ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির আন্দোলন কেন মুখ থুবড়ে পড়ল


প্রকাশ: 30/08/2023


Thumbnail

এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করে বিএনপির আন্দোলন এখন পেশাজীবীদের দাবি-দাওয়া ভিত্তিক আন্দোলনে রূপ পরিগ্রহ করেছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে এক দফা আন্দোলন। শুধু এক দফা আন্দোলন নয়, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির এক দফা কর্মসূচিও এখন কাগুজে বাঘ হয়ে গেছে। বিএনপি এখন দিবস ভিত্তিক কর্মসূচি করছে। আজ আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে বিএনপি কালো কাপড় মুখে বেঁধে মিছিল করেছে। সেই মিছিলও জনগণের মধ্যে সাড়া ফেলতে পারেনি। 

আগামী নির্বাচনের বাকি আছে তিন মাসেরও কম। এই সময়ের মধ্যে বিএনপি যে বড় ধরনের গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে এমন বিশ্বাস বিএনপি নেতারাও করেন না। প্রশ্ন হল যে বিএনপির আন্দোলন কেন মুখ থুবড়ে পড়ল। আন্দোলনের শুরুতে বিভিন্ন সময়ে এই আন্দোলন বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আশা জাগিয়ে ছিল। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এক ধরনের আলোপ-আলোচনা শুরু হয়েছিল বিএনপিকে নিয়ে। বিএনপি আবার শক্তিশালী হচ্ছে এমন বক্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মুখে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সেই বিএনপির আন্দোলন এখন মুখ থুবড়ে পড়ল। কেন বিএনপির আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়ল? এর বিশ্লেষণ করতে গিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মূলত পাঁচটি কারণে বিএনপির আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়েছে;

১. নেতৃত্বের সংকট: বিএনপির আন্দোলনের প্রধান সমস্যা হলো আন্দোলনে কোনো নেতা নেই। বেগম জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন। কিন্তু আর ২০১৮ সালে কারান্তরীণ হবার পর বিএনপিকে নেতৃত্ব তিনি আর দিচ্ছেন না। এখন তিনি অসুস্থ বিভিন্ন রোগশয্যায়। কাজেই তার পক্ষে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। লন্ডন থেকে তারেক জিয়া বিএনপিকে পরিচালনা করছেন। কিন্তু তারেক জিয়ার নৈতিক মানদণ্ড, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতার প্রচন্ড ঘাটতি রয়েছে। দেশের অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে না যে তারেক জিয়া একজন সৎ এবং যোগ্য নেতা। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দল পরিচালনা করছিলেন। তিনি একজন ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু জাতীয় নেতা হওয়ার জন্য যে গুণাবলী দরকার সেই গুণাবলীর তীব্র অনুপস্থিতি রয়েছে মির্জা ফখরুলের মধ্যে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির অর্ধেকের বেশি সদস্য অসুস্থ, শয্যাশায়ী অথবা বিদেশে অবস্থান করছেন। এর ফলে নেতৃত্ব শূন্যতা বিএনপির জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে আন্দোলনকে জমাতে পারছে না বিএনপি। 

২. জনসম্পৃক্ততার অভাব: বিএনপির আন্দোলনের আরেকটি বড় ইসুব সমস্যা হল বিএনপির আন্দোলন কখনই জনসম্পৃক্ত হয়নি। জনগণ এই আন্দোলনে কখনো অংশগ্রহণ করেনি। বরং দূর থেকে বিএনপির তামাশা দেখেছে। আর আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা হওয়ার একটি প্রধান কারণ হল জনগণের প্রতিদিনের যে দাবি-দাওয়া সেগুলোর সঙ্গে বিএনপি নিজেদের সম্পৃক্ত হতে পারেনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বা অন্যান্য নিত্য দিনের সমস্যাগুলো নিয়ে বিএনপির আগ্রহ ছিল অনেক কম। ফলে এই সেই আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা ঘোষণা করা হয়নি। 

৩. বিএনপির আন্দোলনের ওপর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ: বিএনপি নিজ ইচ্ছায় বা নিজ পরিকল্পনা আন্দোলন করেনি। বরং তাদের এই আন্দোলনের ওপর পুরোপুরি ভাবে পশ্চিমা বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ ছিল এবং তাদের ইঙ্গিতে বা তাদের ওপর নির্ভর করে বিএনপি আন্দোলন করেছে এমনটি অনেকে মনে করেন। যার কারণে বিদেশি প্রেসক্রিপশনে আন্দোলন মাঠ গরম করতে পারেনি। 

৪. আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থান: বিএনপির আন্দোলনের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ মাঠে শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছিল। পাল্টা কর্মসূচি প্রদান করেছিল। ফলে পাল্টাপাল্টি শক্তি পরীক্ষায় আওয়ামী লীগও যে পিছিয়ে নেই তারা সবসময় প্রমাণ করেছে। এর ফলে সব সময়ে রাজপথে একটি ভারসাম্য হয়েছে। একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি কখনোই। 

৫. বিএনপির কৌশলের ঘাটতি: বিএনপির আন্দোলনের কৌশলে ঘাটতি ছিল। তারা আন্দোলনের মাধ্যমে কি অর্জন করতে চায় তা নিয়ে সব সময় এক ধরনের অস্পষ্টতা এবং অস্বচ্ছতা ছিল। বিএনপি একদিকে যেমন বলছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের কথা আবার এই সরকারের কাছেই খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছে। এ ধরনের স্ববিরোধিতা ভরা বিএনপির বিভিন্ন দাবি এবং কর্মসূচি। আর এ কারণেই এ আন্দোলনের ব্যাপারে মানুষের এক ধরনের অবিশ্বাস এবং অনাস্থা তৈরি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে বিএনপির আন্দোলনের যে রূপকল্প  সেই রূপকল্পটি ছিল ক্রটিপূর্ণ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, ভুল নকশায় বিএনপি যে আন্দোলনের রাস্তা তৈরি করেছে সেই রাস্তাটাই আসলে ভুল।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭