ইনসাইড থট

আমেরিকা ড. ইউনূসকে ১২ নম্বর খেলোয়ারের মতো ব্যবহার করছে


প্রকাশ: 31/08/2023


Thumbnail

ক্রিকেটে একটি কথা আছে যে, ১১ নম্বর খেলোয়ারের পরে, অনেক সময় ইনজুরি হলে, যারা সাইডে ব্যাঞ্চে বসে থাকেন, তাদের নামানো হয়। আমার কাছে মনে হচ্ছে, বিশেষ করে আমেরিকার ডেমোক্রেটিক পার্টি, তারা ড. ইউনূসকে ব্যবহার করেন ওইরকম ব্যাঞ্চে বসে থাকা সাবস্টিটিউট খেলোয়ার হিসেবে। যখন প্রয়োজন, তখন তাকে নামিয়ে দেওয়া হলো। ক্রিকেটে একটি কথা বহুদিন প্রচলিত, ১২ নম্বর খেলোয়ারকে মাঠে নামিয়ে কোনোদিন ক্রিকেটে জেতা যায় না। তার আগেই যা হবার, তা হয়ে যায়। বাংলাদেশের আগত যে সাধারণ নির্বাচন, সেটা মনে হচ্ছে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে। এই নির্বাচনে আমেরিকা আসলে তাদের যে উদ্দেশ্য ছিল, তার একটিও সফল হবে না। কারণ এটা সরাসরি ১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধের সাথে এবারকার সাধারণ নির্বাচনকে তুলনা করতে হবে। আসলে ছোট লেখায়তো আর এতো বিস্তারিত বলার সুযোগ নেই, প্রয়োজনও নেই। মোটামুটি তখন যারা আমাদেরকে সমর্থন করেনি, তারা কেউ কেউ ঘাপটি মেরে থেকে পাকিস্তানের প্যারোলে থেকেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে, আবার কেউবা সরাসরি আমাদের বিরোধীতা করেছে। যেমন আওয়ামী লীগের ভেতরে বা তার অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা জামায়াতের কর্মীরা, সাঈদীর মৃত্যুর পরে যেভাবে তাদের প্রকাশ হয়েছে, এখানে একইরকম ঘটনা ঘটছে।

জিওপলিটিক্যাল পার্থক্যের কারণে এখন চীনার আলাদা ক্ষমতার বলয় হয়েছে। যদি একাত্তরের মতো সময় থাকতো, তাহলে চীনারা আমেরিকার সাথে সেরকম বন্ধুত্ব থাকলে, তারাও তাদের সাথেই যেত। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তখন প্রমাণিত বন্ধু ছিল ভারত। আর হচ্ছে রাশিয়া, এখন তারা যতই দুর্বল হয়ে যাক না কেন, এখনও তারা আমাদের সাথেই আছে, আর ভারতও আছে। আমার মতে, চীন হচ্ছে আমেরিকার বিরোধীতার কারণে তারা আমাদের সাথে আছে। এখানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ভেতরে অধিকাংশ দেশ এখন বুঝে গেছে, তারা ওই পর্যন্ত যেতে রাজি যে, এমন একটা নির্বাচন হোক, এক কথায় বলা চলে যে- নির্বাচনে যার ভোট যাকে ইচ্ছা তাকে দিবে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, সবাই ভোট দিতে পারবে - এইভাবেই একটি নির্বাচন চায় তারা। আর যেটা আমেরিকা যোগ করতে চায় বিএনপির ভাষা ধার করে নিয়ে, সেটা হলো- অংশগ্রহণমূলক। হ্যা, অংশগ্রহণমূলকতো হবেই। এখন আপনার আমেরিকায় ৩০% ভোট অনেক সময় পড়ে না, সেখানে অংশগ্রহণমূলক কিভাবে হয়? ৭০% লোক তাহলে কি করে? এখানেও ওরকমভাবে যদি কেউ ভোট দিতে না যায়, যাবে না। 

এমন কি আমি বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগের ভেতরে যারা জামায়াত ঢুকে গেছে, তারা অনুপস্থিত থাকতে পারে। তাতে কি হলো? এটা অংশগ্রহণমূলক হলো? নির্বাচনে সকলের স্বাধীনতা থাকবে। বরং আওয়ামী লীগ যদি মাঠে এখন গুণ্ডামি করা শুরু করতো, মারপিট করা শুরু করতো যে, ‘না বেটা তোর নির্বাচনে যেতেই হবে। ঘরে বসে থাকতে পারবি না।’- তাহলে না হয় একটা ব্যাপার হতো। এখন আসলে বিএনপি আইসিইউ’তে আছে, তারা মেশিন সাপোর্টে। এই মেশিন সাপোর্টের মেশিনের যত অক্সিজেন থেকে শুরু করে যে ওষুধপত্র প্রয়োজন, সব এখন দেওয়া শুরু করেছে আমেরিকা। আর আমেরিকা এখন কিছু না পেয়ে আবার ড. ইউনূসকে মাঠে নামিয়েছে। এখন দেখা গেল যে, বারাক ওবামা একটি চিঠি লিখেছেন ১৭ তারিখে, সেটা স্বাক্ষর করা অনেক দিন পরে। ওই যে ১২ নম্বর খেলোয়ারের কথা বললাম, ওইটা এখন প্রকাশ্যে এসেছে। ঠিক তেমনিভাবে বিএনপির কতগুলি পোষা বুদ্ধিজীবী আছে, এদের বিবৃতি একজন সাক্ষর করলেই হয়, তাতে কিছু আসে যায় না, একজনের স্বাক্ষর দেখলেই বোঝা যায়, এরা কারা কারা আছে। এদের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র- এটা সবাই জানে। কারণ এরা খুবই ধার্মিক এবং যারা তাদের টাকা-পয়সা দেয়, এরা তাদের কাছে অত্যন্ত বিশ্বস্ত। এদিক থেকে তাদেরকে আমি সম্মান করি। এরা বিএনপির কাছ থেকে টাকা পায়, বিদেশ থেকে টাকা পায় এবং তারা যেভাবে বলে দাড়ি, কমাসহ সেটাই করে। এরা হলো যে, এরা সত্যিকার অর্থেই বুদ্ধিজীবী। মানে বুদ্ধি বিক্রি করে তাদের জীবিকা অর্জন করে। এক্সট্রা টাকা হিসেবে এরা বুদ্ধি বন্ধক রেখেও চলে অনেক সময়, অনেক সময় বুদ্ধি বিক্রি করে দেয়। 

আসলে এইসব খেলোয়ার দিয়ে, যারা বুদ্ধি বিক্রি করা কয়েকজন বিবৃতিজীবী, তাদেরকে অনেকেই বলে বিবৃতিজীবী, সেটাও যেরকম ঠিক, আর আমি বলি তারা বুদ্ধিকে বিক্রি করে বা বন্ধক রেখে চলে, সেটাও ঠিক। যেখানে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তার হৃদয়ে ধারন করে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে তার হৃদয়ে ধারন করে দেশ চালান, যে দেশে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে আমরা এখনও বেঁচে আছি। সেখানে নেত্রী দেশ চালাতে গিয়ে যদি কখনও কারোর ধারা আঘাত পেতে যান, অবশ্যই আমরা বুক পেতে দিব। অতীতেও যেমন তার প্রমাণ রেখেছি, এখনও রাখি। আমরা কোনো অর্থের কাছে বা কোনো কিছুর কাছে দাসত্ব করি না। এই কারণের জন্য যতই তারা চেষ্টা করুক না কেন, নেত্রীকে তারা কিছুই করতে পারবে না। কারণ তিনি দার্শনিক, তার দেশ পরিচালনায় দর্শন আছে। যে গণতন্ত্র তিনি এদেশে প্রতিষ্ঠা করেছেন, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, তিনি কি এই গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে দিবেন? সেই ভোটের অধিকারকে তিনি শেষ করতে দিবেন? -এরকম কোনো প্রশ্ন ওঠে! অথবা যে ব্রিজটা তিনি গড়লেন, এই ব্রিওজটা তিনি ডিনামাইড দিয়ে উড়িয়ে দিবেন! 

আর যাদের কোনো অবদান নেই, যারা কার্ফিউ দিয়ে দেশ চালিয়েছেন, যারা এদেশে খাটি সেনাবাহিনীর পোশাক পরে এদেশের ক্ষমতা দখল করেছে, যারা এর আগে ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, তারা এদেশে গণতন্ত্র দিবে?- আর এখন তারা তাদের সাথী পেয়েছে, সাথীরা কারা?- ওই একাত্তরের ষড়যন্ত্রকারীরা। একটা কথা মনে রাখা খুবই প্রয়োজন, আমেরিকার জনগণ আর সরকার কিন্তু এক না, এটা আমি বিশ্বাস করি। আমেরিকা এবং পশ্চিমা বিশ্বের অধিকাংশ জনগণ এই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার পক্ষে এবং তারা চান তিনি থাকলেই এদেশে, দেশটাকে আবারও ষড়যন্ত্রকারীরা দখল করতে পারবে না, আবার এখানে ত্রাসের রাজত্ব হবে না, ধর্মান্ধরা আবার ক্ষমতা দখল করতে পারবে না। সে সকল মানসিকতার জনগণ, সমস্ত বিশ্বের জনগণই দার্শনিক শেখ হাসিনার পক্ষে। কিছু যারা দেশ পরিচালনার কাজে আছে, সেটা সব দেশেই থাকতে পারে, সেখানে তারা কিন্তু শেখ হাসিনাকে দেখতে পারে না, তাদের নিজ স্বার্থের জন্য। আমেরিকা ভেবেছিল, বঙ্গপোসাগরের উপর তারা কিছু প্রাধান্য বিস্তার করবে, করে অন্য দেশকে তাদের অ্যাটাক করতে সুবিধা হবে। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ তাদের এই সুবিধা দিয়েছিল, এটাতো আমরা ভুলে যাইনি। যখন ইসরাইলের বিমান আটক করেছিল উগান্ডা। তখন তাদের যারা সাহায্য করেছিল, তারা কারা? এসব ইতিহাস আমাদের ভালো করে বুঝতে হবে, জানতে হবে। সুতরাং এখানে সাধারণ জনগণের কোনো বিষয় থাকে না। 

কিন্তু এখন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিও পরিবর্তন হচ্ছে। তারা বুঝে ফেলেছে, আসলে তাদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে তারাও দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার পক্ষে। সুতরাং এ অবস্থায় যে যত চেচামেচিই করুক না কেন, যে রকম কুকুরে পায়ের উপরে কখনও কামড় দেয় না। খবরে কোনো সময় দেখবেন না যে, কুকুরে মুখে কামড় দিয়েছে। ওই ১২ নম্বর খেলোয়াড় দিয়েও কোনো লাভ নেই, আর ভাড়াটিয়া ওই বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে বিবৃতি দিয়েও কোনো লাভ নেই।

পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, দার্শনিক শেখ হাসিনা সঠিক সময়ে নির্বাচন করবেন, সঠিকভাবেই নির্বাচন করবেন এবং এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক নির্বাচন হবে। এখানে আওয়ামী লীগের যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন, তাদের হুঁশিয়ারি এবং সাবধান বাণী উচ্চারণ করে বলতে চাই, নির্বাচন কিন্তু এবার অনেক কঠিন হবে। বিএনপি নামে আসবে, না বেনামে আসবে- সেটা আলাদা ব্যাপার। আপনারা ঘুমিয়ে থাকবেন না। তাহলে দার্শনিক শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। যদি মনে করেন শেখ হাসিনা এসে সব করে দিবেন, তাহলে মারাত্মক ভুল হবে। তার হাত শক্ত করার জন্য আপনারা নিজেও তার আদর্শকে শক্তভাবে ধরেন এবং দলকে সেভাবেই সুসংগঠিত করেন। এখানে যত বাইরের অগণতান্ত্রিক শক্তি আওয়ামী লীগে ভর করে আছে, তাদেরকে দল থেকে বের করে দিন, তাহলে আমেরিকা কেন কেউ আমাদের কিছু করতে পারবে না।      



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭