিমা নাসরিন, অনেকেই আছে আপনার পাশে, অনেকেই আপনাকে ভালোও বাসে। এই যে কত ভক্ত অনুরাগী! কাঁটাতারের বেড়াকে ফাঁকি দিয়ে বিশ্বময় ছড়ানো ফেসবুকের বিনাতারের সংযোগে আপনার পাশে দাঁড়িয়েছে। আপনার লেখার প্রশংসা করছে। এই প্রাপ্যটুকুই ক'জনের ভাগ্যে জুটে? আসলে যে জন্য আপনি আফসোস করছেন, সেটা আপনার মনে পড়া অতীত, যেখানে এক সময় বসবাস করেছে আপনার দিন, রাত, সূর্য, চাঁদ আর আকাশ দেখা। যেখানে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে বসে নির্জনে, নিভৃতে কবিতার সাথে কথপোকথন। সেটাই আফসোস, সেটাই ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। আসলে আপনি নিজেকে যে দোষে দোষী মনে করছেন না, সে দোষটাকেই অন্য কেউ দোষ মনে করছে, গুরুতর দোষ। এখানে দুইটি মতের ভিন্নতা, স্বাতন্ত্র।
লেখক বা কবি মাত্রই ভিন্ন, স্বাতন্ত্র চিন্তা-চেতনার অগ্রগামী পথিক। সমাজের কুসংস্কারগুলো ভেঙ্গে-চুরে বেড়িয়ে আসার স্বপ্ন কেবল লেখক বা কবিরাই দেখেন। তারা সমাজের সত্যিকারের অসঙ্গতিগুলো অক্ষর অঙ্কনে প্রস্ফুটিত করার চেষ্টা চালান। লিখতে মন চায় না, কিন্তু সমাজের অসঙ্গতিগুলো চেতনার মস্তিস্কে যন্ত্রনা শুরু করে দেয়। লিখতে হয়।
কবি বা লেখক মাত্রই তাই। আপনিও তার ব্যতিক্রম নন। একজন লেখক যে সমাজে বড় হয় বা বসবাস করে বা কালের বিবর্তনে সংযুক্ত, তার প্রতিটি লেখায় সেই সমাজের চিত্রটিই সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। আপনার লেখাতেও তাই হয়েছে। মানুষকে, সমাজকে, জীবনকে উপলব্ধির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এটাই লেখকের সত্তা, ভিন্নতা। কিন্ত সে সমাজের মানুষেরা এই সত্য লেখার যে দুঃসাহসিকতা, সেটা মেনে নিতে পারেনি। কিংবা সংঘবদ্ধ কিছু মানুষ, কিছু সমাজ ব্যবস্থা এই সত্য লেখার সক্ষমতাকে মুছে দিতে চেয়েছে। যে কারণে আজ আফসোস। কিন্তু আপনি আপনার লেখনিতে যা বলেছেন, সমাজকে, মানুষকে যা জানিয়েছেন- তাই বা জানাতে পারে ক'জনা!